ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন বিখ্যাত কয়েকটি মসজিদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১২ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭
মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন বিখ্যাত কয়েকটি মসজিদ মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন বিখ্যাত কয়েকটি মসজিদ

বিশ্বে সভ্যতার বিনির্মাণে মুসলিম স্থপতিদের গুরুত্ব কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। যুগে যুগে তারা তাদের উৎকর্ষতার প্রমাণ বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন।

মুসলিম স্থাপনাশৈলীর তেমনি কিছু নিদর্শন, যা কালের বিবর্তনে শুধু টিকেই থাকেনি বরং গৌরবভরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ইতিহাসের সাক্ষি হয়ে আছে।

বায়তুল মোকাদ্দাস
হাল সময়ে বিশ্ব রাজনীতির অনেকটাই আবর্তিত বায়তুল মোকাদ্দাসকে ঘিরে।

এটা মুসলমানদের কাছে ‘বায়তুল মোকাদ্দাস’ বা ‘আল আকসা’ মসজিদ নামে পরিচিত। ইসলামি স্থাপনার প্রাচীন এই নমুনাটি মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের কাছে সমানভাবে পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিমদের কাছে আল আকসা মসজিদ নামে পরিচিত স্থাপনাটি ইহুদিদের কাছে ‘টেম্পল মাউন্ট’ নামে পরিচিত। আল আকসা হচ্ছে- ইসলামের প্রথম কেবলা এবং মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় পবিত্র স্থান।
আল আকসা হচ্ছে- ইসলামের প্রথম কেবলা এবং মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় পবিত্র স্থান
এ মসজিদের নির্মাণ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। একদল ইতিহাসবিদ মনে করেন, আল আকসা মসজিদ হজরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে তৈরি হয়, যা পরবর্তী নবীরা পুণর্নির্মাণ ও সংস্কার করেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক কাবা গৃহ নির্মাণের ৪০ বছর পর হজরত ইয়াকুব (আ.) আল আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন। এরপর খ্রিস্টপূর্ব ১০০৪ সালে হজরত সোলায়মান (আ.) এই মসজিদটির পূণর্নির্মাণ করেন। বিভিন্ন শাসকের সময় মসজিদে অতিরিক্ত অংশ যোগ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে গম্বুজ, বিশাল আঙ্গিনা, মিম্বার, মেহরাব ও অভ্যন্তরীণ কাঠামো।

৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে সমগ্র বায়তুল মোকাদ্দাস এলাকা মুসলমানদের দখলে আসার পর মুসলমান শাসকরা কয়েকবার এ মসজিদের সংস্কার করেন। বর্তমান অবয়বের মসজিদ নির্মাণে বাইজেনটাইন স্থাপত্য ঐতিহ্যের সঙ্গে মুসলিম স্থাপত্য শৈলীর চমংকার অভিযোজন ঘটেছে। কিন্তু ১০৯৬ সালে খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিন দখল করে নেওয়ার পর আল আকসা মসজিদের ব্যাপক পরিবর্তন করে একে গীর্জায় পরিণত করা হয়। তারা মসজিদের গম্বুজের ওপরে ক্রুশ স্থাপন করে এর নাম রাখে- ‘সোলায়মানি উপাসনালয়। ’

এরপর ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি গাজী সালাহউদ্দিন আইয়ুবী জেরুজালেম অধিকার করার পর পূর্বের নকশা অনুযায়ী আল আকসা মসজিদের পুণর্নির্মাণ করেন। মসজিদটিতে ২টি বড় এবং ১০টি ছোট গম্বুজ রয়েছে। মসজিদ নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে স্বর্ণ, সিসা বা লিড এবং মার্বেলসহ বিভিন্ন প্রকার পাথর ব্যবহৃত হয়েছে। ঐতিহাসিক এ মসজিদটির আয়তন সাড়ে তিন হাজার বর্গমিটার। এ মসজিদে পাঁচ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন।

