কাজভিন প্রদেশ ইরানের ৩০টি প্রদেশের একটি। এটি দেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত।
কাজভিনের জামে মসজিদ বা কাবির মসজিদ অসম্ভব সুন্দর একটি মসজিদ। কাজভিনের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ এটি। ইসলামি যুগের স্থাপত্যকলার আদলে বানানো এ মসজিদটির ঐতিহাসিক মূল্য অনেক। সে সময় চারদিকে ঝুল বারান্দা রেখে মসজিদ বানানো হতো। সেই নিদর্শন এখানে সুস্পষ্ট। মজবুত এবং বিশালত্বের দিক দিয়ে এ মসজিদের গম্বুজের রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। মিনারটিতে কারুকাজও করা হয়েছে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। ঝুলবারান্দাগুলোও দেখার মতো। তাতে রয়েছে বিচিত্র লিপির নকশা।
কাজভিন জামে মসজিদের সবচেয়ে প্রাচীন অংশটি কে নির্মাণ করেছিলেন তা নিয়ে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। কোনো কোনো ঐতিহাসিক বলেছেন ওমর ইবনে আবদুল আজিজের হাতে হিজরি ১০০ সনে ওই অংশটি নির্মিত হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন ১৯২ হিজরিতে হারুনুর রশিদের হাতে নির্মিত হয়েছে কাবির মসজিদের প্রাচীনতম অংশটি। কাজভিন জামে মসজিদে ঐতিহাসিক বহু লিপিকর্ম রয়েছে। এসব লিপিকর্ম কারুকাজে বা নকশায় কবিতা আকারে কিংবা বর্ণনায় উঠে এসেছে।
ইরানের বিখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক এবং লেখক হামদুল্লাহ মোস্তাওফির কবরসহ মোঙ্গল আমলের শেষ দিককার সুন্দর সুন্দর স্থাপনা ও ভবন এবং সেইসঙ্গে আরও বহু নিদর্শন রয়েছে কাজভিনে। লেখক হামদুল্লাহ মোস্তাওফির মাজার স্থাপনার ওপর যে গম্বুজটি রয়েছে তার বাইরের দিকটায় রয়েছে নয়নাভিরাম সবুজ টাইলসের বিচিত্র কারুকাজ। আরও রয়েছে কোরআনের আয়াতের চমৎকার ক্যালিগ্রাফি।
চেহেল সুতুন প্রাসাদ কাজভিনের আরেকটি দর্শনীয় স্থাপনা। এ প্রাসাদটি ‘ফিরিঙ্গি বিলাস ভবন’ নামেও পরিচিত। ফার্সিতে বলা হয় ‘কোলা ফারাঙ্গি’। সুন্দর এবং মূল্যবান নিদর্শন হিসেবে এই ফিরিঙ্গি ভবনের আলাদা মর্যাদা রয়েছে। আটটি বাহু বিশিষ্ট এ ভবনের মাঝখানে রয়েছে একটি বাগিচা। শহরের ঠিক কেন্দ্রে অবস্থিত দোতলা এ ভবনের ভেতরে বড় একটি অডিটোরিয়ামও রয়েছে। ফিরিঙ্গি ভবন এখন ক্যালিগ্রাফি মিউজিয়াম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কাজভিন জামে মসজিদের মতো আরও অনেক মসজিদ আছে কাজভিন শহরে। এসব মসজিদের নির্মাণশৈলী বিশ্বব্যাপী আলোচিত এবং সমাদৃত। কাজভিনের ঐতিহাসিক এসব স্থাপনা আলাদা বৈশিষ্ট্যময়। অধিকাংশ স্থাপনায় টাইলসের কারুকাজ, কাঁচের কারুকাজ রয়েছে। এককথায় এসব চোখ ধাঁধানো। দেশি বিদেশি পর্যটক সবাই এসব দেখে মুগ্ধ হন।
কাজভিন বাজার আরেকটি প্রাচীন স্থাপনা। এর নির্মাণশৈলীও দেখার মতো। ঐতিহাসিক মূল্য যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে সাংস্কৃতিক মূল্যও। ইসলাম-পূর্বকালে নির্মাণ করা হয়েছিল এই বাজারটি।
পথচারীদের পান করার জন্যে পার্ক, রাস্তাঘাট কিংবা জনসমাগমপূর্ণ স্থানে বিশুদ্ধ পানির করা ইরানিদের একটি ঐতিহ্য। এখন তো একেবারে ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাচীনকালে বরফের মতো ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা না থাকলেও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা ছিল। সে সময় মানবসেবী হৃদয়বানেরা নিজ উদ্যোগে এ পানির ব্যবস্থা করতেন। কাজভিন শহর সেরকম পানির অসংখ্য হাউজের একটা ঐতিহাসিক আধার বলা যায়। মাটি খুঁড়ে পাথরের দেয়াল দিয়ে তার ওপর সুন্দর গম্বুজ বানিয়ে চমৎকার স্থাপনা বানানো হতো। চারদিক সুন্দর সুরক্ষিত করে একটা মূল প্রবেশদ্বার রাখা হতো।
পানির হাউজ ছাড়াও কাজভিন শহরে রয়েছে প্রাচীন হাম্মাম এবং নৃতত্ত্ববিদ্যা জাদুঘর। এসব প্রাচীন নিদর্শন যে কোনো দর্শনার্থীকে খুব সহজেই আকৃষ্ট করে।
কাজভিন সম্পর্কে পর্যটক বিশেষজ্ঞদের মত হলো, এখানকার স্থাপনাসমূহের প্রাচীনত্ব এবং নির্মাণ শৈলী অন্যসব ঐতিহাসিক স্থাপনা থেকে একেবারেই আলাদা। বিরল এই বিষয়টির জন্য কাজভিন ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে আকর্ষণের স্থানে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪১২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৬
এমএইউ/