মসজিদে সাধারণত রমজান মাসে এবং অন্যান্য মাসের শুক্রবারে ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে কিশোররা আসে। আর বয়সের কারণে ওই সময় বাচ্চারা সাধারণত উচ্ছল প্রকৃতির হয়, একটু চঞ্চলতা বেশিই করে।
অজু করতে যেয়ে পানি ছিটানো কিংবা মসজিদে লুকোচুরি খেলা, টুপি কাড়াকাড়ি খেলা, শূণ্য হাতে ক্রিকেট বল অথবা ব্যাট করার ভঙ্গি, দৌঁড় প্রতিযোগিতা এসবে তারা খুব মজা পায়। মসজিদের ইফতারির প্রোগ্রামে তাদের উপস্থিতি দেখার মতো। তবে, সমাজের কিছু মানুষ মানুষ আছেন, যারা মসজিদে বাচ্চাদের দেখলেই তেড়ে যান। সেই সঙ্গে যেসব অভিভাবক বাচ্চাদেরকে নিয়ে মসজিদে আসেন; তাদের দিকে অভিযোগের দৃষ্টিতে তাকান। ভাবখানা এমন সে যেনো মহা কোনো অন্যায় করে ফেলেছে।
মসজিদে যাওয়ার পর তাড়া খাওয়া, কিংবা বাঁকা দৃষ্টিতে তাদের দেখার মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি সেই শিশুটার মনোজগতে কিন্তু মারাত্মক দীর্ঘস্থায়ী খারাপ প্রভাব তৈরি করে। যেমন আমিই ছোটকালে বেশ ক’বার এমন অাচরণের মুখোমুখি হওয়ার প্রেক্ষিতে আর মসজিদে যেতে চাইতামনা রাগ করে।
মসজিদে ছোটরা এলে দুষ্টুমি করবে- এটাই স্বাভাবিক। তাই ছোটরা নামাজে এলে তাদেরকে পাশে নিয়ে নামাজে দাঁড়ান, তাদের আলাদাভাবে দাঁড়াতে দেবেন না। ছোটরা আলাদাভাবে দাঁড়ালে দুষ্টুমি করবে, বড়দের সঙ্গে একত্রে দাঁড়ালে আর দুষ্টুমি করার সুযোগ পাবে না।
সেই সঙ্গে তাদের আদর করে, স্নেহ দিয়ে বুঝিয়ে বলুন, মসজিদে হাসাহাসি-দুষ্টুমি করলে মসজিদের পবিত্রতা এবং মুসল্লিদের মনোযোগ নষ্ট করে। দেখবেন তারা চুপ থাকবে।
ইফতারিতে তাদেরকে ছোট প্লেট বা প্যাকেট না দিয়ে সবাই যেটা খাচ্ছে সেটাই দেন। একটা ছোট প্যাকেটের কারণে সে হয়তো সারা জীবন ছোট মানসিকতা লালন করবে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রসারতা বন্দি হয়ে যাবে ওই ছোট্ট প্যাকেটের মতোই।
আপনার এলাকাতেই হয়তো ছোট এমন কেউ আছে, সে বাদাম বিক্রি করে কিংবা হোটেলে কাজ করে। আপনি তাকেও স্নেহ করুন। তাকেও ভালোবাসুন। পারলে তাকে সঙ্গে নিয়ে ইফতার করুন। আপনার মূল্যায়ন আর ভালোবাসায় সেও মানুষকে ভালোবাসতে শিখবে, শ্রদ্ধা করতে শিখবে।
মনে রাখবেন love begets love. আপনার ইফতারে আসবে জান্নাতি অনুভূতি। আর সবকিছুর ওপরে আল্লাহর সন্তুষ্টি তো আছেই।
আল্লাহর রাসূল (সা.)শিশুদেরকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। ছোটদের দেখলেই সালাম দিয়ে কুশল জিজ্ঞেস করতেন তিনি। হজরত হাসান-হোসেন (রা.) তার পিঠে উঠে থাকত সিজদার সময়- এমনও বর্ণনা হাদিসে এসেছে।
সুতরাং ছোটদের কাছ থেকে শুধু সালাম আশা করবেন না, বরং সালাম দিবেন আগে। যে আগে সালাম দেয় সে অহঙ্কার থেকে বাঁচতে পারে। মসজিদে মাঝে মাঝে পিচ্চিদের নিয়ে সমাবেশ করতে পারেন, যেমন কোরআন তেলাওয়াতের সমাবেশ কিংবা কোরআন-হাদিসের গল্প শোনানোর সমাবেশ। সমাবেশ শেষে চমৎকার কিছু পুরস্কার দিতে পারেন। সেটা চকোলেটের বক্স বা ঝলমলে রঙিন কোনো বই। এ জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম বাচ্চাদের সারিতে মিশতে হবে তাদের মতো করে।
মনে রাখবেন, আপনার-আমার শিশুদের প্রতি ছোট ও সুন্দর আচরণ এবং দৃষ্টিভঙ্গিই পারে বদলে দিতে এই দূষণে ভরা সমাজকে। আগামী প্রজন্মকে আলোর পথে এনে গড়ে তোলার দায়িত্ব কিন্তু আমাদেরই।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
এমএইউ/