নিজেকে বিস্তারিত চেনা ও দেখার মধ্য দিয়ে মানুষ নিজের সম্পর্কে যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারে। নিজেই নিজেকে পরখ করার এই পদ্ধতির মাঝে নিহিত রয়েছে কাঙ্খিত আদর্শ অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তোলার যথার্থ উপাদান।
বিষয়টি এভাবেও বলা যায়, নিজেকে চেনার গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ হলো- নিজের সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি ও জীবন-জীবনাচারে পরিবর্তনের অনুভূতি উপলব্ধি করা। এই যে উপলব্ধি, আত্মশুদ্ধি ও কল্যাণচিন্তা- এগুলোর জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো, নিজের ভুলভ্রান্তিগুলোকে নির্ণয় করে সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া। নিজের ব্যর্থতা সম্পর্কে অবহিত হয়ে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া।
সামগ্রিকভাবে বলা যায়, নিজেকের চেনার পন্থাগুলো অর্জন করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে গঠনমূলক ও সুন্দর ব্যবহার, দায়িত্বশীল আচরণ ও আত্মসম্মানের বীজ।
দুনিয়ার বুকে আল্লাহর প্রেরিত নবী-রাসূল থেকে শুরু করে যুগে যুগে সত্যান্বেষী মানুষ নিজেকে চেনার দিকেই আহ্বান জানিয়েছেন। বস্তুত নিজেকে চেনাই হলো- সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালাকে চেনার সূচনা। বলা হয়েছে, যে নিজেকে জানলো; সে তার খোদাকে জানতে পারবে।
ইসলামি স্কলাররা নিজের চেনাকে সবচেয়ে উত্তম ও উপকারী শিক্ষা বলে মনে করতেন। তাদের মতে- আমিত্ব, ব্যক্তিত্ব ও আত্মা যথাযথ জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হলে- সেটা উত্তম বিষয়।
আত্মসচেতনতা কিংবা নিজেকে চেনার বিষয়টি নিজের বাস্তবতাকে পরিচর্যার মাধ্যমে ফিরে পাওয়া অর্থ বোঝায়। নিজের ভেতরে যে বিশাল মেধা, প্রতিভা ও সামর্থ্য লুকায়িত রয়েছে সেগুলোকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাগিয়ে তোলাকেও বোঝানো হয়। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বহু আয়াত রয়েছে। কোরআনে কারিমে বুদ্ধিমত্তাকে চেনা-জানার সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর বোধ এবং যুক্তিকে বুদ্ধির উপকরণ বলা হয়েছে।
পবিত্র কোরআন মানুষকে আহ্বান জানায়, নিজেকে এবং এই বিশ্ব চরাচর নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার মধ্য দিয়ে সৌভাগ্য ও সাফল্যের পথ খুঁজে নেওয়ার।
কোরআনে কারিমে গভীর চিন্তাভাবনাকে ইবাদত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ থেকে অনুমিত হয় যে, মানুষের চিন্তা, চেতনাগত ভ্রান্তি ও অবক্ষয়ের পেছনে রয়েছে নিজেকে না চেনা এবং এই বিশ্ব প্রকৃতি সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকা। এই দুইয়ের জ্ঞানহীনতাই মূলত সব ধরনের ভুল-ভ্রান্তি ও গোমরাহির মূল উৎস। ভুল স্বীকার করে সেগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার ফলে সমালোচনা গ্রহণ করার মন ও মানসিকতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে নিজেরও ব্যক্তিসত্ত্বা ও ব্যক্তিত্ব আরও বেশি মূল্যবান ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
সমালোচনা গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং মানুষ যদি চায় সুস্থ জীবনযাপনের পথে পা বাড়িয়ে সৌভাগ্য, কল্যাণ ও সাফল্যের পথে অগ্রসর হতে তাহলে তাদের উচিত আত্মসচেতন হওয়া অর্থাৎ নিজেকে চেনা।
কোরআনে কারিমের দৃষ্টিতে আত্মসচেতনতার ক্ষেত্রে মানুষের বোধ, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বুদ্ধি, বিবেক এবং মেধা সরাসরি সম্পৃক্ত। নিজের সম্পর্কে আমরা যত বেশি জানবো, মানুষের চিন্তার গভীরতা তত বাড়বে। আর এটাই জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা ও সাফল্য। তাই প্রত্যেক মানুষের করণীয় হলো- এ পথে চলা।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭
এমএইউ/