সিটি মসজিদ (কোটা কিনাবালু) থেকে: পানির ওপর ভেসে আকাশের গায়ে যেন হেলান দিয়ে আছে মসজিদটা। নিস্তরঙ্গ পানির বুকে তার গম্বুজের ছায়া।
পেছনে কোটা কিনাবালু-ওয়ান বোর্নিও রোডে সাঁই সাঁই গাড়ি ছুটছে। তার আড়ালে চাপা পড়েছে চীন সাগরের জোয়ারের গর্জন। তবে সাগর ছুঁয়ে আসা বাতাস এসে শরীর জুড়িয়ে দিচ্ছে এখানেও। চাইলে কয়েক লাফে রাস্তা পার হয়ে পা চুবিয়ে বসে থাকা যায় সাগরের পানিতে। অথবা গাছের ছায়ায় বসে জিরিয়ে নেওয়া যায় খানিকটা। হেঁটে বেড়ানো যায় গাছের সঙ্গে মিলিয়ে সবুজ রঙ করা ওয়াকওয়েতে। সাগর পাড়ে বসলে আরও সুন্দর হয়ে চোখের সামনে ফুটে থাকে মসজিদের অবয়ব।
অনেকটা অর্ধবৃত্তাকারে শুয়ে থাকা সাগরের ওই অংশটার নাম লিকাস বে। এ জায়গাটার নামও লিকাস। বোর্নিও দ্বীপে পূর্ব মালয়েশিয়ার সাবাহ প্রদেশের রাজধানী কোটা কিনাবালু থেকে এখানে আসতে মিনিট পনেরোর বেশি সময় লাগবে না। সিটি মসজিদ নামে শহরের সবচেয়ে বড় এই মসজিদটা শহর থেকে একটু দূরেই গড়েছে এরা।
পৌনে তিন একর জায়গার ওপরে গড়ে তোলা এই মসজিদ সমসাময়িক ইসলামী স্থাপত্যের এক অনন্য নজির বটে। অনেকটা মদিনার নবাবী মসজিদের আদলে গড়া। এটাকে ভাসমান মসজিদ হিসেবেও চিনে থাকেন মানুষ।
এক সঙ্গে ৯ থেকে ১২ হাজার মুসুল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ভাসমান মসজিদটিতে। এই মসজিদ কমপ্লেক্সে কার্যক্রম চলে ৩টি মাদ্রাসার। এটাকে গোটা মালয়েশিয়ারই সবচেয়ে সুন্দর মসজিদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এ মসজিদ শুধু বাইরে থেকেই সুন্দর নয়। এর ভেতরটাও বেশ সাজানো গোছানো। বাংলাদেশের মতো জুতা চুরির ভয় নেই এখানে। মূল কম্পাউন্ডে তথ্য কেন্দ্র আর ফার্স্ট ফুড কর্নার দেখা গেলো।
মসজিদে প্রবেশ মুখে বিনে পয়সায় পানি পানের অটো মেশিন, ব্যাংকের এটিএম বুথ। গোটা কয়েক মেসেজ চেয়ারও সাজিয়ে রাখা। বিপরীতে আতর সুরমার পসরা। আছে কোরআন শরীফ ও কোরআনদানিসহ বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তক। নানা আকারের খেজুরের প্যাকেটও আছে একপাশে। আছে মিসওয়াক, দাঁতের খিলান।
ঘরের ভেতরে ঘর, তার ভেতরে ঘর স্টাইলে মসজিদের মূল ভবন গড়া। তাই একের পর এক দরোজা পেরিয়ে এগুতে হয় সামনে। প্রতি দরজার দু’পাশে এলসিডি মনিটর। তাতে খুৎবা আর বয়ান প্রচারের ব্যবস্থা।
মাঝে মাঝে গোলাকার স্তম্ভ ঘিরে গড়া বৃত্তাকার র্যাকে কোরআনসহ ধর্মীয় পুস্তক সাজিয়ে রাখা। মিহরাব আর মিম্বরে নকশাখচিত কারুকাজ। সামনের মূল অংশটার ওপরে একটাই গম্বুজ। তার নিচে সুদৃশ্য প্যানেল। পেছনের লাগোয়া ছাদের চার কোণায় চারটি মিনার। দূর থেকে মনেহয় গম্বুজটাকে ঘিরে রেখেছে মিনারগুলো।
শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত মসজিদটি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখা হয়। কোটা কিনাবালু শহরে হোটেল সাংগ্রিলা এর সামনে থেকে ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া সাবাহগামী ৫এ নম্বর বাসে উঠে নামতে হয় মসজিদের সামনের রাস্তায়। সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ বাস চলে। পাদাঙ মারদেকার সামনে থেকে ছাড়ে ওয়ান বোর্নিওগামী এসি বাস। উভয় বাসে ভাড়া নেয় মাত্র ১ রিঙ্গিত (১ রিঙ্গিতে ১৯ টাকা) করে।
এছাড়া ১২ থেকে ১৫ রিঙ্গিতে ট্যাক্সি ভাড়া করে আসা যায় এখানে। তার মানে ট্যাক্সিতে আসতে চাইলে আসা যাওয়ায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ রিঙ্গিত খরচ হবে।
মসজিদ পরিদর্শন শেষে দক্ষিণের রাস্তায় দাঁড়ালেই পাওয়া যাবে কোটা কিনাবালুগামী ফিরতি বাস। ভাড়া ওই ১ রিঙ্গিতই। মালয় উপদ্বীপ থেকে দক্ষিণ চীন সাগরের হাজার কিলোমিটার জলপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশিরা এখনও এখানে তেমন একটা আসতে শুরু করেনি।
আরও পড়ুন....
** প্রলয় নৃত্যে হতবাক দর্শক
** নরমুণ্ডু শিকারী মুরুত গাঁওয়ে
** মুসলিম বাজাউরাই বিত্তশালী বোর্নিওতে
** কলসির ভেতর লুনদায়েহ কবর
** লঙহাউজের রুঙ্গুস রাণী
** বনের ভেতর দুসুন গাঁও
** এক বাজারেই পুরো বোর্নিও
** বোর্নিওতে কী পেতে পারে বাংলাদেশ
** সুলু সাগর তীরের হেরিটেজ ট্রেইলে
** সূর্য ভাল্লুকের সঙ্গে লুকোচুরি
** ওরাংওটাং এর সঙ্গে দোস্তি
** অচেনা শহরের আলোকিত মানুষ
** সাড়ে ৫ হাজার ফুট উঁচু রাস্তা পেরিয়ে
** সাত ঘণ্টাতেই শেষ রাজধানী চক্কর
** সিগনাল হিলে আকাশ ভাঙা বৃষ্টি
** চীন সাগরে মেঘ-সুরুযের যুদ্ধ
** মালয় তরুণীর বিষাদমাখা রাতে
** জিভে জল আনা বাহারি সি-ফুড
** চীন সাগর পেরিয়ে ওরাংওটাংদের দেশে
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৬
জেডএম/জিপি/টিআই