ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মোঘল স্থাপত্যের স্মৃতিবাহী সাত গম্বুজ মসজিদ

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৬
মোঘল স্থাপত্যের স্মৃতিবাহী সাত গম্বুজ মসজিদ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দূর থেকে মনে হতো যেনবা ‘তাজমহল’। অনেকেই একে তখন ‘তাজমহল মসজিদ’ বলে ডাকতেন।

নৌকায় বা ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বুড়িগঙ্গাতীরের মসজিদটিতে মানুষজন নামাজ পড়তে আসতেন। আশেপাশে কোনো বাড়িঘর ছিলো না। তখন এটি ছিল ঢাকায় চোখে পড়ার মতো উঁচু স্থাপনা, যা কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও দেখা যেতো।

এখন এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর-ঘোষিত একটি পুরাকীর্তি। ১৮১৪ সালে স্যার চার্লস ডি 'ওয়াইলির আঁকা একটি চিত্রকম্প আছে এই সাত মসজিদকে ঘিরে। এতে দেখা যায়, বুড়িগঙ্গা নদীর পাশেই মসজিদটি। মসজিদের সামনে বুড়িগঙ্গার বুকে চলেছে নৌকা। এখন বুড়িগঙ্গা আর তার আগের চেহারায় নেই। আগের সেই দৃশ্যপটও গেছে বদলে। বুড়িগঙ্গার এখন দুষণে দখলে দীনহীন দশা। আর মসজিদটিরও আগের জৌলুস ফুরিয়েছে।
 
ষোড়শ শতকে শায়েস্তা খাঁর আমলে নির্মিত মসজিদটির অবকাঠামো এখনও প্রায় অবিকৃতই আছে। ছাদে তিনটি বড় গম্বুজ এবং চার কোণে একটি করে অণু-গম্বুজের কারণে নাম হয়েছে সাত গম্বুজ মসজিদ। আয়তকার নামাজকোঠার বাইরের দিকের পরিমাণ দৈর্ঘ্যে ১৭.৬৮ এবং প্রস্থে ৮.২৩ মিটার। মসজিদের পূর্বদিকে ভাঁজবিশিষ্ট তিনটি খিলান এবং পশ্চিমের দেয়ালে রয়েছে তিনটি মিহরাব।

মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের বাসিন্দা আসিফ। মসজিদের পাশে দাঁড়িয়েই ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন করে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘‘ মসজিদের রেলিংয়ে বসে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতাম।  

আসিফ বলেন, ‘‘তখন আমি কিশোর। বড়শি দিয়ে মাছ ধরেছি মসজিদের এখন যে রেলিং, সেটির উপর বসে। রেলিংটা ছিলো মাটি থেকে অনেক ওপরে। এখন অবশ্য মাটি থেকে হাঁটুর উপরে রেলিং। তখন মসজিদটি মাটি থেকে তিনতলা সমান উঁচু ছিলো। এখন মাটি থেকে বরাবর হেটে মসিজদে প্রবেশ করা যায়। ’’

মসজিদের সেক্রেটারি আব্দুল খালিকের বাবা-দাদারা এই মসজিদে নামাজ পড়েছেন। তিনি জন্মের পর থেকে মসজিদটি দেখছেন। ‘‘তখন মিরপুর ব্রিজে দাঁড়ালে এটি দিব্যি দেখা যেতো। মসজিদের পাশেই নদীঘাটে বড় বড় নৌকা এসে ভিড়তো। আমরা তখন লাফিয়ে নৌকায় উঠতাম। বর্ষায় পুরান ঢাকা থেকে মানুষজন নৌকা ও বজরায় আর শুকনো মৌসুমে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে এখানে আসতেন। ’’

তিনি বলেন, ‘‘পুরাতন যে রঙ ছিলো সেই রঙ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। সেটা ছিলো অনেকটা ইট রঙের মতো কিছুটা খয়েরিও বলা যায় । পরে চুনা সুরকি ছিলো। এখন যে রঙ, সেটা আসল রঙ নয়। একসময় এটা মহল্লার লোকজনই দেখাশোনা করতেন। এখন এটা সরকারের অধীনে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটার দেখভাল করার দায়িত্বে রয়েছে। আমরা শুধু মসজিদ কমিটির কাজটাই করি। ’’

শৈশবের স্মৃতি আওড়ে তিনি আরও জানান, ছোটবেলায় মসজিদের আশেপাশে একটিমাত্র মাটির পথ ছিলো। এখনকার মতো মানুষের ভিড় ছিলো না। একেকবার মাত্র পাঁচ থেকে জনা সাতেক লোকের চলাচল দেখা যেতো। দুটো পরিচয়হীন কবর ছিলো। এখন আরও তিনটি ব্যক্তিগত কবর আছে মসজিদের সামনে।

মসজিদ কমিটিরই একজন সদস্য মোহাম্মদ আলী। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি জানালেন, তখনও মসজিদটির চারপাশটা পানিতে তলানো ছিলো। ১৯৮৮ সালের বন্যায় মসজিদে পানি উঠে যায়। এরপরে মসজিদের সামনের অংশটি পাকা করে হয়।

এখন মসজিদের ভেতরের অংশে এবং বাইরে মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের স্থানটি মোজাইক করা হয়েছে। আগে এটা শুধু পাকা করা ছিলো।
৪টি মিনারসহ ৭টি গম্বুজের কারণে মসজিদটির নাম হয়েছে 'সাতগম্বুজ মসজিদ'—একথা বলা হয়েছে উইকিপিডিয়ায় দেওয়া তথ্যে। এটি মোঘল আমলের স্থাপত্যকলার একটি নিদর্শন। মোগল সুবাদার শায়েস্তা খাঁর আমলে তাঁরই পুত্র উমিদ খাঁ ১৬৮০ সালে মসজিদটি নির্মাণ করান। মসজিদের পূর্ব পাশের সমাধিটি ‘বিবির মাজার’ বলেও খ্যাত।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট০৯, ২০১৬
এসএ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।