আমাদের মৃত আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও ঘনিষ্ঠজন, যারা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। তাদের কথা স্মরণ হয়, তাদের স্মৃতি আমাদের ব্যথিত করে।
ক্ষেত্রবিশেষ দেখা যায়, অনেকেই মৃতদের স্মরণে এমন কিছু অনর্থক কুসংস্কার কিংবা আচার-অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকে যা ইসলাম সমর্থন করে না। অথচ ইসলামি শরিয়তে মৃতদের স্মরণের সঠিক দিকনির্দেশনা রয়েছে। যার মধ্যে জীবিত ও মৃত সবারই জন্য রয়েছে উভয় জাহানের কল্যাণ। এর জন্য নেই কোনো নির্দিষ্ট দিবস বা সময়ের বাধ্যবাধকতা, না কোনো আচার-অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা বরং তা সর্বদাই আমলযোগ্য। নিম্নে এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো-
এক. মৃত ব্যক্তির ভালো কাজগুলো আলোচনা করা। হজরত ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো। -সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০০
অন্য বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে তোমরা (মুমিনগণ) ভালো মন্তব্য করবে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত। আর যার ব্যাপারে তোমরা খারাপ মন্তব্য করবে, তার ব্যাপারে জাহান্নামের ফয়সালা হয়ে যাবে। তোমরা (মুমিণগণ) হলে এই জমিনে আল্লাহতায়ালার সাক্ষী। -সহিহ বোখারি: ১৩৬৭
দুই. মৃত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ ও স্বজনদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হলো তাদের মৃত্যুর পর তাদের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। -সহিহ মুসলিম: ২৫৫২
হজরত আবু আসির মালিক ইবনে রবিয়া (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একদিন রাসূল (সা.)-এর মজলিশে বসা ছিলাম, এমতাবস্থায় বনু সালামা গোত্রের এক লোক এসে রাসূল (সা.)-কে আরজ করল, মা-বাবার মৃত্যুর পরও তাদের প্রতি সদাচরণের দায়িত্ব আমার ওপর রয়েছে কি না? রাসূল (সা.) ইরশাদ করলেন, হ্যাঁ! তাদের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করা, তাদের জীবদ্দশায় কৃত ওয়াদাগুলো পূরণ করা, তাদের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের বন্ধু-বান্ধবের সম্মান করা। -সুনানে আবু দাউদ: ৫১৪২
তিন. মৃতদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন নবী করিম (সা.) এক মৃত ব্যক্তির দাফন শেষে তার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে ইরশাদ করলেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। -সুনানে আবু দাউদ: ৩২২১
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যখন মানুষ মারা যায় তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমলের ফায়দা ভোগ করে- সদকায়ে জারিয়া, এমন ইলম যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং ওই সুসন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। -সহিহ মুসলিম: ১৬৩১
চার. নেক আমলের দ্বারা ঈসালে সওয়াব করা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের যে কেউ কোনো নফল দান সদকা করার সময় তার মা-বাবার জন্য এর সাওয়াব প্রেরণ করবে, তারা ওই সওয়াব ভোগ করবে। তবে এর দ্বারা দাতার সাওয়াবের অংশ কমানো হবে না। -আল মুজামুল আওসাত: ৭৭২৬
পাঁচ. পুরুষদের মাঝেমধ্যে মৃত প্রিয়জনদের কবর জিয়ারত করা। হজরত ইবনে মাসঊদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, আমি এর আগে তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, তবে এখন থেকে এর অনুমতি দিলাম, তোমরা কবর জিয়ারত করো। কেননা তা তোমাদের দুনিয়াবিমুখ করে এবং আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। -সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৭১
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৬
এমএইউ/