ইরানের ‘গোলাপি মসজিদ’ হিসেবে বিখ্যাত ‘নাসির আল মুলক’ বাইরে থেকে দেখতে ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলীর অন্যান্য উপাসনালয়ের মতোই। কিন্তু সিরাজ নগরের এই মসজিদের অভ্যন্তরে যেন পরতে পরতে লুকিয়ে আছে বর্ণালির সব রঙের জৌলুস।
মসজিদটি ঘুরে দেখতে গিয়ে বিস্ময়াভূত হয়ে পড়েন পর্যটকেরা। অভিজাত কারুকার্য, রঙিন কাচের আলো ঝলমল নকশার বিচিত্র রূপ আর বর্ণচ্ছটা ক্যামেরাবন্দি করতে গিয়ে অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন পেশাদার আলোকচিত্রী থেকে শুরু করে সৌখিন কিংবা সেলফি প্রিয়রা।
পারস্যের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য নকশার সঙ্গে বাইজেন্টাইন রঙিন কাচের অনন্য সাধারণ মিশেলে ‘নাসির আল মুলক’ মসজিদের অভ্যন্তরভাগে চলতে থাকে এক আলো-ছায়াময় রঙের খেলা। এখানে এসে প্রথম দর্শনে বিস্ময়ে দমবন্ধ হয়ে আসার অনুভূতি এড়ানো মুশকিল যেকোনো দর্শনার্থী পর্যটকের পক্ষেই।
জাপানি আলোকচিত্রী কোয়াচ জানিয়েছেন, সকালের আলোয় এই রহস্যময় বর্ণালি রঙ সবচেয়ে মায়াবী, সবচেয়ে জাদুময়।
আলোকচিত্রী কোয়াচ আরও লিখেছেন, ভোরের আলোয় কেবলমাত্র রঙিন কাচের ভেতর দিয়েই আলো আসবে মসজিদের ভেতর। সকালের নরম রোদ ধরার জন্যই বিশেষ স্থাপত্য নকশায় এই রঙিন কাচ বসানো হয়েছে। তাই দুপুরে গেলে আপনি এই জাদু দেখতে পারবেন না। পারস্য-গালিচার নিপাট গহন বুননের মতো মসজিদের ভেতরকার কারুকার্যময় অভ্যন্তরভাগে রঙিন কাচের ভেতর দিয়ে আসা ভোরের আলো যখন ঠিকরে পড়ে মেঝেতে, গালিচায়, যখন নানান কোণ থেকে আসা আলো প্রতিফলিত হতে থাকে একে অন্যের ওপর, যখন আয়নার মতো ঝকঝকে মেঝেতে ওই আলোর প্রতিবিম্ব তৈরি হয়, তখন যেন তা এক অপার্থিব মায়ার জগত রচনা করে সেখানে। আপনি যদি দুনিয়ার সবচেয়ে কম ধার্মিক লোকও হয়ে থাকেন, এই দৃশ্যের মায়ায় এর গাম্ভীর্যে আপনার দুই হাতও হয়তো নিজেরই অজান্তে বুকের কাছে আড়াআড়ি হয়ে আসবে, আপনার অন্তর প্রার্থনায় নত হতে থাকবে। হয়তো এই মসজিদের স্থপতিরা রঙিন কাচের ভেতর দিয়ে আসা ভোর-সকালে আলোর মায়াতেই ‘বিশ্বাস’-এর প্রতিবিম্ব ধরতে চেয়েছিলেন।
‘নাসির আল মুলক’ মসজিদের অভ্যন্তরভাগের মেঝেজুড়ে গোলাপি টাইলসের বিপুল ব্যবহারের কারণে এই মসজিদকে ‘গোলাপি মসজিদ’ বলা হয়ে থাকে। তবে, এটা বলাই বাহুল্য যে বহু বিচিত্র রং আর আলো-ছায়ার এমন সমাহার থেকে একে কেবল একটি রঙের নামে ডাকা আর যাই হোক সুবিচার হয় না।
ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপত্যকর্মের অভ্যন্তরের খিলান আর দরজা, জানালার অলংকারবহুল নকশার আভিজাত্য অসাধারণ। খিলান ও জানালায় রঙিন কাচের এমন ব্যবহার মসজিদ স্থাপত্যে বহুল প্রচলিত না হলেও মধ্যপ্রাচ্য এবং পারস্যসহ কোথাও কোথাও এর ব্যবহার চোখে পড়ে। ফিলিস্তিনের বিখ্যাত ‘আল আকসা’ মসজিদ এবং ইস্তাম্বুলের ‘নীল মসজিদে’ রঙিন কাচের দারুণ ব্যবহার চোখে পড়ার মতোই। তবে, সিরাজের এই মসজিদ যেন অনন্যসাধারণ গাম্ভীর্য বজায় রেখে আধ্যাত্মিকতার বর্ণিল বহিঃপ্রকাশের এক চূড়ান্ত নিদর্শন।
-অন ইসলাম অবলম্বনে
বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৬
এমএইউ/