কিশোর হাফেজ শহীদুল নিজ গ্রামের একটি নুরানি মাদরাসায় ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা শেষ করে ২০১৬ সালের আগষ্ট মাসে কাশিপুর আদর্শ হেফজ মাদরাসায় ভর্তি হয়। প্রথমে কোরআন দেখে দেখে (নাজেরা) পাঠ শেষে মাত্র ১০ মাসে পুরো কোরআন মুখস্থ করে ফেলে।
১০ মে হাফেজ শহীদুল কোরআন মুখস্থ করা শেষ করেন।
বুধবার (২৪ মে) কাশিপুর আদর্শ হেফজ মাদরাসায় বসে কথা হয় হাফেজ শহীদুলসহ তার শিক্ষক, সহপাঠী, বাবা-মা ও স্থানীয়দের সঙ্গে।
শিক্ষকরা জানান, শহীদুল ইসলাম ২০১৬ সালের আগষ্ট মাসে এ মাদরাসায় ভর্তি হয়। সে অত্যন্ত মেধাবী। নিয়মিত পড়াশোনা করে শহীদুল আল্লাহর রহমতে ১০ মাসে পুরো কোরআন মুখস্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
হাফেজ শহীদুল প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ পৃষ্ঠা করে কোরআন মুখস্ত করে ওস্তাদকে শোনাত। কখনও ৮-১০ পৃষ্ঠাও মুখস্ত করত। এভাবে ১০ মাসের মধ্যে পুরো কোরআন খতম করে ফেলে।
কাশিপুর আদর্শ হেফজ মাদরাসায় পরিচালক হাফেজ মাওলানা সিফাত মাহমুদ বলেন, হাফেজ শহীদুল ইসলাম আমাদের গর্ব। সে আমাদের সবার মুখ উজ্জ্বল করেছে। ওর এই অসামান্য কৃতিত্বের কারণে মাদরাসার সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে। আমি দোয়া করি, শহীদুল যেন বড় আলেম হয়ে ইসলাম এবং মানুষের সেবা করতে পারে।
মাদরাসার পরিচালক আরও বলেন, শহীদুলের বাবা একজন দরিদ্র দিনমজুর। তার পক্ষে ছেলেকে খুব বেশি লেখাপড়া করানো সম্ভব নয়। তাই শহীদুলের লেখাপড়ার জন্য সরকার এবং সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা প্রয়োজন। একটু সহযোগিতাই পারে শহীদুলের দরিদ্র বাবা-মার স্বপ্নপূরণ করতে।
হাফেজ শহীদুল ইসলাম শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগরিয়া ইউনিয়নের দাদপুর দক্ষিণ ভাষাণচর গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর আবদুস সালাম সরদারের ছেলে। ৫ ভাইবোনের সংসারে শহীদুল সবার ছোট।
দরিদ্রতার কারণে আবদুস সালাম সরদার তার সন্তানদের বেশিদূর পড়ালেখা করাতে পারেননি। কিন্তু ছোট ছেলে শহীদুল ইসলামকে এলাকার নূরানি মাদরাসায় পড়তে দেন। শহীদুল এই সুযোগ হাতছাড়া করেনি। সে নিয়মিত লেখাপড়া করে নূরানি মাদরাসা থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে। লেখাপড়ার প্রতি শহীদুলের আগ্রহ এবং ভালো মেধা দেখে শিক্ষকদের পরামর্শে হেফজখানায় ভর্তি করে দেয়। ওই মাদরাসায় সে মাত্র ১০ মাসে কোরআর মুখস্থ করার কৃতিত্ব দেখায়।
শহীদুলের বাবা আবদুস সালাম সরদার বাংলানিউজকে বলেন, আমি গরীব মানুষ। নিজে লেখাপড়া করতে পারিনি। দরিদ্রতার কারণে কোনো সন্তানকে পড়ালেখা করাতে পারিনি। ছোট ছেলেটিকে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে হাফেজি মাদরাসায় ভর্তি করে দেই। আল্লাহর রহমতে সে অল্পদিনেই কোরআন হেফজ করতে সক্ষম হয়েছে। আমি দোয়া করি শহীদুল যেন বড় আলেম হয়ে মানুষের সেবা এবং ইসলামের খেদমত করতে পারতে পারে। ওর জন্য সবাই দোয়া করবেন।
শহীদুলের মা আলেয়া বেগমের একই অভিমত।
বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় হাফেজ শহীদুল ইসলামের। তিনি বলেন, আমার বাবা একজন গরীব কৃষক। তিনি আমাকে লেখাপড়ার সুযোগ দিয়েছেন। আমি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাবা-মার দুঃখ কষ্ট দূর করতে চাই। লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হতে চাই।
১৯৪১ সালে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মরহুম মাওলানা আলী আকবর হাওলাদার কাশিপুর আদর্শ হেফজখানা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৬ সালে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয় কাশিপুর নেছারিয়া দাখিল মাদরাসা। বর্তমানে দাখিল মাদরাসার দ্বিতল ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে কাশিপুর হাফেজ ছাত্রদের পড়াশোনা করানো হয়। বর্তমানে ২২ জন ছাত্র সেখানে হেফজ পড়ছে।
১৯৭৬ সালে মাওলানা আলী আকবর হাওলাদার মারা গেলে তার ছেলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব আবদুল আউয়াল হাওলাদার ১৯৯৬ সালে ‘আলী আকবর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ গঠন করেন। তিনি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই ট্রাস্টের অধীনে কাশিপুর আদর্শ হেফজখানা, কাশিপুর নেছারিয়া দাখিল মাদরাসা, আলী আকবর স্মৃতি পাঠাগার, কাশিপুর গণকবরস্থান, কাশিপুর নূরিয়া এতিমখানা ও কাশিপুর বাইতুন নূর জামে মসজিদ পরিচালিত হয়।
ট্রাস্ট চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল হাওলাদার বলেন, দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার কথা চিন্তা করে আমার বাবা মাওলানা আলী আকবর হাওলাদার প্রথমে কাশিপুর আদর্শ হেফজখানা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখান অধ্যয়নরত বেশিরভাগ ছাত্রই দরিদ্র। এই মাদরাসায় অনেক মেধাবী ছাত্র পড়াশোনা করেছে। দরিদ্র দিনমজুরের ছেলে শহীদুল ইসলাম অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেছে। আমরা গর্বিত ওর কারণে। শহীদুলের বাবা একজন দরিদ্র দিনমজুর। শহীদুল যদি পরবর্তীতে কাশিপুর নেছারিয়া দাখিল মাদরাসায় লেখাপড়া করে তাহলে আলী আকবর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পক্ষ থেকে তার লেখাপড়ার ব্যায়ভার বহন করা হবে।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭
এমএইউ/