সোমবার (১৩ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সচিব বলেন, প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী মানদণ্ডহীন বাটখারার জন্য আগে ছয় মাস জেল বা অনূর্ধ্ব তিন হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। এখন সাজার মেয়াদ ঠিক রাখা হলেও জরিমানার পরিমাণ ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এভাবে আরও কয়েকটি ধারায় জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
এ ছাড়া এ আইনে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যেমন আন্তর্জাতিক মান সংস্থাসহ (আইএসও) অন্য সংস্থাগুলোর নিয়মকানুন এ আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই আইনের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। বর্তমানে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ি ওজনে কারচুপির মতো অপরাধে লিপ্ত। এটা যে আইন, সমাজ ও ধর্মের চোখে অন্যায় সেটা তারা ভুলেই গেছে। আমরা আশা করি, এ অাইন পাশ ও যথাযথভাবে এর প্রয়োগ হলে ভোক্তা সাধারণ কিছুটা হলেও স্বস্তি অনুভব করবেন।
ওজনে কারচুপি বা ফাঁকিকে ইসলাম অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখে। ওজনে কম দেওয়া একটি বিশাল অর্থনৈতিক অপরাধ। এটা শুধুমাত্র ব্যবসার দাঁড়িপাল্লার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং সমাজের সব পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিরা এ অপরাধে জড়িত। অফিস-আদালতে ঠিকমতো কাজ না করাও ওজনে কম দেওয়ার শামিল। কোরআনে কারিমে ওজনে কম দিয়ে মানুষের অধিকার নষ্ট করার কথা উল্লেখ করে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, এ নিকৃষ্ট কাজের জন্য পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি হয় এবং মানুষ ধ্বংস হয়ে যায়।
যেকোনো প্রকার খাদ্যদ্রব্য বা জিনিস সঠিকভাবে মেপে দেওয়া বা এতে কোনোরকম কমবেশি না হওয়া ব্যবসায়ীদের সততা ও বিশ্বস্ততার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। এ ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা মেপে দেওয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং ওজন করবে সঠিক দাঁড়িপাল্লায়, এটাই উত্তম ও পরিণামে উৎকৃষ্ট। ’ -সূরা বনি ইসরাঈল: ৩৫
সৎ, নিষ্ঠাবান ও বিশ্বাসী ব্যবসায়ীরা আল্লাহ ও তার রাসূলের কাছে খুবই প্রিয় ও পছন্দনীয়। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদী ও আমানতদার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদানদের সঙ্গে থাকবে। ’ -তিরমিজি
ওজনে কম দেওয়ার বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণের পাশাপাশি যেকোনো প্রকার পণ্যদ্রব্য বা জিনিসে ভেজালদানকারী অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও আল্লাহতায়ালা কঠোর শাস্তির কথা ঘোষণা করেছেন।
অনেকে খাদ্যদ্রব্য বা জিনিসপত্র মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় মেপে নেয় ও ওজন করার সময়ও সঠিকভাবে ওজন করে নেয়; কিন্তু দেওয়ার বেলায় মাপে কম দেয় এবং ওজন করার সময় ওজনে কম দেয়। আবার কারও বদঅভ্যাস খাদ্যে ভেজাল প্রয়োগ করা। যেসব খাদ্যের মাধ্যমে মানুষের জীবনীশক্তি অর্জিত হয় এবং দেহ সুস্থ থাকে, সেসব খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল দেওয়া মানে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া। এদের ভয়ানক শাস্তি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘পরিমাপ ও ওজনে যারা কম করে তাদের জন্য ধ্বংস নির্ধারিত। ’
ইসলামে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অসাধু পন্থা অবলম্বনের পথ চিরতরে বন্ধ ঘোষণার পরও যারা অবৈধ পন্থা অবলম্বনের চেষ্টা করে তাদের জন্য কঠোর শাস্তির কথা ঘোষিত হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন অসাধু ব্যবসায়ীরা গুনাহগারদের কাতারে উত্থিত হবে। ’ -তিরমিজি
মানুষের সঙ্গে প্রতারণা, বিশ্বাস ভঙ্গ করা, খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল দেওয়া, পণ্যের দোষ গোপন করা, কৃত্রিম মুদ্রা চালিয়ে দেওয়াসহ সকল প্রকার অসাধু ও দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসা ও কর্ম একটি জঘন্যতম অপরাধ ও মহাপাপ। ইসলামে এ ধরনের কাজ হারাম। অসাধু ব্যবসায়ীদের সাবধান করে দিয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যবসায়ী ধোঁকাবাজি করবে সে আমার উম্মতভুক্ত নয়। ’ –সহিহ মুসলিম
ইসলামে ব্যবসায়িক অসাধুতার বিরুদ্ধে সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। চোরাকারবারি, মুনাফাখোরিম, মজুদদারি, কালোবাজারি, পণ্যে ভেজাল দেওয়া, ওজনে কারচুপি করা, নকল করা, ধোঁকা, প্রতারণা ও ঠকবাজির আশ্রয় নেওয়া, দামে হেরফের করা প্রভৃতি অসাধুতার পথ ইসলামে চিরতরে নিষিদ্ধ।
তাই আসুন, ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান মেনে চলি। সুদ, ঘুষ, মুনাফাখোরি, মজুদদারি, ফটকাবাজারি ও কালোবাজারিসহ সব ধরনের অবৈধ পন্থায় অর্থোপার্জন থেকে বিরত থাকি।
আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৭
এমএইউ/