পরিবারের সূচনা হয় একজন নারী ও একজন পুরুষের বিয়ের মাধ্যমে। বিয়ে একজোড়া নারী-পুরুষকে পরিচিত করে দেয় স্বামী ও স্ত্রী হিসেবে।
অন্য এক হাদিসে পাওয়া যায় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বিয়ে করা আমার সুন্নত, যে আমার সুন্নত বর্জন করবে সে আমার দলভুক্ত নয়। ’
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যখন কোনো বান্দা বিয়ে করে তখন সে অর্ধেক দীন পূর্ণ করে আর অবশিষ্ট অর্ধেকের ব্যাপারে সে আল্লাহকে ভয় করুক। ’
বিয়ে একটি ধর্মীয় নির্দেশ। এ নির্দেশ পালনের মাধ্যমে একটি বন্ধন সামাজিক রূপ গ্রহণ করে। এই বন্ধনের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এ অধিকার পারস্পারিক দয়া ভালোবাসা ও সাহচার্যের। মানুষ একান্তে ও নিভৃতে ব্যক্তিগত কিছু পরিচর্যার প্রয়োজন অনুভব করে। স্বামী-স্ত্রী সেই একান্ত নিবিড় নিভৃতে পরিচর্যারও সহযোগী হয়ে ওঠতে পারে। এভাবে শুরু হয় দাম্পত্য জীবন।
এর পর সাধারণ নিয়মে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সন্তান-সন্তুতির লালন-পালন ও শিক্ষাদানের দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকে। তাই পরিবারকে একটি প্রতিষ্ঠানও বলা যায়। এটিই মানব ইতিহাসের প্রথম প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান সভ্যতার প্রত্যেক যুগে এবং প্রতিটি সমাজে বিদ্যমান।
প্রত্যেকটি পরিবার তার সদস্যদের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে থাকে এমনকি পরিবারভুক্ত সদস্যদের চরিত্র গঠন হয়ে থাকে পরিবার থেকে। সন্তান পরিবার থেকে শিখতে পারে আদব-কায়দা, শ্রদ্ধাবোধ, দায়িত্ববোধ, নীতি-নৈতিকতাবোধ প্রভৃতি মানবজীবনের মৌলিক আদর্শগুলো।
ব্যক্তি তার জীবনকে যেভাবে দেখতে ইচ্ছুক সেটি হলো- তার জীবনদর্শন। অর্থাৎ জীবন যেভাবে চললে একজন ব্যক্তির কাছে ভালো মনে হয় সেটিই সেই ব্যক্তির জীবন দর্শন। ব্যক্তিভেদে জীবনদর্শনও ভিন্ন হতে পারে। কেউ হয়তো মনে করতে পারেন বাড়ি-গাড়ি, ধনসম্পদ টাকা-পয়সা ইবাদতবন্দেগি এসবের কোনো কিছুরই দরকার নেই। কোনো রকমে খেয়েপরে জীবন চললেই হলো- যেমন লালন আখড়ার বাউলদের জীবন; এটি বাউলদের জীবনদর্শন।
অনেকেই ভাবতে পারেন বাড়িগাড়ি, সুন্দরী নারী, টাকা-পয়সা, শান-শওকত প্রভৃতি জীবনের জন্য দরকার আছে। এরা ভাবতে পারেন দুনিয়ায় যা পাওয়া যায় সেসব দিয়ে সুখ ভোগ করি- মরে গেলে তো সবই শেষ। এটিও এক ধরনের জীবনদর্শন।
অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন দুনিয়া ক্ষণিকের জায়গা। এরপর আখেরাতে অনন্তজীবন পড়ে আছে, সেখানকার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে শুধু সৃষ্টিকর্তার ইবাদতের জন্য। সে অনুযায়ী তারা ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেকে নিয়োজিত রাখে। এটিও আরেক ধরনের জীবনদর্শন।
এ রকম যেকোনো একটি জীবনদর্শনে বিশ্বাসী যদি স্বামী-স্ত্রী হয়ে থাকেন তাহলে সে পরিবারের সন্তান একই দর্শনে বিশ্বাস করতে পারে। কেননা একটি পরিবারের সন্তানাদি বেড়ে ওঠে সে পরিবারের মা-বাবার আদর্শ, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির আদলে। অর্থাৎ একটি পরিবারের সদস্যদের স্বভাব কেমন হবে সেটি নির্ভর করে ওই পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের ওপরে। পরিবারই প্রথম ঠিক করে দেয় সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষা ও কর্মপেশা কী হবে।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৭
এমএইউ/