ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

অন্যের বিপদে এগিয়ে আসা সওয়াবের কাজ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৬
অন্যের বিপদে এগিয়ে আসা সওয়াবের কাজ ছবি: সংগৃহীত

প্রেম নিবেদনে ব্যর্থ হয়ে সিলেটের এমসি কলেজে প্রাঙ্গণে এক ছাত্রীকে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে আহত করেছে এক ছাত্রলীগ নেতা। গুরুতর আহত ছাত্রী খাদিজা বেগম ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসাধীন।

খাদিজা বেগমকে কোপানোর একটি ভিডিও ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। অবাক করার মতো বিষয় হলো, খাদিজাকে কোপানোর দৃশ্য ভিডিও করলেও বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি কেউ! এ কেমন নির্লিপ্ততা?

প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দূরে একজন মাটিতে পড়ে থাকা অন্যজনকে ক্রমাগত আঘাত করছেন। ভিডিওতে হামলাকারী এবং আক্রান্তকে পরিষ্কারভাবে শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

তবে কোপানোর পর হামলাকারী পালিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত জনতা তাকে ধাওয়া করে গণধোলাই শেষে পুলিশে সোপর্দ করে।

মোবাইল ফোনে ধারণ করা প্রকাশিত ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, দূর থেকে অনেকে ঘটনাটি দেখছিলেন এবং এক পর্যায়ে অনেকে ছুটোছুটি শুরু করে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে অনেকে মোবাইল ফোনে ভিডিও করলেও আক্রান্তকে রক্ষার জন্য কেউ এগিয়ে যায়নি।

আমরা মনে করি, খাদিজাকে কোপানোর সময় কেউ সাহস করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে, প্রতিরোধ করলে, হয়তো এতো বড় দুর্ঘটনা না-ও ঘটতে পারতো।

কারও বিপদে এমন নির্মোহ, নিষ্ক্রিয়তা ও নির্লিপ্ততা মানবিকতার পরিপন্থী। বাস্তবতা হলো, এ ধরনের ঘটনা ইদানীং অহরহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে অনেকেই জনসম্মুখে আক্রান্ত হয়েছেন। তখনও দেখেছি, মুমূর্ষু অবস্থায় কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি।

খাদিজার ঘটনায় নগরজীবনের ব্যক্তিকেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থার এক কঠিন এবং রূঢ় চিত্র যেন উঠে এলো। ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, মানুষের প্রতি মানুষের এহেন নির্লিপ্ততা কেন বাড়ছে?

প্রশ্ন হলো, বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের হামলা কিংবা দুর্ঘটনায় উপস্থিত মানুষের নির্লিপ্ততা ও নিষ্ক্রিয়তার কারণ কি? এটা কি শুধুই নিজেকে ঝামেলা থেকে রক্ষা করার জন্য, নাকি মানুষের মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়? এ কেমন মানসিকতা? তবে কি দিন দিন আমরা বোধহীন হয়ে যাচ্ছি? আমাদের মনুষ্যত্ব লোপ পাচ্ছে?

নির্লিপ্ততা প্রসঙ্গে অনেকে বলেন, নিজেরা পরবর্তীকালে ভোগান্তিতে পড়তে চান না বলেই তারা এসব বিষয় এড়িয়ে চলেন। কথা হলো, এ ধরনের ঘটনায় কাউকে বাঁচাতে বা উপকার করতে গেলে ঝামেলা পোহাতে হবে কেন? তাই বলে বিপদের সময় কি কারো সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসা যাবে না?

সমাজ বিশ্লেষকদের অভিমত হলো, এমন নির্মোহ নিষ্ক্রিয়তা ও নির্লিপ্ততা মানবিকতা পরিপন্থী। কোনো ধর্মই এমন মনোভাব সমর্থন করে না।

মানবতার ধর্ম ইসলাম অন্যের বিপদে এগিয়ে যাওয়াকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এটাকে সওয়াবের কাজ বলে ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে কোরআনে কারিম ও হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে।

অন্যদিকে এই উপমহাদেশের মানুষের বংশ পরম্পরায় অন্যের বিপদ-আপদে এগিয়ে আসার যে নজির রয়েছে সেটাও ইতিহাসের সোনালি অধ্যায়। এসব বিষয় আমাদের জন্য গর্বেরও বটে।

কিন্তু সম্প্রতি বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ও অযাচিত ঘটনা স্তম্ভিত করেছে দেশবাসীকে। সেই সঙ্গে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে- আক্রান্তদের সহায়তা কিংবা সহযোগিতা করতে কেউ এগিয়ে না আসার বিষয়টি।

আমরা মনে করি, একজন মানুষের স্বাভাবিক বিবেক ও মনুষ্যত্ববোধই পারে আরেকজন মানুষকে রক্ষা করতে। আমরা মনে-প্রাণে কামনা করি ও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, অন্যের বিপদে এগিয়ে আসার ধারা অব্যাহত থাকবে। কারণ মানুষ মানুষের জন্য। জীবনে এটা প্রমাণ করতে না পারলে সেটা অবশ্যই নিজের জন্য গ্লানিকর বিষয়।

মানছি, কোনো হামলার ঘটনা বা দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষের এগিয়ে যাওয়াটা ঐচ্ছিক বিষয়, কিন্তু মানবিকতার বিষয়টিকে তো আর এড়িয়ে যাওয়া যায় না।

এ ছাড়া মারাত্মক ধরনের অপরাধ ঘটতে দেখলে সেখানে সাধারণ মানুষেরও অধিকার আছে তাতে বাধা দেওয়ার। এই বোধটুকু সজাগ থাকলে অনেক অপরাধ কমে যাবে। সেক্ষেত্রে নৈতিক কারণে যারা বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করতে এগিয়ে যান, তারা যেন কোনো ধরনের উটকো ঝামেলা না পোহান, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

আরেকটি কথা, নিজেরা পরবর্তী সময়ে ভোগান্তিতে পড়তে চান না বলেই বেশিরভাগ মানুষ এসব বিষয় এড়িয়ে চলেন। কথা হলো, এ ধরনের ঘটনায় কাউকে বাঁচাতে বা উপকার করতে গেলে ঝামেলা পোহাতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা জরুরি। না হলে এমন নির্লিপ্ততার ধারালো ছুরির ফলা যে একদিন আমাকে-আপনাকে ছোবল দেবে না; সে নিশ্চয়তা কে দেবে?

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।