ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

কোরআন সুমিষ্ট ও সুললিত কণ্ঠে তেলাওয়াত করা উচিত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৬
কোরআন সুমিষ্ট ও সুললিত কণ্ঠে তেলাওয়াত করা উচিত ছবি: সংগৃহীত

হাদিস শরিফে আছে, ‘যে কোরআনের একটি হরফ উচ্চারণ করবে, সে দশ নেকি পাবে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এটাও বলে দিয়েছেন, ‘আমি বলি না আলিফ-লাম-মিম একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ ও মিম একটি হরফ।’

হাদিস শরিফে আছে, ‘যে কোরআনের একটি হরফ উচ্চারণ করবে, সে দশ নেকি পাবে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এটাও বলে দিয়েছেন, ‘আমি বলি না আলিফ-লাম-মিম একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ ও মিম একটি হরফ।

কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, আমরা এত বড় সওয়াবের একটি ইবাদতকে গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করি না। কোরআন তেলাওয়াতের সাধারণ নিয়মাবলি ও আদবের প্রতি লক্ষ্য করি না। কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত পূর্ণ আদবের সঙ্গে, আল্লাহতায়ালাকে হাজির-নাজির জেনে এবং কোরআনে কারিম তেলাওয়াতের যে নিয়মাবলি রয়েছে- তার প্রতি লক্ষ রেখে।

কোরআনে কারিমের সূরা মুজ্জাম্মিলের ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবী! আপনি কোরআন তেলাওয়াত করুন স্পষ্ট উচ্চারণে, ধীরে ধীরে। ’ এই আয়াতে আরবি ‘তারতিল’ শব্দটির উল্লেখ আছে। তারতিল অর্থ হলো- অন্তর্নিহিত অর্থের প্রতি খেয়াল করে, স্পষ্ট উচ্চারণে ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করা।

ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত যে, খুব দ্রুত কোরআন তেলাওয়াত করা; যাতে উচ্চারণ বিঘ্নিত হয়- এটা মাকরুহ। কয়েকটি কারণে তারতিলের সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াত করা মুস্তাহাব। যেমন- 

ক. তারতিলের সঙ্গে তেলাওয়াত করা হলে কোরআনের বিষয়গুলোর প্রতি মনোনিবেশ করা যায়।
খ. আল্লাহর কালামের প্রতি অধিক সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
গ. অন্তরে অধিক ক্রিয়া সৃষ্টি হয়।  

আল্লামা জারকাশি (রহ.) বলেন, পরিপূর্ণ তারতিল মানে কোরআনের শব্দগুলো ভরাট উচ্চারণে পাঠ করা এবং হরফগুলোকে স্পষ্ট করে উচ্চারণ করা। অন্যথায় এক হরফ আরেক হরফের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে। কারও কারও মতে, এটা হলো- তারতিলের সর্বনিম্ন মাত্রা। পরিপূর্ণ তারতিল হলো- কোরআন বর্ণিত বিষয়বস্তুর বর্ণনাভঙ্গির প্রতি লক্ষ রেখে তেলাওয়াত করা।  

ইমাম নববী (রহ.) তার লিখিত কিতাব আত তিবইয়ানে বলেন, ‘উচিত হলো- কোরআনকে তারতিলের সঙ্গে পড়া। ওলামায়ে কেরাম তারতিল মোস্তাহাব হওয়ার ওপর ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, হে নবী! আপনি কোরআন তেলাওয়াত করুন স্পষ্ট উচ্চারণে, ধীরে ধীরে।

হজরত উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি নবীজীর তেলাওয়াতের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে- তার তেলাওয়াত ছিল- ‘প্রতিটি হরফ পৃথক পৃথকভাবে উচ্চারিত’ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আবু দাউদ সুনানে আবু দাউদ শরিফে।  

ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, তেলাওয়াতে অর্থ অনুধাবনের জন্য তারতিল মুস্তাহাব।  

কোরআন যথাসাধ্য সুমিষ্ট ও সুললিত কণ্ঠে তেলাওয়াত করা উচিত। সুন্দর কণ্ঠে তেলাওয়াতের প্রতি ইসলামি শরিয়ত গুরুত্ব দিয়েছে এবং তা সুন্নত। এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘তোমরা শ্রুতিমধুর আওয়াজে কোরআন তেলাওয়াত করো। ’ -সুনানে আবু দাউদ: ১৪৬৮

সুন্দর আওয়াজে কোরআন তেলাওয়াত সম্পর্কে অনেক সহিহ হাদিস রয়েছে। সুতরাং তেলাওয়াতকারী যদি সুন্দর আওয়াজের অধিকারী না-ও হয়, তবুও যথাসম্ভব সুন্দর করার চেষ্টা করবে। তবে সুন্দর করতে গিয়ে দৃষ্টিকটু পর্যায়ের টানাটানি করবে না।  

কোরআন সুর করে তেলাওয়াত করা, যদি তাতে উচ্চারণ-বিকৃতি না ঘটে; তবে তাতে আপত্তির কিছু নেই। আর উচ্চারণ-বিকৃতি ঘটলে নাজায়েজ।  

সুতরাং কোরআনকে তারতিলের সঙ্গে ও সুন্দর আওয়াজে পড়া সুন্নত। আমাদের দেশে তারাবির নামাজে যেভাবে দ্রুত তেলাওয়াত করা তা কাম্য নয়। কোরআন এত দ্রুত পাড়া যাবে না, আবার খুব ধীরেও পড়া যাবে না; যাতে করে মুসল্লিদের কষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে হাফেজরা বায়তুল্লাহ শরিফ ও মসজিদে নববীর তেলাওয়াতের অনুকরণ করতে পারেন।

অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায়, তারতিলের সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াত আর দ্রুততার সঙ্গে তেলাওয়াতের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।