ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ নামাজ। ঈমানের পর নামাজের চেয়ে গুরুত্ব অন্য কোনো ইবাদতে প্রদান করা হয়নি।
আর নামাজের ব্যাপারে যারা উদাসীন থাকে তাদের শাস্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘দুর্ভোগ সেসব নামাজির জন্য, নিজেদের নামাজের ব্যাপারে যারা থাকে গাফেল (উদাসীন)। -সূরা মাউন: ৪-৫
রোজ হাশরে নামাজের মাধ্যমে হিসাব-নিকাশ শুরু হবে। যার নামাজ সঠিক হবে তার অন্যান্য আমলও সঠিক বলে বিবেচিত হবে। আর যার নামাজ অসুন্দর হবে তার অন্যান্য আমলও অসুন্দর বলে গণ্য হবে।
হজরত উবাদা ইবনে সামির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের সাতটি অসিয়ত করেন, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি কাজ হলো- তোমরা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না। যদিও তোমাকে টুকরা টুকরা করে ফেলা হয় বা অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হয় আর ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করো না। কেননা যে ইচ্ছা করে নামাজ ছেড়ে দেয়- সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়। ’
অনেকেই নামাজের গুরুত্ব বুঝাতে যেয়ে কিংবা নামাজের পার্থিব উপকারিতা বর্ণনা করার সময় বলে থাকেন, ফজরের নামাজ ছেড়ে দিলে চেহারার জ্যোতি কমে যায়, জোহরের নামাজ ছেড়ে দিলে তার রিজিকের বরকত কমে যায়, যে ব্যক্তি আসরের নামাজ তরক করে তার শরীরের শক্তি কমে যায়, যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজ তরক করে তার সন্তানরা তার কোনো কাজে আসে না এবং যে ব্যক্তি এশার নামাজ তরক করে তার ঘুমের শান্তি চলে যায়।
নামাজ ছেড়ে দেওয়ার কিংবা তরক করার ক্ষতি হিসেবে অনেকেই এ বর্ণনাটি পেশ করে থাকেন। এটি লোকমুখে হাদিস হিসেবে খুব প্রসিদ্ধও বটে। কিন্তু বাস্তবে এটি নবীর হাদিস নয়; এটি একটি ভিত্তিহীন বর্ণনা।
হাদিসের নির্ভরযোগ্য কোনো কিতাবে আমরা এর কোনো সূত্র পাইনি। সহিহ-দূর্বল কোনো ধরনের সূত্রেই পাওয়া যায়নি। সুতরাং এটিকে হাদিস হিসেবে বর্ণনা করা যাবে না।
বেশ কিছু আয়াত-হাদিসে নামাজ তরক করার বিষয়ে সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছে। নামাজ তরক করার ক্ষতি বা শাস্তি হিসেবে সেগুলোই বর্ণনা করা উচিত। এধরনের জাল বর্ণনা পরিহার করা উচিত।
এ বিষয়ক কয়েকটি আয়াত ও সহিহ হাদিস উল্লেখ করা হলো- সূরা মারইয়ামের ৫৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারপর তাদের স্থলাভিষিক্ত হলো এমন লোক, যারা নামাজ নষ্ট করলো এবং ইন্দ্রিয় চাহিদার অনুগামী হলো। সুতরাং অচিরেই তারা তাদের কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। ’ -সূরা মারইয়াম: ৫৯
জাহান্নামিদের জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমরা কেন জাহান্নামি হলে? তারা উত্তরে বলবে, আমরা মুসল্লি (নামাজি) হতে পারিনি। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদেরকে কিসে ‘সাকার’ জাহান্নামে নিক্ষেপ করল? তারা বলবে, আমরা মুসল্লিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না (আমরা নামাজ পড়তাম না)। ’ -সূরা মুদ্দাসসির: ৪২-৪৩
আর হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘নামাজ হলো কুফর-শিরকের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। ’ -সহিহ মুসলিম
আর বিশেষভাবে আসরের নামাজ তরক করার বিষয়েও হাদিসে সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আসরের নামাজ তরক করলো, তার আমল বরবাদ হলো। ’ –সহিহ বোখারি
সুতরাং নামাজ তরক করা বিষয়ে এ জাতীয় সহিহ হাদিসগুলোই আমাদের বলা উচিৎ। ভিত্তিহীন বর্ণনা থেকে বিরত থাকা দরকার। আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৬
এমএইউ/