প্রেমময় এক ইবাদতের নাম পবিত্র হজ। হজ বিশ্ব মুসলিমের এক মহাসমাবেশ।
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তার পবিত্র ঘর বাইতুল্লাহ নির্মাণের আদেশ দেন। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ দিলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, অবস্থানকারী (ইতিকাফকারী) এবং রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো। ’ -সূরা বাকারা: ১২৬
উল্লিখিত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কাবাকে নিজের ঘর হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাই প্রতিটি মুমিনের অন্তরই যেন সে ঘরটির সঙ্গে আধ্যাত্মিক সুতোয় বাঁধা। মুসলিম মাত্রই হৃদয়ের মণিকোঠায় পোষণ করেন এই পবিত্র ঘরে হাজিরা দেওয়ার আকুল মিনতি।
হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে বাইতুল্লাহকে পুনঃনির্মাণ করে তার শ্রমকে স্বার্থক করার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। আল্লাহতায়ালা হজরত ইবরাহিমকে (আ.) তার দোয়া কবুল করে নিদের্শ দিলেন, ‘আর হে (ইবরাহিম! তুমি) মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা দাও। তারা দূর-দূরান্ত থেকে তোমার কাছে আসবে হেঁটে। আসবে সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উষ্ট্রসমূহের পিঠে সওয়ার হয়ে। ’ -সূরা হজ: ২৭
এ আয়াতের তাফসিরে হজরত আবুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ইবরাহিম (আ.) পবিত্র কাবা শরিফ নির্মাণের পর আল্লাহকে বললেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার নির্দেশে বাইতুল্লাহকে নির্মাণ করেছি। অতপর আল্লাহ তাকে হজের ঘোষণা দিতে আদেশ দিলেন- তিনি বললেন, আমার আওয়াজ কী করে (অতদূর) পৌছবে? আল্লাহতায়ালা বললেন, তুমি ঘোষণা করে দাও। তোমার ঘোষণার আওয়াজ বিশ্ব মানবতার কানে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। হজরত ইবরাহিম (আ.) বললেন হে রব! ঘোষণায় কী বলব? আল্লাহতায়ালা বললেন, বলো- ‘হে মানবমন্ডলী! তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিতে এবং জান্নাতে পৌঁছাতে আল্লাহতায়ালা তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন। ’
হজরত ইবরাহিম (আ.) ঘোষণা দিলে আসমান ও জমিনের সবাই সে ঘোষণা শুনতে পায়। -তাফসিরে কুরতুবি: ১২/৩৭
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, হজরত ইবরাহিম (আ.) আবু কুবাইস পাহাড়ে উঠে নিজের দু’কানে আঙ্গুল দিয়ে সুউচ্চ কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, হে মানব সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন। তোমরা তোমাদের প্রভুর আহবানে সাড়া দাও। তখন পুরুষের ঔরসে ও নারীর গর্ভে যারা ছিল সবাই ‘লাব্বাইকা’ বলে সাড়া দিল। -তাফসিরে রুহুল মাআনি: ১৩/৪৮
বর্ণনান্তরে হজরত ইবরাহিম (আ.) সাফা পাহাড় অথবা মাকামে ইবরাহিমে দাঁড়িয়ে এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। হজরত সাইদ ইবনে জুবাইর (রা.) বলেন, হজের জন্য বিশ্বমানবতাকে আহবান করার পর পাহাড় ঝুঁকে পড়ে। সমস্ত দুনিয়ায় এ ঘোষণার আওয়াজ গুঞ্জরিত হয়। পিতার ঔরসে, মায়ের গর্ভে যারা ছিল তাদের কানেও আল্লাহতায়ালা সে শব্দ পৌঁছে দেন। পাথর, বৃক্ষরাজি এবং প্রত্যেক ওই ব্যক্তি যার হজ নসিব হবে সবাই সমস্বরে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ বলে ওঠে। -তাফসিরে ইবনে কাসির: ৫/৪১৪
মুফাসসির মুজাহিদ (রহ.) বলেন, অতএব যে লোক এ পর্যন্ত হজ করেছে সে অবশ্যই সেই আওয়াজ শুনেছিল এবং (লাব্বাইকা বলে) সাড়া দিয়েছিল। এ আহবান শুনে সাড়া দেয়নি এমন কোনো ব্যক্তি কিয়ামত পর্যন্ত হজ করবে না। যে ব্যক্তি সে আহবানে একবার সাড়া দিয়েছিল, সে জীবনে একবার হজ করবে, আর যে দুই বা ততোধিকবার সাড়া দিয়েছিল, সে সেই অনুযায়ী ততবার হজ করার সৌভাগ্য অর্জন করবে। -তাফসিরে কাবির, ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি: ১১/১০২
সেদিন হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর আজানের জবাব দেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল কি-না জানি না। তবু যতদিন লাব্বাইকের এই পবিত্র মিছিলে শরিক হয়ে আল্লাহর মেহমান হওয়ার ডাক না পড়বে, ততাদিন পতীক্ষায় প্রহর গুণতেই থাকব। হে মাওলা! তুমি আমাদের মনে আকুতিকে কবুল করো!
লেখক: খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ, বোর্ড বাজার, গাজীপুর
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৬
এমএইউ/
** এবার হজ পালনে যাচ্ছেন রেকর্ডসংখ্যক ১ লাখ ৫৬ হাজার ভারতীয়