ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

ক্ষমাশীলতা মুমিনকে মহিমাম্বিত করে

মোহাম্মদ মাকছুদ উল্লাহ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৬
ক্ষমাশীলতা মুমিনকে মহিমাম্বিত করে ছবি: সংগৃহীত

জুলুম-অবিচার আর অত্যাচার-নির্যাতনে যখন কেউ অসহায়ত্বের প্রান্তসীমায় এসে যায়- তখন সে কি করবে? রাগে অধৈর্য হয়ে প্রতিশোধ পরায়ণতার পথে অগ্রসর হবে? ধৈর্যের বাঁধ অতিক্রম করে অভিশাপ দেবে? না, গালি-গালাজ করে মনের জ্বালা মেটাবে; কিংবা আত্মহুতি দেবে?

অধিকাংশ মানুষ এ ধরণের কিছু একটা করে। কিন্তু তাতে না জালেমের শিক্ষার কোনো সুযোগ আসে; না মজলুমের আত্মা তৃপ্তি পায়।

আর আল্লাহতায়ালাও এটা পছন্দ করেন না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন চান, মুমিন চারিত্রিক মহিমা ক্ষমার গুণে সুশোভিত হয়ে উঠুক। যার সৌরভে একদিন জালেমের আত্মোপব্ধির সুযোগ এনে দেবে; আর মজলুমের আত্মার তৃপ্তি তাকে সব ধরনের বেদনা থেকে মুক্তি দেবে।

ক্ষমার পথেই তো জান্নাতের মঞ্জিল খুব নিকটে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা লাভের জন্য প্রতিযোগিতা করো, আর প্রতিযোগিতা করো সেই জান্নাতের জন্যে; যার  বিশালতা আসমান-জমিনের বিশালতার সমান, যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্যে। (জান্নাতের উত্তরাধিকারি ভাগ্যবান তারা) যারা স্বচ্ছল কি অস্বচ্ছল সর্বাবস্থায় নিজেদের সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে আর যারা নিজেদের ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেয় (এটা সৎ মানুষের গুণ)। আর সৎ মানুষদেরকে সবসময় আল্লাহ ভালোবাসেন। -সূরা আল ইমরান: ১৩৩-১৩৪

ক্ষমা প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। ওই হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় দান করলে সম্পদ কমে না। আর ক্ষমার দ্বারা আল্লাহ বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন এবং যে আল্লাহর উদ্দেশে বিনয় অবলম্বন করে, আল্লাহতায়ালা তাকে সম্মানিত করেন। -সহিহ মুসলিম

হজরত রাসূলে কারিম (সা.) ছিলেন ক্ষমা ও উদারতার শ্রেষ্ঠ নমুনা। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে ক্ষমার মহৎ গুণটি যথার্থভাবে আয়ত্ত্ব করতে পেরেছিলেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) উম্মতে মুহাম্মদির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে তার জীবনে ক্ষমার গুণটি অধিক উজ্জ্বলতায় প্রতিভাত হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে একটি বিশেষ ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। একবার উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকার (রা.) বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া হয়েছিল। অপবাদ রটনায় যারা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলো তাদের একজন ছিল হজরত আবু বকর (রা.) এরই নিকটাত্মীয় হজরত মেসতাহ (রা.)। মেসতাহ ছিলেন খুব দরিদ্র। দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সংস্থানও তার ছিলো না। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) প্রতিমাসে তাকে খরচের জন্য নির্দিষ্ট হারে অনুদান দিতেন। নবী পত্নী এবং নিজের ঔরসজাত কন্যা হজরত আয়েশা সিদ্দিকার (রা.) বিরুদ্ধে অপবাদ রটনায় তার ভূমিকার কথা জানতে পেরে হজরত আবু বকর (রা.) তাকে অনুদান না দেওয়ার শপথ করেন এবং তা বন্ধ করে দেন।

তখন আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের আয়াত নাযিল করেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা দ্বীনি মর্যাদা ও পার্থিব প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন এ মর্মে শপথ না করে যে, তারা তাদের গরীব আত্মীয়-স্বজন, অভাবী এবং যারা আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করেছে তাদেরকে কোনো প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করবে না। বরং তাদের উচিত তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে দেয় এবং তাদের দোষত্রুটি উপেক্ষা করে; তোমরা কি চাও না যে আল্লাহতায়ালা তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিন; আল্লাহ তো ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। -সূরা আন নূর: ২২

লেখক: খতিব, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।