হজরত আবু আইয়ুব আনসারি রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে রমজানের রোজা এবং শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল (পুরস্কারের দিক থেকে)। ’ –সহিহ মুসলিম
উপরোক্ত হাদিস প্রসঙ্গে আন নাসাঈ তার ‘সুবুল উস সালাম’ গ্রন্থে বলেছেন, যদি রমজানের ৩০টি রোজার সঙ্গে শাওয়ালের ছয়টি রোজা যুক্ত হয়, তাহলে মোট রোজার সংখ্যা হয় ৩৬টি।
কোনো কোনো আলেম বলেন, রমজানের শেষে শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখতে হবে, এমন কথা নেই একনাগাড়ে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, শাওয়াল মাসেই ছয়টি রোজা একনাগাড়ে রাখতে হবে এমন কথা নেই। শেষোক্ত মতামতটিই অধিক গ্রহণযোগ্য।
অনেকেই প্রশ্ন করেন, যদি শাওয়াল মাসে সময় পাওয়া না যায়, তাহলে ভাঙতি রোজা পূর্ণ না করে আগে শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখার অনুমতি ইসলামে আছে কি-না। শুরুতে বর্ণিত হাদিসটিতে ‘সুম্মা’ শব্দের প্রয়োগই এ প্রশ্নের জবাব বলে মন্তব্য করেন শায়খ আল মুনাজ্জিদ। সুম্মা অর্থ অতঃপর। অর্থাৎ কেউ রমজানের রোজা পূর্ণ করল, অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছর ধরেই রোজা করল। এখানে ধারাবাহিকতার কথাই বলা হয়েছে।
কাজেই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী রমজান মাসে কারো রোজা ভাঙতি হলে শাওয়াল মাসে সেই ভাঙতি রোজা আগে পূর্ণ করতে হবে। পরে শাওয়ালের ছয়টি রোজা করতে হবে। রোজা কাজা করার যথাযথ ও অনুমোদিত ওজর যার রয়েছে, তাকে অবশ্যই কাজা রোজা করতে হবে আগে। কেননা রমজানের রোজা হলো ইসলামের একটি স্তম্ভ। আর শাওয়ালের ছয়টি রোজা হলো- নফল। যে এই নফল পালন করল না, সে তিরস্কৃত হবে না। কেননা এটা ফরজ ইবাদত নয়।
রমজানের পর শাওয়াল মাসের মধ্যে ছয়টি রোজা রাখার নেক আমলটা বিরাট ফজিলতসম্পন্ন ও তা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব। শাওয়ালের নফল রোজাগুলো ছুটে না যায় এবং কোনো ব্যস্ততাই যেন মানুষকে অধিক সওয়াব অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
শাওয়ালের ঐচ্ছিক রোজা মাসের শুরু থেকে শেষ সময় পর্যন্ত পালন করা যাবে। ধারাবাহিক ও অধারাবাহিক, যেভাবেই হোক না কেন, রোজাদার অবশ্যই এর সওয়াবের অধিকারী হবেন।
তবে যার ওপর রমজানের রোজা কাজা আছে, সেই ব্যক্তি আগে কাজা আদায় করবে, তারপর শাওয়ালের ঐচ্ছিক রোজা পালনে ব্রতী হবে। কারণ, ওয়াজিব আদায়ের দায়িত্ব পালন নফল আদায়ের চেয়ে অধিক গুরুত্ব রাখে। কেননা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে মাহে রমজানের পূর্ণ রোজা রাখবে, আর যার ওপর কাজা রয়ে গেছে সে তো রোজা পুরা করেছে বলে গণ্য হবে না, যতক্ষণ ওই রোজাগুলো কাজা আদায় না করে। ’ –আল মুগনি: ৪/৪৪০
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ফরজের আগে-পরে সুন্নত ও নফল প্রবর্তন করেছেন। যেমন- ফরজ নামাজের পূর্বাপর সুন্নতগুলো এবং মাহে রমজানের আগে শাবানের ঐচ্ছিক রোজা আর পরে শাওয়ালের নফল রোজা। এই নফল ইবাদতগুলো ফরজের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোর ক্ষতিপূরণ করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৬
এমএইউ/