হজযাত্রীদের এমন কষ্ট, কান্না ও ভোগান্তি দেখে মনে হয়- হজ একটি ভীষণ কঠিন আমলের নাম। হজ মানেই কষ্ট।
আমাদের দেশের হজযাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয় মূলতঃ ব্যবস্থাপনাজনিত ত্রুটির কারণে। হজব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতরা আন্তরিক হলে এ ভোগান্তি নিরসন কোনো বিষয়ই না। হজব্যবস্থাপনা দুর্নীতিমুক্ত করে এর সঙ্গে সৎ ও খোদভীরু লোকদের সম্পৃক্ত করলেই এ সমাধান সম্ভব।
এতো গেলো হজব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট দুর্ভোগের কথা। কিন্তু বাস্তবিকই হজের সফরে প্রচুর কষ্ট করতে হয়। এর জন্য দরকার সহনশীল মনোভাব ও ধৈর্য। তার পরও যেসব কারণে ও স্থানে হজের সফরে কষ্ট স্বীকার করতে হয়-
১. সমগ্র দুনিয়া থেকে হজকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কয়েক দিন জেদ্দা অথবা মদিনা এয়ারপোর্টে হজযাত্রীরা অবতরণ করেন। তাই এয়ারপোর্টের সকল কার্যক্রমে অস্বাভাবিক ভীড় হয়ে থাকে।
২. কাবা শরিফের চত্ত্বর (মাতাফ, তওয়াফের স্থান), মসজিদে হারাম, সাফা-মারওয়া, মদিনা শরিফ, মসজিদে নববি ও রওজা শরিফ নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গায় হওয়ার দরুণ- হজের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মোস্তাহাব আমলগুলো একসঙ্গে করতে গিয়ে প্রচণ্ড চাপ পড়ে এসব স্থানে।
৩. মিনা, আরাফা ও মুজদালিফায় একই দিনে একই স্থানে ৪০-৫০ লাখ মানুষ জমা হওয়ার প্রেক্ষিতে এসব স্থানে আসা-যাওয়া করতে রাস্তায় ও গাড়ীতে চরম যানজটের সৃষ্টি হয়। কখনও যান্ত্রিক গোলযোগ হয়, দুর্ঘটনা ঘটে। তাই স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রাস্তায় ৫-৬ গুন সময় বেশি লাগে।
৪. সৌদি আরবের আবহাওয়া বিশেষ করে মক্কা শরিফ, মিনা, আরাফা ও মুজদালিফার তাপমাত্রা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। এসব এলাকায় রোদের তাপ ও গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
৫. হজের সফরে মক্কা শরিফ ও মদিনা শরিফে সকল কাজকর্মের জন্য সৌদি মোয়াল্লিমের দারস্থ হতে হয়। অনেক মোয়াল্লিমের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণেও অবর্ণনীয় কষ্ট করতে হয়।
৬. ফাইভ স্টার হোটেলসহ বিলাসবহুল হোটেল মক্কা-মদিনায় আছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অন্যস্থানের হোটেলের মতো এ সব হোটেলে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। অধিকাংশ হজযাত্রী সাধারণ হোটেল বা বাড়ীতে থাকেন। কিছু কিছু হোটেল বা বাড়ী এত নিম্নমানের যে- এসি, বাথরুম বা অন্যান্য বিষয় হজযাত্রীদের ভীষণ কষ্ট পোহাতে হয়।
৭. মক্কা শরিফ ও মদিনা শরিফের সব হোটেলে রান্নার অনুমতি নেই। অনেক দূর থেকে কষ্ট করে খাবার পৌঁছানো হয়। নামাজের জামাতের আগে পরে ভীড় না কমা পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করা যায় না। ফলে খাবারের কষ্ট এ জন্য হয়ে থাকে।
খাবারের জন্য কখনও আবার পুলিশের যন্ত্রণা পোহাতে হয়। এমনকি আইন ভঙের দরুণ পুলিশ অনেক সময় খাবারও ফেলে দেয়। তাই যথাসময় খাবার না পৌঁছানোর কারণে কষ্ট হয়।
তবে এটাও ঠিক যে, কিছু নিম্ন রুচিবোধসম্পন্ন, অতিলোভী এজেন্সি বা দায়িত্বশীলের পরিকল্পিত কৃত্রিম সঙ্কটেও খাবারের কষ্ট হয়।
লেখক: খতিব, মসজিদ আল মাগফিরাহ, উত্তরা, ঢাকা
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
এমএইউ/