খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পশ্চিম পাশে জিরোপয়েন্টে ইজতেমা ময়দান থেকে এ মোনাজাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে বিশ্ব উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।
বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এ আখেরি মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুণাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত চেয়ে দুই হাত তুলে মহান আল্লাহর দরবারে রহমত প্রার্থনা করেন মুসল্লিরা।
আখেরি মোনাজাত চলাকালে ইজতেমাস্থল ও আশপাশ এলাকায় ‘আমিন’-‘আমিন’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। সকাল ৯টার আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে আল্লাহর প্রতি নত হয়ে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে মুসল্লিরা মনের আকুতির কথা জানান।
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার পর খুলনা জেলা তাবলীগ জামাত এ বৃহৎ ইজতেমার আয়োজন করে। বৃহস্পতিবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) শুরু হওয়া তিনদিনের এ ইজতেমা শনিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো। এতে ২৫টি দেশের মুসল্লিরা অংশ গ্রহণ করেন।
আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইল মসজিদের শূরা সাথী মাওলানা ফারুক হুসাইন।
এ সময় ইজতেমা ময়দানে সঙ্গে একত্ব হয়ে মহাসড়কে দাঁড়িয়ে, দোকানের বেঞ্চে বসে, অলি-গলি, বিভিন্ন ভবনের ছাদ থেকে যে যেখানে ছিলেন সেখান থেকেই মোনাজাতে শরিক হন।
যে দিকেই চোখ যায়, সে দিকেই দেখা গিয়েছিলো শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পড়া মানুষ। ইজতেমাস্থলের চারপাশের এলাকাজুড়ে কোথাও তিলধারণের ঠাঁই ছিল না।
নানা বয়সী ও পেশার মানুষ এমনকি মহিলারাও মোনাজাতে অংশ নিতে ইজতেমার আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন।
ভোর থেকে দিক-নির্দেশনামূলক বয়ানের পর লাখ লাখ মানুষের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে দুপুর ১২টা ২০মিনিটে। মোনাজাত শুরু হলে জনসমুদ্রে হঠাৎ নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন, সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। কান্নায় বুক ভাসান তারা।
এদিকে আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে খুলনা মহানগরী ছিল প্রায় ফাঁকা। মোনাজাত উপলক্ষে গল্লামারী, জিরোপয়েন্ট, রূপসা সেতুর বাইপাস সড়ক ও চারপাশের এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু ছিল বন্ধ।
ইজতেমায় অংশ নেন খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান, স্থাসীয় সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, শিল্পপতি ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষ নিজ গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা শুরু করে। আগে যাওয়ার জন্য মুসল্লিরা তাড়াহুড়ো করতে শুরু করে। এতে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক এবং সংযোগ সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ জন ও যানজট।
আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়। ইজতেমা ময়দান এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে চারপাশ এবং বাইরে সিসি টিভির আওতায় আনা হয়। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) ও র্যাব পৃথক পৃথক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলে। র্যাবের দু’টি টহল গাড়ি ও ময়দানে দু’টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করেন। ৬ জন অফিসার, ৮ জন সাদা পোশাকে গোয়েন্দা ও ৪০ জন সশস্ত্র সদস্য আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত ছিলেন। কেএমপির পক্ষ থেকে দু’টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছিলো। ৫৪টি সিসি ক্যামেরা ও দু’টি ওয়াচ টাওয়ার ছিলো। সাদা ও পোশাকে ২ হাজার পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৬
এমআরএম/এসএইচ