ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

আল্লাহ খুশি হন অল্প রিজিকে তৃপ্ত মানুষের ওপর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৭
আল্লাহ খুশি হন অল্প রিজিকে তৃপ্ত মানুষের ওপর অবৈধ পন্থায় সম্পদের মালিক ও ক্ষমতা অর্জন কোনোটাই ইসলাম সমর্থন করে না

মানুষের প্রয়োজনের কোনো শেষ নেই। মানুষের প্রবৃত্তিই হলো- আরও চাই। চাওয়ার এমন লাগামহীন বাসনা পূরণ করতে উপার্জন বাড়ানো থেকে শুরু করে সম্পদ ও ক্ষমতার লড়াইয়ে জড়িয়ে মানুষ নানাবিধ অনাচারে জড়িয়ে যাচ্ছে। 

অঢেল ধন-সম্পদের মালিক হওয়ার নেশায় ঘুষ, দুর্নীতি ও চোরাকারবারের আশ্রয় নিচ্ছে। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে মানুষের ওপর অন্যায়-অবিচার করছে।

দাঙ্গা-হাঙ্গামা থেকে শুরু করে মানুষ হত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে। যার কোনোটাই ইসলাম সমর্থন করে না। অবৈধ পন্থায় সম্পদের মালিক ও ক্ষমতা অর্জন কোনোটাই ইসলাম সমর্থন করে না।  

অবৈধ পন্থায় আয়-উপার্জন করা, ধন-সম্পদের মালিক হওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। কেউ যদি হালাল পথে অল্প রিজিকে সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে আল্লাহতায়ালাও তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, যে বান্দা আল্লাহর পক্ষ থেকে অল্প রিজিক পেয়ে খুশি থাকে, আল্লাহতায়ালা তার তরফ থেকে অল্প আমলে খুশি থাকেন। -মুসনাদে আহমদ

বাস্তবিক অর্থে মৌলিক প্রয়োজন পূরণ হয়ে গেলে আমাদের উচিত আল্লাহতায়ালার কাছে অতিরিক্ত কিছু দাবি না করা। হজরত উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আদম সন্তানের জন্য চারটি জিনিস ব্যতীত অন্য কোনো কিছুর হক ও অধিকার নেই। ১. বাসস্থান, ২. কাপড়, ৩. শুকনো অথবা মোটা রুটি ও ৪. পানি। -তিরিমিজি শরিফ

বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, এ চারটি জিনিস যেহেতু মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের জন্য নির্দিষ্ট; তাই দুনিয়াতে আল্লাহর হুকুম মতো মানুষ এগুলো ভোগ করতে পারবে- এর জন্য আখেরাতে বিশেষ কোনো জবাবদিহিতা ও কৈফিয়ৎ দিতে হবে না।  

কিন্তু এর বাইরের নিয়ামতগুলোর শুকরিয়া বান্দা ঠিকমতো আদায় করেছে কি-না এ বিষয়ে হাশরের দিনে কঠোর জবাবদিহি করতে হবে। দুনিয়াতে অপেক্ষাকৃত নিম্নস্তরের লোকদের প্রতি নজর দেওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার প্রিয়তম বন্ধু রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। ১. দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের প্রতি সদয় দৃষ্টি দেওয়া এবং বিপদে-আপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো। ২. আমি যেন আমার নিম্নস্তরের লোকদের সাহায্য করি এবং আমার উচ্চস্তরের লোকদের সাহায্য না করি। ৩. কাছের আত্মীয় হোক কিংবা দূরের আত্মীয় হোক আমি যেনো তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখি। ৪. যদি তিক্তও হয় তবুও আমি যেনো সর্বদা সত্য কথা বলি। ৫. আমি যেনো আল্লাহর আদেশ পালনের ক্ষেত্রে কোনো অত্যাচারীর রক্তচক্ষুকে ভয় না করি। ৬. আমি যেনো বেশি করে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাহ বিল্লাহ’ পড়ি। কেননা এ বাক্যগুলো আরশের নিচের ভাণ্ডার থেকে আসে। -মুসনাদে আহমদ

আমরা যদি বাস্তবতার নিরিখে বিশ্লেষণ করি তাহলে বুঝতে পারবো, একজন মানুষের জন্য তার সম্পদে আসল অংশ খুবই কম। বাকি সব আত্মীয়-স্বজনদের জন্য। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ বলেছেন, বান্দা বলে আমার মাল, আমার সম্পদ অথচ তার সম্পদের মধ্যে শুধু তিনটি সম্পদই হচ্ছে তার প্রকৃত সম্পদ। ১. যা  সে খেয়ে শেষ করে ফেললো। ২. যা পরিধান করল এবং পুরাতন করে ফেললো ও ৩. যা দান করে দিন এবং সঞ্চয় করে রাখেন। এর বাইরে যে সম্পদ আছে তা সে পরিবার-পরিজনদের জন্য রেখে দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে। -সহিহ মুসলিম

দুনিয়াতে রেখে যাওয়া সম্পদ এক সময় ভাগ-বণ্টন হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় যে অর্থ দান করা হয়েছে তার সওয়াব কেউ নিতে পারবে না। এটা বান্দার একান্ত নিজের এবং তা আখেরাতে তার মুক্তির পথকে সুগম করবে।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।