লোভ-লালসা হচ্ছে মানুষের চরিত্রের দুর্বলতম ও হীনতম বৈশিষ্ট্যের একটি। যার সাহায্যে সৃষ্টি হয় অন্যায় ও অবৈধ কাজের বিভিন্ন রাস্তা।
লোভ মানুষের পারিবারিক জীবনে, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সৃষ্টি করে নানা সমস্যা এবং নিরাপত্তাহীন অশান্তির অস্বস্তিকর পরিবেশ। এমনকি আপন সহোদরের মাঝে ধন-সম্পদ নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ, ভাই-বোনের সম্পর্ক নষ্ট, আত্মীয়-স্বজনের সম্পর্কে বিচ্ছেদ এবং পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে মামলা-মোকাদ্দমা এবং দুর্নীতিতে জড়িত হওয়ায় ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা পালন করে- সর্বনাশী লোভ।
লোভ-লালসার প্রকৃতিতে আত্মসমর্পণ করে অন্যায়ভাবে অপরের ধন-সম্পত্তি আত্মসাৎ করায় এবং মানুষের মান-সম্মান ধূলিসাৎ, এমনকি অন্যদেরকে হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করে না। পার্থিব জীবনে স্বাবলম্বীর প্রত্যাশায় ও প্রচেষ্টায় অবৈধভাবে ধন-সম্পত্তি উপার্জনের আসক্তিতে মানুষ পারলৌকিক জীবন ভুলে যায়। প্রচুর পরিমাণে ধন-সম্পত্তি থাকলেও তার কোনো তৃপ্তি নেই সে আরও বেশি চায়।
লোভ সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি কোনো মানুষের এক উপত্যকা ভরা স্বর্ণ থাকে, তবে সে তার জন্য দু’টি উপত্যকা (ভর্তি স্বর্ণ) হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করে। তার মুখ মাটি ছাড়া (মৃত্যু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত) আর কিছুতেই ভরে না। আর যে ব্যক্তি তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। ’ -সহিহ বোখারি
লোভ মানুষের অধঃপতনের অন্যতম কারণ। লোভ একটি নৈতিক ত্রুটি। লোভ মানুষের জীবন থেকে সুখ কেড়ে নেয়। লোভী মানুষ আল্লাহতায়ালার কোনো নিয়ামতের শোকরিয়া আদায় করে না, বরং আল্লাহ তাকে যা দান করেছেন তার চেয়ে সে আরও অনেক বেশি কিছু চায়।
লোভের উৎপত্তি হিসেবে বলা হয়েছে- ভয়, কৃপণতা ও লোভ একই প্রকারের। আর তাদের মূলে হলো- খারাপ ধারণা পোষণ করা। ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, কৃপণ ব্যক্তিরা সর্বদা বঞ্চিত হয় এবং তারা কোনো কাজেই সফল হয় না। কেননা তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে না বরং নিজের লালসা মেটানোর জন্য কাজ করে।
লোভী মানুষ দু’টি উৎকৃষ্ট গুণ হতে বঞ্চিত। ফলশ্রুতিতে সে দু’টি দোষের অধিকারী।
এক. সে জীবনে পরিতৃপ্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত, ফলে সে জীবন থেকে প্রশান্তিকে হাতছাড়া করেছে।
দুই. লোভী যেহেতু সন্তুষ্টি হতে বঞ্চিত, ফলে সে অপরের বিশ্বাসকে খুইয়েছে।
মুমিন বান্দারা যেসব নেয়ামত আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন সেগুলোর জন্য সর্বদা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে ও তাতেই সন্তুষ্ট থাকে। আর যদি পরবর্তীতে কিছু তার সম্পদ বৃদ্ধি পায় তার জন্যও সে আল্লাহর দরবারে পূর্বাপেক্ষা অধিক কৃতজ্ঞতা আদায় করে। সে ভুলেও অন্যের সম্পদের প্রতি দৃষ্টি দেয় না। মুমিনদের এ দলটি সর্বদাই সুখে ও শান্তিতে বসবাস করে। কেননা তারা আল্লাহতায়ালার নৈকট্য বৈ অন্য কিছু চায় না।
লোভ, হিংসা, অহংকার বহু পাপের জন্ম দেয়। লোভ পরিত্যাগ করে একজন আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য ইসলাম তথা পবিত্র কোরআন-হাদিসে বিভিন্ন ভঙ্গিতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ইসলামের মৌলিক শিক্ষাই হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার ভয়, আদর্শের অনুশীলন, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন, আত্মসমালোচনা, আত্মশুদ্ধি ও বিবেকের শিক্ষাকে রপ্ত করার অভ্যাস সৃষ্টি করতে হবে। নাহলে ধ্বংস অনিবার্য।
কারণ, প্রকৃত মোমিন কখনও লোভের জালে বন্দি হতে পারে না। কেননা লোভ-লালসা মানুষের দ্বীন ও ঈমানের জন্য মারাত্মক হুকমি। বিষয়টি নবী করিম (সা.) একটি উপমা দ্বারা স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনম ‘দুইটি ক্ষুধার্ত বাঘ মেষপালে ছেড়ে দিলে যে পরিমাণ ক্ষতি সাধন করতে পারে, সম্পদ কিংবা পদমর্যাদার মোহ মানুষের দ্বীনের জন্য এর চেয়ে ক্ষতিসাধন করে। ’ –সুনানে তিরমিজি
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৭
এমএইউ/