ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

প্রসঙ্গ মধ্যপ্রাচ্যঃ মৃত্যু ক্ষুধা ও ইফতার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৬
প্রসঙ্গ মধ্যপ্রাচ্যঃ মৃত্যু ক্ষুধা ও ইফতার

মুসলিম বিশ্বের ঘরে ঘরে হাজির হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। বর্তমান বিশ্বে মুসলিম জনগোষ্ঠী রয়েছে ১৫০ কোটিরও বেশি।

তাদের সবার জন্যই রমজান আবির্ভূত হয় সৃষ্টিকর্তার এক অপার মহিমারূপে।

সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত সব ধরনের খাদ্য, পানাহার ও কামাচার থেকে বিরত থাকাই ইসলামে সিয়াম নামে পরিচিত। এর লক্ষ্য হৃদয়-মন-আত্মার মুক্তি। জাগতিক সব অকল্যাণ, অশুভ শক্তি ও ষড়রিপু থেকে দেহ মন ও আত্মার পরিত্রাণের মধ্যেই আমাদের কল্যাণ।
 
ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। পবিত্র কোরানে মহাল আল্লাহর বাণী, ‘নি:সন্দেহে ঈমানদাররা পরস্পর ভাই ভাই’।   নজীবী বলেছেন, ‘এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই’।

কিন্তু আজকের মুসলিম বিশ্বে ভ্রাতৃত্ববোধের অভাব প্রকট। মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত আজ যুদ্ধকবলিত। যুদ্ধ, ক্ষুধা, মৃত্যু যেনো তাড়া করে ফিরছে পুরো মুসলিম বিশ্বকে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য যেনো এক মৃত্যুপুরি। ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, নাইজেরিয়া, ফিলিস্তিন, সোমালিয়া, ইয়েমেনে  আজ একমুঠো খাবারের জন্য হাহাকার। নারী, পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে নিরন্তর ক্ষুধা ও দারিদ্রের কাছে পরাজিত। জাতিগত, গোষ্ঠীগত আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিত দাঙ্গায় জ্বলছে পুরো মধ্যপ্রাচ্য। রক্ত ঝরছে ঘরে ঘরে। উপত্যাকায় জ্বলছে আগুন। সে আগুন ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে ইউরোপ, এশিয়া এমনকি পুরো বিশ্বে।

যুদ্ধ কবলিত এসব জনপদে নাগরিকরা জীবন বাঁচাতে ঘাস সিদ্ধ, ডাস্টবিনের খাবার কুড়িয়েও খাচ্ছে। আন্তর্জাতিক কিছু গণমাধ্যমে ফুটে উঠছে নারী ও শিশুদের এসব করুণ কাহিনী।

একদিকে খাদ্য ও পানাহার সংকটে ভুগছে মুসলিম জনগোষ্ঠী আর অন্যদিকে কাতার-কুয়েতের মতো রাজতন্ত্রে চলছে খাদ্যের অপচয়। খাদ্য ও ভোগ বিলাসে ভাসছে তাদের প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্টগুলো। দেশগুলোতে মহাসমারোহে চলছে খাদ্যের অপচয়। উচ্ছিষ্ট খাবারে ভাসছে কিছু দেশ। ওদিকে সামান্য একটু ইফতারও জুটছেনা ইরাক-সিরিয়ার মুসলমানদের।

আইএস ও সরকারের আক্রমন-পাল্টা আক্রমনের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ইরাক ও সিরিয়ার সাধারণ জনগোষ্ঠী। সেখানে রোজা তাদের জন্য কোনো উৎসবের বার্তা নিয়ে আসেনি। তাদের কাছে সেহরি ও ইফতার বলে কিছু নেই। চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে সিরিয়ার মুসলিমরা।

জাতিসংঘ, ইউনিসেফ, সেভ দ্য চিলড্রেন বা অন্যান্য সংস্থাগুলো নামকাওয়াস্তে যা দিচ্ছে তাই দিনের পর দিন সংগ্রহে রেখে কোনো রকম দিনাতিপাত করে। বাজার থেকে খাবার কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ্যও তাদের নেই। আকাশছোঁয়া দাম।  