বর্তমানে ইহুদিবাদী ইসরাইল ঐতিহাসিক মসজিদটি দখল করে রেখেছে। ১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভের পর বায়তুল মোকাদ্দাস মুসলমানদের হস্তচ্যুত হয়, সেই থেকে বায়তুল মোকাদ্দাস তাদের দখলে। ১৯৬৯ সালে একবার আল আকসা মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।  
বর্তমানে আল আকসায় প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত
বর্তমানে এ মসজিদে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। ইসরাইলের মুসলিম বাসিন্দা এবং পূর্ব জেরুজালেমে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা মসজিদুল আকসায় প্রবেশ ও নামাজ আদায় করতে পারেন। আবার অনেক সময় বাঁধাও দেওয়া হয়। বিধিনিষেধের মাত্রা সময়ে সময়ে পরিবর্তন হয়। কখনও শুধু জুমার নামাজের সময় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।  

এই পবিত্র মসজিদ থেকেই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) উর্ধাকাশে তথা মেরাজ গমন করেছিলেন। নবী করীম (সা.) মিরাজ গমনের সময় আল আকসায় অতীতের সব নবী-রাসূলের জামাতে ইমাম হয়ে দু’রাকাত নামাজ আদায় করেন।  

এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘সকল মহীমা তার- যিনি তার বান্দাকে এক রাতে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছিলেন, যার চতুর্পার্শ্বকে আমি বরকতময় করেছি। (আর এই ভ্রমণ করানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে) যাতে আমি আমার নিদর্শন তাকে প্রদর্শন করি। ’ -সূরা বনী ইসরাইল: ১
সামারার বিখ্যাত মসজিদ
সামারার বিখ্যাত মসজিদ
আব্বাসিয় খলিফা আল মুতাওয়াককিলের সময় ইরাকের বিখ্যাত সামারার শহরে এই মসজিদটি আনুমানিক ৮৫০ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের সময় পর্যন্ত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মসজিদ ছিল এটি। পোড়া ইট দিয়ে শঙ্খিলভাবে নির্মিত এই মসজিদটি ১২৫৮ সালে মঙ্গলীয়দের আক্রমণের সময় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিন্তু অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক ১৭০ ফুট উঁচু মিনারটি টিকে যায়। মিনারটি কৌনিক গঠনে নির্মাণ করা হয় এবং এর চারপাশে শঙ্খিল প্যাঁচানো সিঁড়ি রয়েছে, যা দিয়ে মিনারের ওপরে ওঠা সম্ভব।
স্পেনের কর্ডোভার বিখ্যাত মসজিদটি মুসলিম স্থাপনাশৈলীর সুপ্রাচীন ঐতিহ্য
কর্ডোভার বিখ্যাত মসজিদ
স্পেনের কর্ডোভার বিখ্যাত মসজিদটি মুসলিম স্থাপনাশৈলীর সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। বর্তমানের স্থাপনাটি অনেক উঁচুমানের স্থাপত্যবিদ্যার পরিচয় বহন করে। ইতিহাসবেত্তারা মনে করেন, রোমান দেবতা জেনাসের মন্দির হিসেবে বিল্ডিংটি তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে এই মন্দিরকে চার্চে রূপান্তরিত করা হয়। মুসলিম শাসনামলে এই চার্চকে আবার মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়। এই মসজিদটির অন্যতম চিত্তাকর্ষক স্থানটি হলো- এর ইবাদতের জায়গাটি। ইবাদতের জায়গাটি হাইপোস্টাইল (অর্থাৎ কলাম দিয়ে পূর্ণ) ধাঁচে তৈরি।
ইরানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ইস্পাহানের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্য বিষয়ক গৌরবের অন্যতম
ইস্পাহানের জামে মসজিদ
ইরানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ইস্পাহানের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্য বিষয়ক গৌরবের অন্যতম। বর্তমান মসজিদটির পুরোধা হলো- সেলজুক শাসনামলে তৈরি দুই গম্বুজ বিশিষ্ট একটি স্থাপনা। ১২শ’ শতাব্দীতে এই মসজিদটি পুণনির্মাণ করা হয়। আইওয়ান ধাঁচে নির্মিত এর গঠন প্রণালী হলো- চারকোনা বিশিষ্ট একটা প্রাঙ্গণের প্রতি পার্শ্বে একটি করে বড় খিলান করা দরজা যা বিপরীত পার্শ্বের দরজার দিক সরাসরি মুখ করে আছে। ইস্পাহানের জামে মসজিদের এই বৈশিষ্ট্য পরবর্তীতে ইরানের সকল মসজিদের বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠে।  

ইউনেস্কো ২০১২ সালে এই মসজিদটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।