রাজনৈতিক চাপ, ক্ষমতাসীন দলের একাংশের দাবী সত্ত্বেও বোরকা নিষিদ্ধ করবে না জার্মানি। গত সপ্তাহে বোরকা পরিধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করার কথা ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থমাস ডি মেইজিয়েরের (De Maiziere)।
জার্মান এই মন্ত্রী বলেন, ‘আপনি নিজে যা প্রত্যাখ্যান করবেন তার প্রতিটি জিনিসকে আপনি নিষিদ্ধ করতে পারেন না। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যেসব বিদেশি ক্রিমিনাল কর্মকাণ্ডে জড়াবে তাদেরকে যার যার দেশে ফেরত পাঠানো হবে। যারা তথাকথিত আইএসের সঙ্গে লড়াই করছে এমন ব্যক্তির জার্মান নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে। ’
জার্মানিতে বসবাসকারী বিদেশিদের সন্তান জন্ম নিলে তাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব দেওয়ার যে আইন আছে তা বাতিলের জন্যও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থমাস ডি মেইজিয়েরের কাছে জোরালো আবেদন উঠেছিল। এ আহ্বানও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বরং উগ্রপন্থিদের প্রতি সহমর্মিতা আছে এমন শরণার্থীদের বিরুদ্ধে দমননীতি চালু করেছেন। বলেছেন, ‘যে বিদেশি অপরাধ সংঘটিত করবে তাকেই দ্রুততার সঙ্গে জার্মানি থেকে বের করে দেওয়া হবে। ’
এর আগে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলো মার্কেলের ক্ষমতাসীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেট পার্টির (সিডিইউ) এমপি জেন্স স্প্যাহন বলেছিলেন, বোরকা নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এটা হবে বিশ্বের কাছে একটি সংকেত। তিনি ডাই ওয়েল্ট পত্রিকাকে বলেছিলেন, আমি জার্মানিতে আর বোরকা দেখতে চাই না। আমি বোরকাবিরোধী।
উল্লেখ্য, গত মাসে জার্মানিতে বেশ কয়েক দফা নৃশংস হামলা হয়। তারপর নির্বাচনের ধারায় প্রবেশ করছে দেশটি। এ অবস্থায় ভোটারের আস্থা ফেরাতে নতুন করে প্রচারণা শুরু করেছে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলো মার্কেল ও তার দল সিডিইউয়ের মিত্ররা। এরই মধ্যে বোরকা নিষিদ্ধের প্রস্তাব আসছে এমন রাজনৈতিক খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে বেশ উত্তেজনাও সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার পশ্চাৎধাবন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, তিনি এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেন না- যা রক্ষা করা যাবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আর কোনো হামলা হবে না এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারেন না। অটুট নিরাপত্তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেন না। আমাদের কাজ হলো তাকে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া। তিনি বলেন, আমাদের নতুন সীমাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে বিদেশি ক্রিমিনাল ও বিপজ্জনক ব্যক্তিদের তার দেশে ফেরত পাঠাতে বিধি কঠোর করা। ভবিষ্যতে যারা আশ্রয় চাইবেন তাদের সবার আবেদনপত্র জার্মানির অপরাধ বিভাগের পুলিশ যাচাই-বাছাই করবে।
উল্লেখ্য, ইসলামি বিধান মতে মোতাবেক বোরকা মহিলাদের জন্য একটি অবশ্য পরিধেয় পোশাক। যা পুরো মাথা এবং সমগ্র শরীর আচ্ছাদিত করে রাখে। জার্মানিতে খুব বেশি মুসলিম নারী বোরকা পরিধান করেন না। কিন্তু সেখানে পোশাক পরিচ্ছদের ওপর তেমন কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
এমনকি একটি সরকারি কমিটি ২০১২ সালে একটি প্রতিবেদনে বলেছিল, বোরকা এবং মুখমণ্ডল আড়াল করার পোশাক নিকাব নিষিদ্ধ করা হবে অসাংবিধানিক। যদিও অবশ্য ফ্রান্স, বেলজিয়াম এবং ইটালির কিছু শহরে বোরকা পরিধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৬
এমএইউ/