বই পড়ে, ওয়াজ-মাহফিলের বয়ান শোনে, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধ পড়ে, জুমার আগের বয়ান শোনে, আলেমদের সান্নিধ্যে থেকে সাধারণ মানুষ ইসলাম সম্পর্কে জানেন, কোরআন-হাদিসের কথা শেখেন। অনেক সময় তাতে থাকে করণীয় কাজের বিবরণ ও তার পুরস্কারের কথা।
অবশ্য এর উল্টো চিত্র ও ভিন্ন অবস্থাও দেখা যায় সাধারণ মানুষের মাঝে। দেখা যায়, এসব মানুষ একটা মন্দ কাজ ও তার শাস্তির কথা শোনে বা পড়ে নিজের ব্যাপারে গাফেল হয়ে যায়। অর্জিত জ্ঞানকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করতে থাকে। সমাজের, বংশের, বন্ধুমহলের কে কে এ মন্দ কাজে লিপ্ত তা খোঁজে বের করতে শুরু করে। উদ্দেশ্য থাকে তাদের নিন্দা করা, তাদের সমালোচনা করা। ওয়াজ-মাহফিল, অনলাইন, বই-পুস্তক বা পত্রিকার ইসলাম পাতা থেকে অর্জিত জ্ঞানের এমন প্রয়োগ নিজের আমলনামার জন্য, আখেরাতের জন্য চরম ক্ষতিকর।
রাতে কোনো ওয়াজ মাহফিলে শোনলেন দান করে খোঁটা দিলে দানের সওয়াব নষ্ট হয়ে যায়। সকালে উঠে আলোচনা শুরু করলেন- পাড়ার কে কবে কাকে দান-খয়রাত করে কীভাবে খোঁটা দিয়েছিল।
জুমার বয়ানে শোনলেন, জাকাত ফরজ হওয়ার পর জাকাত আদায় না করলে আখেরাতে সম্পদসমূহ গরম করে পিঠে দাগ দেওয়া হবে। জাকাত দিলে ময়লা দূর হয়ে সম্পদ পবিত্র হয়। জুমার নামাজের পর বাজারে যেয়ে আলোচনা জুড়ে দিলেন, পাড়ার কে কতো সম্পদের মালিক; আর কে জাকাত দেয় না।
পর্দার ওয়াজ শোনে খুঁজতে থাকলেন কার বউ-ঝি বেপর্দা চলাফেরা করে। ইন্টারনেটে ঝগড়ার ক্ষতি পড়ে ফেসবুকে কমেন্ট করলেন আপনার বংশের কোন লোক ঝগড়াটে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এসব করার মধ্য দিয়ে মাহফিলের ওয়াজ শোনে, জুমার বয়ানে উপস্থিত থেকে, অনলাইনে ইসলাম বিষয়ক লেখা দেখে, পত্রিকার ইসলাম থেকে ইসলামি লেখা পড়ে, টিভির ইসলামি অনুষ্ঠান দেখে লাভবান হতে পারলেন না। বরং আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হলেন।
মনে রাখবেন, অন্যরা গোনাহ করে যে পরিমাণ শাস্তির উপযুক্ত হচ্ছে, আপনি তাদের পেছনে লেগে থেকে বা তা খোঁজে বের করে বা তা চর্চা করে ঠিক সে পরিমাণ শাস্তির উপযুক্ত হচ্ছেন।
সবচেয়ে ভালো হলো, কোনো দ্বীনী কথা জানলে তা নিজে আগে আমল করুন। নিজের জীবনে সেটা প্রয়োগ করুন। নিজের জীবন ও কর্মের সঙ্গে তুলনা করুন। নিজের ভেতর কোরআন-হাদিসের যতটুকু ঘাটতি পাবেন তা পূরণে যথাসম্ভব যত্নবান হোন।
আরো ভালে হয়, মাহফিলে বসার আগে অথবা ধর্মীয় বই-পত্রিকা পড়ার আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন। আপনি কেন দ্বীনী জ্ঞানের চর্চা করবেন? যদি উত্তর হয় মানুষকে যাচাই করার জন্য, তবে তওবা করে নিয়ত বদলে নিন। জ্ঞান চর্চা শুরু করার আগেই নিয়ত করে নিন, নিজের আমল ও চরিত্র ঠিক করার জন্য ওয়াজ শোনছেন। নিজের আমল ও চরিত্র ঠিক করার জন্য বয়ান শোনছেন। নিজের আমল ও চরিত্র ঠিক করার জন্য ইসলামি লেখা পড়ছেন। কোনো গোনাহের কাজের কথা শোনার পর ভুলেও অন্যের চর্চা করবেন না। অন্যের দোষ চর্চা আপনার নেক আমলকে নিঃশেষ করে দেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৬
এমএইউ/