ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

বিস্ময়কর কিছু স্থানে নামাজ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৬
বিস্ময়কর কিছু স্থানে নামাজ ছবি: সংগৃহীত

নামাজের ও কাজের মর্যাদা সমান নয়। নামাজকে সব কাজের ওপরে রাখতে হবে। সবসময় নামাজকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সময়মতো নামাজ আদায়ের বিষয়ে পবিত্র কোরআন-হাদিসে প্রচুর বর্ণনা রয়েছে। 

নামাজ সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার হুকুম। তাই আগে নামাজ পরে কাজ- এটা ঈমানের দাবী।

নামাজের মর্যাদা অনেক ওপরে। নামাজের ও কাজের মর্যাদা সমান নয়। নামাজকে সব কাজের ওপরে রাখতে হবে। সবসময় নামাজকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সময়মতো নামাজ আদায়ের বিষয়ে পবিত্র কোরআন-হাদিসে প্রচুর বর্ণনা রয়েছে।  

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর নবী, কোন কাজটি জান্নাতের অতি নিকটবর্তী করে দেয়? তিনি বললেন, সময়মতো নামাজ পড়া। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর নবী, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর নবী, তারপর কোনটা? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। -সহিহ মুসলিম শরিফ

কিয়ামতের দিন প্রথম হিসাব হবে নামাজের। তাই নামাজের ব্যাপারে খুব সাবধান হতে হবে। আজান শুনে নামাজের জন্য জামাতে শরিক না হলে তার ঘরে আগুন লাগানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কিন্তু শিশুদের কথা ভেবে তা করেননি।

এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শপথ করে বলেন, আমার এরূপ ইচ্ছা হয় যে, আজানের পর কাউকে ইমাম করে নামাজ আরম্ভ করার আদেশ দেই এবং আমি ওই সব লোকের বাড়ি খুঁজে বের করি যারা নামাজের জামাতে শরিক হয়নি এবং কারও দ্বারা জ্বালানি কাঠ আনিয়ে ওই ব্যক্তিদের ঘরে থাকা অবস্থায় তাদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেই। -সহিহ বোখারি শরিফ

ঈমানের পরেই নামাজের স্থান। নামাজ হলো- আল্লাহপাকের সামনে হাজির হওয়া, তার ডাকে সাড়া দেওয়া। ঈমান আছে কি নাই তার প্রমাণ দেওয়া। নামাজ খোদাপ্রেমের অপূর্ব নিদর্শন। যে ব্যক্তি নামাজ কায়েম করে সে গোনাহ থেকে মুক্ত থাকে।  

নামাজ কায়েম করার অর্থ এই যে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যেভাবে নামাজ পড়েছেন এবং যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন সেভাবে নামাজ আদায় করা। অর্থাৎ নামাজের বাহ্যিক রীতিনীতি ও অভ্যন্তরীণ রীতিনীতি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা।  

এভাবে একাগ্রচিত্তে নামাজ আদায় করলে সে ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে গোনাহমুক্ত থাকার তওফিকপ্রাপ্ত হয়। নামাজের এমন গুরুত্ব অনুধাবন করে বিশ্বের নানাপ্রান্তে থাকা মুমিন-মুসলমানরা নামাজ অাদায় করে আসছে। আজকের আলোচনায় বিস্ময়কর কিছু স্থানে নামাজের দৃশ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।

এক আমেরিকান নারী লাইব্রেরির নিরিবিলি এক প্রান্তে নামাজ আদায় করছেন। দেশটিতে এখন এমন দৃশ্য মাঝে-মধ্যেই দেখা যায়।  

একজন নারী বিয়ের পোশাকেই গাড়ীতে নামাজ আদায় করে নিচ্ছেন। এমন পোশাক ও পরিবেশে নামাজ আদায়ের দৃশ্য বিরল। কিন্তু হৃদয়মনে নামাজের গুরুত্ব জাগ্রত থাকলে এটা সম্ভব। এ ছবি তারই প্রমাণ।

এই দৃশ্যটি নিউ ইয়র্ক সিটির মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্টের। সেখানেও দেখা যাচ্ছে একজন নারী একাগ্রচিত্তে প্রার্থনা করছেন।

সূর্যাস্তের মুহূর্তে পর্যটকরা মুগ্ধনয়নে দেখতে ব্যস্ত সন্ধ্যা নামার দৃশ্য। কিন্তু পাকিস্তান-চীন সীমান্ত এলাকায় এই পর্যটক স্রষ্টার ইবাদতে মগ্ন।

এই যুবক ফ্লোরিডার একটি বাস্কেটবল কোর্টে প্রার্থনা করছেন। পোশাকটি ছোট হলেও এটা ফরজ সীমানা অতিক্রম করেনি।  


অন্তরে প্রেম ও আল্লাহর প্রতি অগাধ আস্থা থাকলে আপনি কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন সেটা বিবেচ্য নয়। সময় হয়েছে, নামাজ আদায় করতে হবে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কলোরাডোর পাথুরে পর্বতমালায় নামাজরত এক পর্যটককে।

এই ছবিটি বাংলাদেশের। সাদামাটা এই ছবির বিস্তৃতি ব্যাপক। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, নামাজের আনুষ্ঠানিক পোশাক গায়ে নেই, মাথায় টুপি নেই। তার পরও একাগ্রচিত্তে, আস্থা নিয়ে নামাজ আদায় করেছেন নৌকায় বসেই।  

সোমালিয়ার এলমেডু (Al Madow) পর্বতমালায় টহলরত এক সৈনিক নামাজ আদায় করছেন।  

জাপানের আওকিগাহারা (Aokigahara) বন। জাপানের ফুজি পাহাড়ের কাছে অবস্থিত এ বনে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ আত্মহত্যা করেন। বনের প্রবেশ পথে সুইসাইড প্রিভেনশন অ্যাসোসিয়েশন লিখে রেখেছে, ‘তোমার জীবন পিতা-মাতার কাছ থেকে মূল্যবান উপহার। তোমার পরিবার ও ভাইবোনের কথা একটু ভাবো। তাদের সঙ্গে তোমার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করো। দয়া করে আত্মহত্যা করার আগে পুলিশের পরামর্শ নাও। ’ সেই নির্জন বনে এক মুসলিম নারী নামাজ আদায় করছেন।  

সুয়েজ খাল মিসরের সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত একটি কৃত্রিম সামুদ্রিক খাল। এটি ভূমধ্যসাগরকে লোহিত সাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। দশ বছর ধরে খননের পর পথটি ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। সেই সুয়েজ খালের ওপর পোর্ট সাইদে নামাজরত একজন পুরুষ।  

উইন্ডসর কানাডার সর্বদক্ষিণের নগরী। যা অন্টারিও প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং জনবহুল কুইবেক সিটি-উইন্ডসর করিডোর অঞ্চলের পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থিত। সেই উইন্ডসরের এক রেঁস্তোরায় প্রার্থনারত এক মুসলমান।  

এ ছাড়া আরও অবিশ্বাস্য নানা স্থানে শীতকালীন নীরবতা, অবিরাম তুষার, প্রচণ্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে গ্যাস স্টেশন, খালি শ্রেণিকক্ষ, শপিংমলের ড্রেসিং রুম, গ্রন্থাগার, হাইওয়ে, পার্ক ও সমুদ্র সৈকতে নামাজ আদায়ের দৃশ্য দেখা গেছে। এভাবে মুসলমানদের ইবাদতের দৃশ্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর শক্তি সম্পর্কে। যে শক্তির প্রভাব ও সংমিশ্রণ মনের রাজ্যে তৈরি করে শান্তির বাতাবরণ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।