ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

আল্লাহর সাহায্যের প্রতি আস্থাশীল হওয়ার শিক্ষা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৬ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৬
আল্লাহর সাহায্যের প্রতি আস্থাশীল হওয়ার শিক্ষা ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাসের পাতায় ১৭ রমজান তারিখটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ এই দিনে সংঘটিত হয়।

বদরের যুদ্ধের ইতিহাস পাঠকমাত্রই অবগত। মদিনা থেকে ৮০ মাইল দূরে বদর নামক স্থানে সংঘটিত হওয়া হক ও বাতিলের মধ্যকার প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ এটা। মক্কার কাফেরদের ১ হাজার সশস্ত্র যোদ্ধার মোকাবেলায় নিরস্ত্র ও দূর্বল ৩১৩ জনের মুসলিম বাহিনী বিজয় অর্জন করেছিল ওই যুদ্ধে।

এ যুদ্ধ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেই দুই দলের মধ্যে তোমাদের জন্য অনেক নিদর্শন ছিল, যারা (বদরে) পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। একটি দল আল্লাহর পথে লড়াই করছিল, আর অপর দলটি ছিল কাফের। চক্ষুষ্মান লোকেরা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিল যে, কাফেরদের দল মুমিনের দল অপেক্ষা দ্বিগুণ, কিন্তু (ফল প্রমাণ করল যে) আল্লাহ যাকে চান তাকেই তার সাহায্যে ও বিজয় দান করেন। বস্তুত দৃষ্টিমান লোকদের জন্য এতে খুবই উপদেশ ও শিক্ষার বস্তু নিহিত রয়েছে। ’ -সূরা আল ইমরান: ১৩

বর্ণিত আয়াতে তিনটি বিষয়ে মানুষের জন্য বিশেষ শিক্ষা নিহিত আছে। প্রথমতঃ মুসলমান ও কাফেররা যেভাবে পরস্পরের সম্মুখিন হয়েছিল; তা থেকে উভয়ের নৈতিক পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। এক দিকে মক্কার কাফেরদের বাহিনীতে মদ, নর্তকী ও গায়িকাসহ নানা রকম আয়েশ-আরামের ব্যবস্থা। অন্যদিকে মুসলিম বাহিনী পরহেজগারি ও আল্লাহভীতির চূড়ান্ত মানের নৈতিক সংযম, নামাজ ও রোজা পালনে মশগুল।

দ্বিতীয়তঃ মুসলিম বাহিনী সংখ্যায় অপ্রতুল এবং সাজ-সরঞ্জামহীন হওয়া সত্ত্বেও কাফেরদের বিশাল সংখ্যা, উন্নত ধরনের অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে যেভাবে জয়লাভ করেছে, এটা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণ করে যে, মুসলমানদের প্রতি আল্লাহর সাহায্য ও অনুগ্রহ বর্ষিত হয়েছিল।

তৃতীয়তঃ আল্লাহর অপরাজেয় শক্তি সম্পর্কে অলস হয়ে যারা নিজেদের লোক সংখ্যার বিপুলতা ও সাজ-সরঞ্জামের প্রাচুর্যের দরুণ অহংকারে ফুলে উঠেছিল, তাদের জন্য বদরের ঘটনাটি একটি বিশেষ উপদেশ। মক্কার বাহিনী দেখতে পেল যে, মুষ্টিমেয় দরিদ্র অসহায় প্রবাসী মুহাজির ও মদিনার খেটে খাওয়া মানুষর সমন্বয়ে গঠিত একটি ক্ষুদ্র দলের সাহায্যে কোরাইশদের ন্যায় বিরাট শক্তিশালী, সম্পদশালী ও আরব উপদ্বীপের শ্রেষ্ঠতম গোত্রকে আল্লাহতায়ালা কিভাবে পরাজিত করে দিতে পারেন।

বদরের যুদ্ধে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছিলো মুহাজিরদের। কারণ, তাদের প্রতিপক্ষে ছিল আপন ভাই, পুত্র এবং অন্যান্য আত্বীয়-স্বজন। কারো বাপ, কারো চাচা, কারো মামা, কারো ভাই ছিল তার তলোয়ারের লক্ষ্যবস্তু। ঈমানের এই পরীক্ষায় মুসলমানরা টিকেছিলো। এখানেও রয়েছে আল্লাহর সাহায্য। বস্তুত যারা সাচ্চা দিলে আল্লাহর সঙ্গে ওয়াদা করেছিলো, যে সব সম্বন্ধকে তিনি বজায় রাখতে বলেছেন, তারা শুধু তা-ই বজায় রাখবে আর যেগুলোকে ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন- তা যতোই প্রিয় হোকনা কেন; তারা ছিন্ন করে ফেলবে।

আসলে ঈমানের একটি স্তরে উন্নীত হওয়ার পরই বান্দার জন্যে আল্লাহর সাহায্য অবতীর্ণ হয়। বদরের যুদ্ধ তার জ্বলন্ত উদাহরণ। এ যুদ্ধে কোরাইশদের ৭০ জন সৈন্য নিহত ও সমান সংখ্যক লোক বন্দি হয়। মুসলমানদের পক্ষে মাত্র ৬ জন আনসার ও ৮ জন মুহাজির শহিদ হন।

বদর যুদ্ধে মুসলিম সৈনিকদের কেউ কিন্তু দুনিয়ার ভোগ-বিলাসিতার জন্য, যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতি পাওয়ার জন্য, রাষ্ট্র দখলের জন্য, পদ লাভের জন্য নিজেদের জীবন আল্লাহর পথে উৎসর্গ করেননি। তারা জীবন বিলিয়েছেন, একমাত্র আল্লাহতায়ালা ও রাসূলের (সা.) সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। আল্লাহর হুকুম মানার জন্য।

বদর দিবসের শিক্ষা হলো, নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি ও কর্মী বাহিনীর ওপর ভরসা না করে সর্বাবস্থায় একমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা করা। বিপদে-আপদে শুধুই আল্লাহর কাছে দোয়া করা। পরিস্থিতি যতোই প্রতিকূলে যাক না কেন, আল্লাহর সাহায্যের ওপর আস্থাশীল হওয়া এবং কোনো অবস্থাতেই বাতিলের সঙ্গে আপোস না করা। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: গবেষক ও সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘন্টা, জুন ২২, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।