আল্লাহতায়ালার আদেশ মেনে চলা ও তার নিষিদ্ধ বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকতে চাইলে একজন মুসলিমকে যে বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগী হওয়া উচিৎ তা হলো- তার প্রাত্যহিক রুটিন।
একজন মুসলিম কখন ঘুম থেকে উঠবে, রাতে কখন বিছানায় যাবে; এ সব বিষয়ে ইসলামের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে এক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, হে আল্লাহ! আপনি দিনের অগ্রভাগে আমার উম্মতের জন্য বরকত দিন। এ ছাড়া তিনি যখন কোনো ছোট বাহিনী কিংবা বড় দলকে অভিযানে পাঠাতেন, তাদের দিনের অগ্রভাগে পাঠাতেন।
এই হাদিসের বর্ণণাকারী সাখর ছিলেন ব্যবসায়ী। তিনি দিনের প্রথমভাগ থেকে ব্যবসা পরিচালনা করতেন, ফলে তিনি ধনাঢ্য হয়ে ওঠেন এবং তার সম্পদ বৃদ্ধি পায়।
বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়, এই উম্মতের কল্যাণ নিহিত রয়েছে দিনের অগ্রভাগে। অতএব ফজরের নামাজের পর না ঘুমিয়ে জিকিরে মশগুল থাকা এবং সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পর দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে কাজে নেমে পড়া মুসলিমদের জন্য বরকত তথা কল্যাণ বৃদ্ধি ও স্থায়ীত্বের কারণ। আর যে ফজরের নামাজে সঙ্গে সঙ্গেই দিনের শুরু করতে চায়, তাকে রাতে আগেভাগেই বিছানায় যেতে হবে।
এ জন্য আল্লাহর রাসূল (সা.) এশার নামাজের পর কথাবার্তা বলা পছন্দ করতেন না। তিনি ও তার সাহাবিরা এশার নামাজের পরপর রাতের অগ্রভাগে বিছানায় যেতেন, যেন শেষরাতে জেগে উঠে তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারেন; অথবা অন্ততপক্ষে যেন ফজরের নামাজের সময় সতেজ দেহমন নিয়ে জেগে উঠতে পারেন।
এ বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এশা বিলম্বিত করাকে পছন্দ করতেন, ...আর তিনি এর পূর্বে ঘুমকে এবং এর পরে কথাবার্তাকে অপছন্দ করতেন। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
বর্তমানে অনেক মুসলিম পরিবারেই এর বিপরীত অভ্যাস দেখা যায়। অনেকেই গভীর রাত পর্যন্ত রাত জাগরণে অভ্যস্ত। তাদের অনেকেই ফজরের নামাজ ঘুমিয়ে পার করে দেন। অনেকে রাত জেগে টেলিভিশন দেখে, ইন্টারনেটে ব্রাউজ করে কিংবা গল্পগুজব করে সময় কাটান। আর এগুলোর মাধ্যমে তারা বিভিন্ন ধরনের গোনাহে লিপ্ত হন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
অনেক ছাত্রদের ধারণা হলো, রাত জেগে লেখাপড়া করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত। কেউ রাতে যথেষ্ট ঘুমিয়ে ভোরে উঠে সতেজ দেহ-মন নিয়ে দু’ঘন্টায় যতটুকু পড়ালেখা করতে পারবে, তা রাত জেগে চার ঘন্টা লেখাপড়ার সমান।
অনেকে অভিযোগ করেন, রাত্রি জাগরণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ অভ্যাস পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না।
এই অভ্যাস পরিবর্তনের সহজ উপায় আছে। কষ্ট করে কয়েকদিন ফজরের সময় ঘুম থেকে জেগে ওঠা এবং ফজরের নামাজের পর আর বিছানায় না যাওয়া। এর অনুশীলন প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও দ্রুতই তা অভ্যাসে পরিণত হবে।
ফজরের পর ঘুম তাড়িয়ে রাখার জন্য প্রথমদিকে কিছু খেলাধুলা বা শারীরিক পরিশ্রম করা যেতে পারে। প্রয়োজনে অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য ছুটির সময়কে বেছে নেওয়া যেতে পারে। যেন তা করতে গিয়ে কাজের কোনো ক্ষতি না হয়।
দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে আরও থাকতে পারে দিনের শেষভাগে খেলাধুলা ও শরীরচর্চা। সাহাবিরা দিনের শেষভাগে এমনকি মাগরিবের নামাজ আদায় করেও তীর নিক্ষেপ চর্চা করতেন।
দিনের শেষভাগে কিছুটা শরীর চর্চা, হাঁটা বা খেলাধুলা রাতের ঘুমকে গভীর করতে সহায়তা করে।
এ ছাড়া দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তো আছেই। যার প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য।
দৈনন্দিন রুটিনে মধ্যে আরও থাকা দরকার, নিয়মিত দ্বীনশিক্ষা ও কোরআন চর্চা। হঠাৎ বেশি পরিমাণে কোনো আমল করার চেয়ে অল্প হলেও নিয়মিত আমল করা অধিক উপকারী এবং আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়।
আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় সে সব আমল, যা অল্প হলেও নিয়মিত করা হয়। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
তেমনি দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে থাকা উচিৎ- নিকটাত্মীয়, বিশেষভাবে মা-বাবার খোঁজখবর নেওয়া, তাদের প্রয়োজন পূরণ করা। এ ছাড়া স্ত্রী এবং সন্তানদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে সময় বরাদ্দ থাকা দরকার।
এ সব দিকনির্দেশনা মেনে প্রাত্যহিক রুটিন মোতাবেক জীবন পরিচালনা করলে সহজেই যাবতীয় পাপাচার থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। সেই সঙ্গে আল্লাহতায়ালার আনুগত্য করা তার জন্য হয় সহজতর।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৬
এমএইউ/