ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

মৃত্যুপথযাত্রীর জন্য করণীয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৬
মৃত্যুপথযাত্রীর জন্য করণীয় ছবি: সংগৃহীত

মৃত্যু মানব জীবনের পরিসমাপ্তির নাম। মৃত্যু অবধারিত বিষয়। দুনিয়ার প্রত্যেককেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। কিন্তু সেই সময়টা কখন এসে হাজির হবে- তা অজানা। মৃত্যু থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই। হঠাৎ মৃত্যু ছাড়া অনেকেই শয্যাশায়ী থেকে, রোগভোগে মৃত্যুবরণ করেন।

মৃত্যু মানব জীবনের পরিসমাপ্তির নাম। মৃত্যু অবধারিত বিষয়।

দুনিয়ার প্রত্যেককেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। কিন্তু সেই সময়টা কখন এসে হাজির হবে- তা অজানা। মৃত্যু থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই। হঠাৎ মৃত্যু ছাড়া অনেকেই শয্যাশায়ী থেকে, রোগভোগে মৃত্যুবরণ করেন। এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অর্থাৎ মৃত্যু পথযাত্রীর শয্যায়ও রয়েছে বিশেষ কিছু আমল। হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছেন।

হজরত মুয়াজ (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তির শেষ কথা- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ হবে (অর্থাৎ কালেমা পড়তে পড়তে যার মৃত্যু হবে), সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ’ -সুনানে আবু দাঊদ: ৩১১৬

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের মুমূর্ষু ব্যক্তিদেরকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ স্মরণ করিয়ে দাও। -সহিহ মুসলিম: ৯১৬

মানুষের জন্য ভালো-মন্দ ও ন্যায়-অন্যায় নির্ধারিত করে দেওয়ার পর আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ভালো-মন্দ ও ন্যায়-অন্যায়ের ভিত্তিতে মানুষের বিচার হবে পরকালে। ভালো চরিত্রের লোক সেখানে হবে পুরস্কৃত এবং লাভ করবে চিরন্তন সুখী জীবন।
পক্ষান্তরে মন্দ চরিত্রের লোকের পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। এ এক অনিবার্য সত্য যা অস্বীকার করার কোনো ন্যায়সংগত কারণ নেই।

এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত উম্মে সালামা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আবু সালামার নিকট গেলেন। তখন তার (আত্মা বের হওয়ার পর) চোখ খোলা ছিল। নবী করিম (সা.) তা বন্ধ করার পর বললেন, যখন (কারও) প্রাণ নিয়ে নেওয়া হয়, তখন চোখ তার দিকে তাকিয়ে থাকে। (এ কথা শুনে) তার পরিবারের কিছু লোক চিৎকার করে কাঁদতে আর‎ম্ভ করল। নবী (সা.) বললেন, তোমরা নিজেদের আত্মার জন্য মঙ্গলের দোয়া করো। কেননা, ফেরেশতারা তোমাদের কথার ওপর আমিন বলেন। এর পর তিনি এই দোয়া বললেন-
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লি আবি সালামা, (এখানে মৃতের নাম হবে) ওয়ারফা’ দারাজাতাহু ফিল মাহদিইয়্যিন, ওয়াখলুফহু ফি আক্বিবিহি ফিল গা-বিরিন, ওয়াগফির লানা ওয়ালাহু ইয়া রাব্বাল আলামীন- ওয়াফসাহ লাহু ফি ক্বাবরিহি ওয়ানাওয়িরলাহু ফীহ।
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি (অমুককে) মাফ করে দাও এবং হেদায়াতপ্রাপ্তদের দলে তার মর্যাদা উন্নত করো, অবশিষ্টদের মধ্যে তার পশ্চাতে উত্তরাধিকারী দাও। আমাদেরকে এবং তাকে মার্জনা করে দাও হে বিশ্বজগতের প্রতিপালক! তার কবরকে প্রশস্ত করো এবং তার জন্য কবরকে আলোকিত করো। -সহিহ মুসলিম: ৯২০

হজরত উম্মে সালামা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পীড়িত অথবা মৃতের নিকট উপস্থিত হলে ভালো কথা বলো। কেননা, ফেরেশতারা আমাদের কথায় ‘আমীন’ বলেন। (উম্মে সালামা) বলেন, এর পর যখন (আমার স্বামী) আবু সালামা মারা গেলেন, তখন আমি নবী করিম (সা.)-এর নিকট এসে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আবু সালামা মারা গেছেন। (সুতরাং আমি এখন কী বলব?)’ তিনি বললেন, তুমি এই দোয়া বলো-
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাগফির লি ওয়ালাহু, ওয়াআক্বিবনি মিনহু উক্ববা হাসানা। ’
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ও তাকে মার্জনা করো এবং আমাকে তার চেয়ে উত্তম বিনিময় প্রদান করো।  
সুতরাং আমি তা বললাম, ফলে মহান আল্লাহ আমাকে তার চেয়ে উত্তম বিনিময় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (স্বামীরূপে) প্রদান করলেন। ’ -সহিহ মুসলিম: ৯১৯

অতীত জীবনে অনেক মানুষ সম্পদশালী, ক্ষমতাশালী ছিলো- তারা আজ কবরবাসী। এক সময় আমরা ছোট ছিলাম, ধীরে ধীরে বয়স বাড়ছে। আমাদেরও এক সময় কবর জগতের বাসিন্দা হতে হবে। এরপর রয়েছে অনন্তকালের এক মহাজীবন। কবর জীবন ও আখেরাতের জীবন সম্পর্কে ভাবনা-চিন্তা যার মাথায় সর্বদা বিরাজমান থাকে সে সফলকাম। আর যদি মরীচিকাময় এই পৃথিবীর পেছনে পড়ে মৃত্যু ও আখেরাতের জীবনের কথা ভুলে বসে থাকে, তাহলে তার জীবন দুর্ভাগ্যে ভরা।

ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- মৃত্যু ও আখেরাতের স্মরণই পারে মানুষকে প্রকৃত মানুষ বানাতে এবং পশু ও তার মধ্যকার ব্যবধান ফুটিয়ে তুলতে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আনন্দনাশক বস্তু অর্থাৎ মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করো। –সুনানে তিরমিজি: ২৩০৬

মৃত্যুর স্মরণ এমন একটি বিষয়- যা অন্তর থেকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাসিতার চিন্তা দূর করে দেয়, আত্মীয়-স্বজন, সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদের অযাচিত আসক্তি নষ্ট করে দেয়। সুস্থ বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ মাত্রই মৃত্যুর চিন্তায় বিভোর থাকে। যারা মৃত্যুর চিন্তা করে না, দুনিয়া নিয়ে পড়ে থাকে, তাদের বুদ্ধিকে সুস্থ বলা যায় কিভাবে? বন্ধু-বান্ধব, স্ত্রী-সন্তান কেউই কবরে সওয়াল-জওয়াবের সময় পাশে থাকবে না। বিষয়টি মাথায় রেখে দুনিয়ার জীবনে পথচলা দরকার। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।