সৃষ্টির সেরা মানুষ যখন আল্লাহকে ভুলে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠে, নীতি-নৈতিকতা ভুলে যায়, রাজনৈতিক নিপীড়ন, অর্থনৈতিক শোষণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনে লিপ্ত হয়- তখনই শান্তি বিনষ্ট হয়। আসলে সামাজিক ভেদাভেদ, পেশী শক্তির মহড়া থেকে মুক্তি পেতে হলে মানুষের মাঝে পরস্পরে হিংসা-মারামারি ও শত্রুতার দেয়াল ভাঙতে হবে।
সমাজে শান্তি বজায় রাখতে হলে-নম্রতা, ভদ্রতা, বিনয়, সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ বাড়াতে হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত- জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ৪টি মৌলিক দায়িত্ব সম্পর্কে কোরআনে কারিমে ইরশাদ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘তারা এমন যাদেরকে আমি জমিনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, জাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে। ’ -সূরা আল হজ: ৪১
কোরআন-হাদিসের আলোকে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আরো যে সব কাজ করা যেতে পারে সেগুলো হলো-
ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া: ভ্রাতৃত্বের মৌল ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা। আর ‘আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা’র মৌল ভিত্তি হচ্ছে প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ যা পছন্দ করেন, তা নির্বাচন করা।
প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান ও দয়া প্রদর্শন করা: বিতর্ক করা হবে সত্য প্রকাশ ও মানুষের প্রতি দয়া-মমতার জন্য। বিতর্কে একপক্ষ অপর পক্ষকে মূর্খ বা অজ্ঞ বলে থাকে। কিন্তু প্রতিপক্ষ যদি মূর্খও হয় তবুও তাকে তা বলতে হবে এমন কোনো কথা নেই। বরং না বলাটাই ইসলামের শিক্ষা।
কারো ওপর জুলুম না করা: ন্যায়বিচারের বিপরীত হলো জুলুম। যার যা প্রাপ্য তাকে তা না দেয়া হলো জুলুম। একে অবিচারও বলা হয়। অবিচার হলো বড় জুলুম। অবিচারের মাধ্যমে নিরপরাধ ব্যক্তিগণ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। জুলুম বা অত্যাচার হলো কারও প্রতি অন্যায় আচরণ করা। এটা ব্যক্তির সম্পদ আত্মসাৎ, শারীরিক আক্রমণ বা সম্মানহানির মাধ্যমেও হতে পারে। ইসলামে জুলুম মস্ত বড় অন্যায় বলে বিবেচিত। ইসলাম সব সময় জুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ইসলাম বলেছে, আল্লাহর হক আদায় না করলে আল্লাহ ক্ষমা করলেও বান্দার হক বিনষ্টকারীকে আল্লাহ কখনও ক্ষমা করবেন না যতক্ষণ না যার ওপর জুলুম করা হয়েছে, সে ক্ষমা করে দেয়।
সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎকাজের নিষেধ করা: এটি ইসলামের একটি অত্যবশ্যকীয় দায়িত্ব। এর মাধ্যমে সত্যের জয় হয় এবং মিথ্যা ও বাতিল পরাভূত হয়। যিনি আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে এ দায়িত্ব পালন করেন তার জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার ও মর্যাদাপূর্ণ পারিতোষিক।
জবাবদিহিতার মানসিকতা থাকা: সমাজে প্রত্যেক মানুষ তার কর্মফলের জন্য নিজেই দায়ী। পার্থিব জীবন শেষে আল্লাহর কাছে প্রত্যেককে নিজ নিজ কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। কোনো লোকের দুর্নীতি, অপকর্ম বা পাপে অন্য কেউ বা তার আত্মীয়স্বজন বা বংশ দায়ী হবে না। মানুষকে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য অত্যন্ত সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতার সঙ্গে যথাযথভাবে পালন করতে হবে। বিভিন্ন কাজকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের প্রকাশের উপযুক্ত তত্ত্ব-তথ্য, আয়-ব্যয়, হিসাব-নিকাশ ও লেনদেনকে সুস্পষ্টভাবে জানার জন্য উন্মুক্ত করাই হলো স্বচ্ছতা। আর প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তি নিজ নিজ অধীন ব্যক্তিদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হওয়াই জবাবদিহি। ইসলামে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ইহকালীন ও পারলৌকিক উভয় জগতেই লক্ষ করা যায়।
সবশেষে বলা যায়, সংঘাতপূর্ণ মানব সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আল্লাহ ও তার রাসূলের পথ ও মত অনুসরণ করতে হবে। এক আল্লাহর বিশ্বাস, তিনি জগতের সৃষ্টিকর্তা ও তিনি ইবাদতের মালিক এ কথা মেনে চলতে হবে। কার সঙ্গে মানুষের শান্তিপূর্ণ আচরণ কি হবে, তা হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রয়োগিক পদ্ধতিতে শিখিয়ে দিয়েছেন। মানব রচিত কোনো সমাজ দর্শনে এর কোনো নজির নেই। তাই বর্তমানের সংঘাতময় মানব সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ হলো, ইসলাম ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শে সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
বাংলাদেশ সময়: ২১১১ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৬
এমএইউ/