সিরিয়ার একটি শহরের নাম দারায়া। এ শহরে বাস করে প্রায় আট হাজার মানুষ। ২০১২ সাল থেকে অবরুদ্ধ রয়েছে এ শহর। নেই কোনো খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রীর সংস্থান। এ মাসের প্রথম দিনে তাদের জন্য প্রথবারের মতো জাতিসংঘ ত্রাণ বিতরণ করলো।  

অন্যদিকে আইএসএর অন্যতম ঘাটি ফালুজা একটি রক্তাক্ত জনপদ। এটি ইরাকের সর্ববৃহৎ আনবার প্রদেশের একটি শহর। এখানে অবরুদ্ধ আছে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। একদিকে ইরাকি সেনাবাহিনী আরেকদিকে আইএস-এর আক্রমনে নাস্তানাবুদ এখানকার মুসলিমরা। ইয়েমেন ও লিবিয়াতেও বিরাজ করছে একই চিত্র ।

সরকার আইএস দমনে যতো অর্থ খরচ করছে তার সিকিভাগও খরচ করছেনা মানুষের জীবন রক্ষার্থে। শরণার্থী জীবনে বাধ্য হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। প্রিয় দেশ, ভিটেমাটি, প্রিয়জন ছেড়ে অচেনা অজানা প্রান্তরে পাড়ি জমাচ্ছে অসংখ্য নর-নারী। নদীতে বা সাগরে ডুবে মারা যাচ্ছে শত শত মানুষ। উদ্ধার ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে অগনণিত ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত ও ক্ষুধার্ত মানুষ। প্রচণ্ড দাবদাহ, বৈরি আবহাওয়া ও প্রতিকুল অবস্থার মধ্য দিয়ে কাটছে তাদের জীবন। গত সপ্তাহেও প্রচণ্ড গরমে পানির অভাবে মারা গেছে আশ্রয়কেন্দ্রের অনেকে।

এমতাবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের অপরাপর রাষ্টগুলোকে ভ্রাতৃত্ববোধের আদর্শে এগিয়ে আসতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সমস্ত মুসলিম সম্প্রদায়কে, এগিয়ে আসতে বিশ্বের সকল মানুষকে। মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় সে মানুষ। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে। মনুষ্যত্ববোধই মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি। আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেন, ‘ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, মুমিন নয়, মুমিন নয়, যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে অন্যরা নিরাপদ নয়’। কিন্তু আজকে মানুষের হাতেই মানুষ সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীন। মুসলমানদের হাতেই প্রাণ যাচ্ছে মুসলমানদের। পেছনে কাজ করছে নানামুখি ষড়যন্ত্র। পরাশক্তির মদদে এক মুসলমান আরেক মুসলমানের গলায় ছুরি চালাচ্ছে।  
তাই সময় এসেছে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের পথ ছেড়ে ইসলামের আলোতে পথ চলার। ক্ষমতা আর কর্তৃত্বের দ্বন্দ্বে বিভক্ত আজ মুসলিম উম্মাহ্। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম শান্তির কথা বলে। মহান আল্লাহ্ সূরা হুজুরাতে বলেন, ‘মুমিনতো একে অপরের ভাই’। প্রশ্ন জাগে আমরা কি মুমিন-মুসলমান?

আল্লাহর রাসুল (সা:) বলেন, ‘তুমি মুমিনদেরকে দেখবে, নিজেদের মাঝে প্রীতি ও করুণায় তারা যেন এক দেহ। দেহের এক অঙ্গে ব্যথা হলে সকল অঙ্গ (যেন) একে অপরকে ডেকে জ্বর ও রাত্রি জাগরণে লিপ্ত হয়ে পড়ে’ (সহীহ বুখারি ও সহীহ মুসলিম)’। সহীহ মুসলিমের অন্য এক হাদিসে আছে, ‘মুসলিমগণ সকলে মিলে যেনে একটি মানুষ-যার চোখে ব্যথা হলে গোটা দেহ অস্থির হয়, মাথায় ব্যথা হলে গোটা দেহ অস্থির হয়’। কিন্তু সে অস্থিরতা আমাদের কোথায়? তাইতো দেশে-দেশে আজ সংঘাত, রক্তপাত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য। শুধু মুসলমান নয়। নির্যাতি-নিপীড়িত পুরো মানবতা। রমজানের শিক্ষায় ভ্রাতৃত্ববোধের আলোয় জেগে উঠুক মানবতা।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৩ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।