ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

গুগলের ঔদ্ধত্য! ম্যাপে বিলীন ফিলিস্তিন!

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০১ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৬
গুগলের ঔদ্ধত্য! ম্যাপে বিলীন ফিলিস্তিন!

সাম্প্রতিক সময়ে পত্রিকার পাতায়, টিভির পর্দায় কিংবা অনলাইনের স্ক্রীনে সুসংবাদ তেমন লক্ষ্য করা যায় না, দুঃসংবাদের মাত্রাই তুলনামূলক বেশি। বিষয়টাকে বৈশ্বিক রাজনীতি ও সভ্যতার সংকট হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে বলতে হয়, মুসলমানদের জন্য এখন যেন কোনো সুসংবাদ থাকতে নেই। এমন বক্তব্য অনেকের কানে বাজতে পারে, বিরক্তও হতে পারেন কেউ কেউ। কিন্তু এটাই বাস্তবতা।

সম্প্রতি গুগল মানচিত্র থেকে ফিলিস্তিনের নাম সরিয়ে ফেলার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই গৌরচন্দ্রিকা।

গুগল মানচিত্রে দেশটিকে ইসরাইলের সঙ্গে বিলীন করে দেওয়া হয়েছে। প্যালেস্টাইন ক্রনিক্যালের খবরে বলা হয়, গত ২৫ জুলাই ফিলিস্তিনের নাম নিজেদের মানচিত্র থেকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে গুগল।

মিডলইস্ট মনিটর-এর খবরে বলা হয়, ৫ আগস্ট দুপুরে গুগল ম্যাপ সার্ভিসে প্রবেশ করে দেখা যায়- সেখানে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন শহরের নাম প্রদর্শন করা হলেও দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনের নাম নেই। বরং ইসরাইলের ভেতরেই বিভিন্ন শহরের অবস্থান চিহ্নিত করা হচ্ছে।

প্যালেস্টাইন লিখে সার্চ দিলে গুগল স্ট্রিটভিউতে সেখানকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ছবি দেখা যায়, তবে মানচিত্রে দেখা যায় না ফিলিস্তিনের নাম। গুগল ম্যাপ থেকে নিজ দেশের নাম সরিয়ে ফেলার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে প্যালেস্টাইন জার্নালিস্ট ফোরাম।

এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, নিজেদের বৈধ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ইসরাইলের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ইতিহাস ও ভূগোলকে যেমন অস্বীকার করা হয়েছে, তেমনি ফিলিস্তিনের মানুষের মাতৃভূমির অধিকারকেও খর্ব করার চেষ্টা করা হয়েছে।

বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি সাংবাদিকরা বলেন, এটি আসলে আরব এবং বিশ্বের সঙ্গে ফিলিস্তিনের স্মৃতি ধ্বংস করার একটি ব্যর্থ প্রক্রিয়া। গুগলের এই পদক্ষেপকে সব ধরনের আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির লঙ্ঘন বলেও তারা মন্তব্য করেন। ফিলিস্তিনের নাম গুগল মানচিত্রে দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবিও জানিয়েছে প্যালেস্টাইন জার্নালিস্ট ফোরাম।

গুগলের এই পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে ভাবতে অবাক লাগে, ভূমিপুত্র ফিলিস্তিনিদেরকেই আজ ফিলিস্তিন থেকে শুধু উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রই চলছে না, বরং তাদের নাম-নিশানাও মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। অপরদিকে বিশ্বযুদ্ধের পর উদ্বাস্তু হিসেবে আসা ইহুদিরাই এখন ফিলিস্তিনে দাপটের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। যা বিশ্ববাসীর অজানা নয়। আরও অবাক করার মতো বিষয় হলো- এসব হচ্ছে শক্তিমান বিশ্ব নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে। এই হলো বিশ্ব রাজনীতি ও সভ্যতার ঠিকাদারদের অবস্থান। সাম্রাজ্যবাদীদের এমন চাতুর্যপূর্ণ ব্যবহার যে অভিনয়মাত্র- তা আর নতুন করে বলার অবকাশ নেই।

তাদের অন্তরে সততা, ন্যায় ও মানব-দরদের কোনো চেতনা নেই। বরং তাদের অস্তিত্বজুড়ে রয়েছে, মুসলিম-বিদ্বেষ। কিন্তু অভিনয় চাতুর্যে তারা মানুষকে ধোঁকা দিতে পারছেন খুব সহজেই।

গুগল একটি বৈশ্বিক সেবা সংস্থা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। তারাও যেভাবে সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষায় ‘মালকোঁচা’ মেরে শক্তিমানদের পক্ষে দাঁড়ালো- তাতে অবাক না হয়ে উপায় নেই।

শান্তিকামী, মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা, গুগল শান্তি, পবিত্রতা, মানবিকতা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার পক্ষে নিজের অবস্থান জানান দিতে তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। সভ্যতা বিনাশকারী বন্দুকধারীদের পাশে না দাঁড়িয়ে অত্যাচারিতদের পক্ষে থেকে শান্তির পাতাকা উড্ডিনের ব্যবস্থা করবে।

আমরা জানি, শান্তিময় জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন আনন্দময় বিকশিত সমাজ। এগুলো কামনার বিষয়। কিন্তু রক্ত ঝরিয়ে, সবুজ প্রকৃতি নষ্ট করে, শান্তিময় জীবন বিষাদময় করে, সাম্রাজ্যবাদীদের পক্ষে ধোঁয়া তুলে কী করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব? আশা করি, গুগল বিষয়গুলো বুঝে, অনুধাবন করে ব্যবস্থা নেবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘন্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।