মহানবী (সা.) এমন অনেক কিছুই করেছেন যা উম্মতের জন্য করা বৈধ নয়- সেগুলোকে পরিভাষায় সুন্নত বলা হয় না। সেগুলো তার জন্য খাস।
যেমন- পূর্ণ রমজান মাস জামাতের সঙ্গে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ, দুই মলাটের মধ্যে পূর্ণ কোরআনের গ্রন্থবদ্ধ সংকলিত রূপ ও জুমার প্রথম আজান ইত্যাদি।
ইসলামে সুন্নতের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী! আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো তাহলে আমাকে অনুসরণ করো। সেক্ষেত্রে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন ও ক্ষমা করবেন। ’ -সূরা আলে ইমরান: ৩১
এ আয়াতে সুন্নতের ১টি গুরুত্ব ও ২টি লাভ বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের একমাত্র পদ্ধতি নবীর সুন্নত অনুসরণ করা। আর নবীর সুন্নত অনুসরণ করলে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যাবে, আল্লাহর ক্ষমা পাওয়া যাবে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে জীবিত করবে (নিজে অনুসরণ করবে ও সমাজে চালু করবে) সে যেন আমাকে ভালোবাসলো। আর যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসবে সে আমার সঙ্গে জান্নাতে থাকবে। -কানযুল উম্মাল: ৯৩৩, আল মুজামুল আউসাত: ৯৪৩৯
এ হাদিসের আলোকে বুঝা যাচ্ছে নবীর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের একমাত্র পদ্ধতি নবীর সুন্নত অনুসরণ করা, আর নবীর সুন্নত অনুসরণ করলে জান্নাত পাওয়া যাবে। তাও নবীর সঙ্গের জান্নাত।
তিনি আরও ইরশাদ করেছেন, তোমাদের জন্য জরুরি আমার সুন্নত মান্য করা এবং খোলাফায়ে রাশিদিনদের সুন্নত মান্য করা। -ফতহুল বারী
উপর্যুক্ত আয়াত ও হাদিসের কারণে মুসলমান মাত্রই মনের ভেতরে নবীর সুন্নত মানার অনুপ্রেরণা থাকে। নবীর সুন্নত যেভাবে ইবাদতের মধ্যে আছে সেভাবে রাষ্ট্রীয় কাজেও নবীর সুন্নত আছে। সেভাবে সামাজিক কাজেও নবীর সুন্নত আছে। সেভাবে ব্যক্তিগত কাজেও নবীর সুন্নত আছে।
মনে রাখতে হবে, বর্ণিত আয়াত ও হাদিসে সুন্নতের কোনো ভাগ করা হয়নি। ব্যক্তি জীবনের সুন্নত বা সমাজ জীবনের সুন্নত বলে কোনো কিছুকে নির্দিষ্ট করা হয়নি। তাই সব সুন্নত অর্ন্তভুক্ত হবে।
নবীর সুন্নতের তিনটি পার্থিব উপকার হলো- প্রতিটি কাজের যতগুলো ধরণ, রেওয়াজ, রীতি ও প্রথা আছে সবগুলোর মধ্যে নবীর সুন্নত হলো- সবচেয়ে সহজ, সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গ। নবীর সুন্নত মতো পানাহার, মলমূত্র ত্যাগ, শয্যাগ্রহণ, পোশাক পরিধান দেহের জন্য সর্বাধিক বিজ্ঞানসম্মত, স্বাস্থ্যকর ও উপাকরী। অনুরূপভাবে নবীর সুন্নত মতো দেশ ও সমাজ চালানোতে রয়েছে সমাজের সার্বিক মুক্তির সহজ, সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি।
নবীর সুন্নত নিয়ে সমাজের মানুষ বিভিন্ন ধরণের প্রান্তিকতার শিকার। কেউ আছেন ব্যক্তি জীবনে নবীর সুন্নতকে খুব গুরুত্ব দেন ও অনুসরণ করার চেষ্টা করেন কিন্তু রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে নবীর সুন্নতকে কোনো গুরুত্ব দেন না। এমনকি এক্ষেত্রে নবীর সুন্নতকে স্বীকার করতেও রাজি নন। তারা ভাবেন, দেশ ও সমাজ একভাবেই চালালেই হলো।
অন্যদিকে ব্যক্তি জীবনে সুন্নতের অনুসারী অনেকেরই মাঝে একটি ত্রুটি আছে- প্রাত্যহিক মানবীয় কাজে সুন্নতকে মানলেও আচার-আচরণে, লেনদেনে, বেচাকেনায়, ব্যবহার-চরিত্রে নবীর সুন্নতকে গুরুত্ব দেয় না। পোশাক নবীর সুন্নত মতো কিন্তু ব্যবহার নবীর সুন্নত মতো নয়। ঘুমানোর সময় নবীর সুন্নত খোঁজে কিন্তু বেচাকেনার সময় নবীর সুন্নত খোঁজে না।
এভাবে নবীর সুন্নত আজ আমাদের মাঝে খণ্ডিতভাবে চর্চা হচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রত্যেকের উচিৎ সামগ্রিকভাবে নবীর সুন্নতকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করা। এতেই প্রকৃত কল্যাণ নিহিত।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৭
এমএইউ/