আমাদের দেশে অধিকাংশ খতমে কোরআন তারাবির মুসল্লি নিজে যে মসজিদে তারাবি পড়েন সে মসজিদে কতটুকু সময় ব্যয় হয় আর পার্শ্ববর্তী মসজিদে কতটুকু সময় ব্যয় হয় তার তুলনা করে থাকেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাফেজদের আরেকটু দ্রুত পড়ার অনুরোধ করে থাকেন।
অনুরোধ রেখে অনেক হাফেজ দ্রুত পড়েন আর অনেকে তেলাওয়াতের ন্যূনতম হক বজায় রেখে যেভাবে পড়া দরকার সেভাবে পড়েন। অত্যন্ত আফসোসের বিষয় যে, অধিকাংশ খতমে কোরআন তারাবিতে তেলাওয়াত বোঝাই সম্ভব হয় না দুই চারটি (মদ্দের হরফ/শেষে টান যুক্ত) শব্দ ছাড়া, সূরার মাঝখানের এবং শেষের শব্দ ছাড়া। মুসল্লি আর মসজিদ কমিটির অনুরোধ রক্ষা করে দ্রুত কোরআন তেলাওয়াতের ফলে তেলাওয়াতের হক আদায় হয় কি-না তা তারাবির ইমাম সম্মানিত ও শ্রদ্ধেয় হাফেজরাই ভালো বলতে পারবেন।
আমরা জানি, রমজান মাস হলো- কোরআন নাজিলের মাস। কোরআন নাজিলের মাসে নামাজে কোরআন তেলাওয়াত হচ্ছে, যিনি কোরআন নাজিল করেছেন তিনি কোরআনের মাধ্যমেই জানিয়ে দিয়েছেন- কোরআন নাজিলকারী স্বয়ং আল্লাহ তেলাওয়াত শোনেন ও লক্ষ্য করেন। এক্ষেত্রে তেলাওয়াতের হক আদায় না করে দ্রুত পড়া ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কতটুকু সঠিক ও যুক্তিযুক্ত, তা হাফেজদেরর চিন্তা-ভাবনা করা কি প্রয়োজন নয়?
অনুরোধকারী মুসল্লি এবং মসজিদ কমিটির কর্তাব্যক্তিরা আরেকটু দ্রুত পড়ার ব্যাপারে হাফেজদের বলার কারণে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অপরাধী হচ্ছেন কি-না, আসামি হচ্ছেন কি না- বিশেষজ্ঞ আলেম থেকে তাও জানা জরুরি।
দেখুন, সূরা মুজ্জাম্মিলের ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে- ‘ধীরস্থিরভাবে স্পষ্টরূপে কোরআন তেলাওয়াত কর। ’ এ আয়াত থেকে আমাদের অবশ্য মনে রাখতে হবে যে, নামাজে (তারাবির নামাজেও) শুধু কোরআন পাঠ-তেলাওয়াতই যথেষ্ট আর কাম্য নয়, বরং তারতিলের সঙ্গে সঠিক পাঠ, যথাযথভাবে তেলাওয়াতও কাম্য এবং জরুরি। তারতিলের সঙ্গে সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত ও পাঠ করার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহর।
লক্ষ্য করার মতো বিষয় হলো, মুসল্লি বা কমিটির তাগাদা, অনুরোধ বা অনুযোগের কারণে তারাবি নামাজ দ্রুত পড়লে সময়ের পার্থক্য সাধারণভাবে ১০ মিনিটের বেশি হয় না। রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাসে, সওয়াব অর্জনের ভরা মৌসুমে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, দুনিয়ার শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য এবং পরকালীন নাজাতের জন্য খতমে কোরআন তারাবিতে নামাজ দ্রুত পড়তে যে সময় ব্যয় হয়, তার সঙ্গে সর্বোচ্চ আরও ১০টি মিনিট যোগ করার জন্য হাফেজদের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি।
হাফেজদের সচেতনতা মুসল্লিদের আবদার (?) দূরীকরণে সহায়ক হবে নিঃসন্দেহে। অনুরোধ এলেও নামাজ ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী যেভাবে আদায় হয় সেভাবেই পড়াতে হবে। সেই সঙ্গে বলে দিতে ধীর-স্থীরভাবে কোরআন তেলাওয়াতের তাৎপর্যের কথা।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৬
এমএ/