আসন্ন হজ মৌসুমে সৌদি আরবের মক্কা, মদিনা ও জেদ্দার হজ অফিসে হজ প্রশাসনিক দলকে সহযোহিতা, হজ ব্যবস্থাপনার সাবির্ক কার্যক্রম দেখাশুনা, সমন্বয়, হজযাত্রীদের সেবা, প্রয়োজনীয় সহায়তা ও চিকিৎসা সেবাসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য বেশ কয়েকটি দলকে সৌদি আরব প্রেরণ করা হবে। এসব টিমের অনেকেই ইতিমধ্যে সৌদি আরব পৌঁছেছেন, অন্যরা যাওয়ার পথে।
দলগুলো হলো- ১৫ সদস্য বিশিষ্ট হজ কারিগরী দল, ৫৪ সদস্য বিশিষ্ট হজ প্রশাসনিক দল, দুই দলে বিভক্ত করে ২৬৭ জনের হজ চিকিৎসক দল ও ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট হজ সহায়ক দল।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ শাখা থেকে ১৭১ জনের হজ চিকিৎসকদের সহায়তাকারী দলে তৃতীয়বার সংশোধনী এনে যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে এমন সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নেওয়া হচ্ছে, যাদের অনেকেই এই কাজের উপযোগী নন।
আরও আবাক করা কথা হলো- তারা নিজেরাই কর্মকর্তা পর্যায়ের। তারা চিকিৎসক দলকে কীভাবে সহযোগিতা করবেন, কী সহযোগিতা করবেন- তাও স্পষ্ট নয়। যদিও ২৬৭ জনের চিকিৎসক দলে অালাদা নার্স, ব্রাদার, ফার্মাসিস্ট, স্বাস্থ্য সহকারী ও ল্যাবরেটরি টেকনেশিয়ান রয়েছেন।
হজ চিকিৎসক দলের সহায়ক দলে জাতীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাশেম এর নাম দেখে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এটা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলছেন, যেনতেনভাবে হোক হজ করতেই হবে এই অভিপ্রায় থেকেই তার নাম এসেছে এ তালিকায়।
ইমাম মহিউদ্দিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বোর্ড অব গভর্নসের সদস্য শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর ভাগনে।
যদিও তিনি বাংলানিউজের কাছে বলেন, ‘আমি হজ প্রশাসনিক দলে আবেদন করেছিলাম। আমার কাছে কপিও আছে। কিন্তু কীভাবে এ তালিকায় নাম এলো, তা আমি নিজেও জানি না। সত্যি কথা বলতে কী, আমি নিজেও অবাক এ তালিকায় আমার নাম দেখে। ’
‘যেখানে বায়তুল মোকাররম মসজিদের ইমাম ৬ষ্ঠ গ্রেডে বেতন পান, অফিসিয়াল পদমার্যাদা উপ-পরিচালক পর্যায়ের, সেখানে এ তালিকায় নাম থাকা মানায় না। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নাম দিয়ে দিলে তো কিছু করার নেই’ বলে জানান তিনি।
বায়তুল মোকাররমের এই ইমাম বাংলানিউজের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘হজ একটি ধর্মীয় ইবাদত। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ইমাম হিসেবে তারা এ কাজে নেতৃত্বে দেবেন। এটা হওয়া উচিৎ। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে এর উল্টোটা। ’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বায়তুল মোকাররম মসজিদের আরেক পেশ ইমাম মুফতি এহসানুল হক জিলানীও সৌদি আরব যাবেন। তার নামের তালিকা আরও নিম্ন পর্যায়ের টিমে অন্তভুর্ক্ত হয়েছে। এখনও সরকারি আদেশ হয়নি বিধায় তালিকাটি প্রকাশ পায়নি।
মুফতি এহসানুল হক জিলানী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বর্তমান মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের ভাগনে। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে তিনি ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান।
হজ সহায়ক দলের সদস্যদের কর্মকাল হবে ২৯ জুলাই থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সৌদি আরবে অবস্থানকালে এই ১৭১ জন যাওয়া-আসার বিমানভাড়াসহ যাতায়াত ভাতা ও দৈনিক ভাতা পাবেন পদ অনুযায়ী ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা করে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবছরই হজ সহায়ক দল থেকে শুরু করে বিভিন্ন দল ও গাইড হিসেবে যারা সৌদি আরব যান, তাদের অনেকেই হাজিদের যথাযথ সেবা দেন না। তারা তদবির করে নিজেদের নাম অন্তভুর্ক্ত করান বিভিন্ন দলে।
সম্প্রতি ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে হজ চিকিৎসক দলের সদস্যদের তালিকা (৩য় সংশোধন) প্রকাশ করে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (হজ) মো. শরাফত জামান স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বলা হয়- ২০১৭ হজ মৌসুমে সৌদি আরবে অসুস্থ বাংলাদেশি হজযাত্রীদের চিকিৎসাসেবা দিতে এবং চিকিৎসক দলকে সহায়তা করতে হজ সহায়ক টিম গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু ১১৪ জন চিকিৎসক, ৯৭ জন নার্স ও ব্রাদার, ৪৩ জন ফার্মাসিস্ট ও ১২ জন টেকনিশিয়ানের দলকে তারা কী সহায়তা দেবেন তা স্পষ্ট নয়।
যদিও অফিস আদেশে বলা হয়েছে, হজ সহায়ক দল কাউন্সেলর (হজ), প্রশাসনিক দল ও চিকিৎসক দলের দলনেতাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৭
এমএইউ/