মাথা মুণ্ডন করা বা চুল ছাঁটা প্রসঙ্গে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আর তোমরা মাথা মুণ্ডন করো। এতে প্রত্যেক চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব ও একটি গোনাহের ক্ষমা রয়েছে।
তবে মাথা মুণ্ডন করা উত্তম। কোরআনে কারিমে আগে মাথা মুণ্ডন করার কথা বলা হয়েছে, পরে চুল ছোট করার কথা এসেছে। নবী করিম (সা.) নিজে মাথা মুণ্ডন করেছেন। যারা মাথা মুণ্ডন করে তাদের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করেছেন তিনবার, আর যারা চুল ছোট করে তাদের জন্য দোয়া করেছেন একবার।
চুল কাটার অর্থ হলো- সমস্ত মাথা থেকে কমপক্ষে এক আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ অথবা এক ইঞ্চি পরিমাণ কেটে ফেলা। চুল কম থাকলে মুণ্ডন করতে হবে। মাথার কমপক্ষে এক চতুর্থাংশ চুল মুণ্ডন করলে বা কাটলে ওয়াজিব আদায় হবে, তবে মাকরুহে তাহরিমি হবে। মাথায় টাক থাকলে ব্লেড বা ক্ষুর মাথায় চালিয়ে দিলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।
যারা একাধিকবার ওমরা করেন, তাদের জন্যে উত্তম হলো- প্রথমবার মাথা ন্যাড়া করা। দ্বিতীয় বার যখন মাথার চুল থাকবে না, তখন মাথার ওপর শুধু ক্ষুর ঘুরিয়ে নেওয়া, এভাবে প্রত্যেকবার কেবল ক্ষুর ঘুরিয়ে নেওয়া ওয়াজিব। ক্ষুর ঘোরানোর অর্থ, চুল না কাটলেও কাটার মতো করে ক্ষুর টানা।
ক্ষতের কারণে ক্ষুর ঘোরানো সম্ভব না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ওয়াজিবের দায় থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তবে এরূপ ব্যক্তির ১২ জিলহজ পর্যন্ত হালাল না হওয়া এবং ইহরামে থাকা উত্তম।
নারীদের মাথা মুণ্ডন করা হারাম। তারা পুরো মাথার চুল একত্রে ধরে এক আঙ্গুল বা এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটবেন।
হজের ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য মিনাতে বসে মাথা মুণ্ডন করা সুন্নত।
কাটা চুল গোসলখানা কিংবা পায়খানায় ফেলে দেওয়া মাকরূহ। কোনো স্থানে সুন্দরভাবে রেখে দিতে হবে। এ বিধান হজ ছাড়াও সব সময়ের জন্য প্রযোজ্য।
হজের ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য মাথা মুণ্ডন করার পর সেলাই করা পোশাক ও সুগন্ধি ব্যবহার বৈধ, কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর বিশেষ সম্পর্ক এখনও হারাম। ফরজ তওয়াফের পরই কেবলমাত্র স্বামী-স্ত্রীর বিশেষ সম্পর্ক হালাল হবে।
মাথা মুণ্ডন করা ছাড়া কেউ ফরজ তওয়াফ করলে তওয়াফ হবে বটে, তবে তাতে সুন্নতের খেলাফ হবে। সুগন্ধি ব্যবহার ও পোশাক পরিধান না করার কারণে।
নাপিত দ্বারা কিংবা নিজেরাও চুল ছাঁটা যায়। যার মাথা মুণ্ডন করার আগের কাজসমূহ শেষ হয়েছে তিনি নিজের মাথা যেমন মুণ্ডন করাতে পারবেন তেমনি অন্যদের মাথাও মুণ্ডন করতে পারবেন। প্রথমে নিজের মাথা মুণ্ডন করা জরুরি নয়।
মাথা মুণ্ডন কিংবা চুল কাটার সময় হলো- ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ পর্যন্ত এবং এর স্থান হচ্ছে হারামের ভেতর ভাগ। হারামের বাইরে কেশ মুণ্ডন করলে কম ওয়াজিব হবে।
মাথা মুণ্ডন কিংবা চুল না কাটলে ইহরাম অবস্থায় যা হারাম ছিলো- তা হালাল হবে না। যদিও তওয়াফ করে নেয়।
হাজিদের মিনায় মাথা মুণ্ডন কিংবা চুল কাটা সুন্নত। চুল কাটার সময় কেবলামুখি হয়ে বসা এবং মাথার ডান দিক দিয়ে শুরু করা সুন্নত।
যে ব্যক্তি ইফরাদ হজ করেন, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। কিন্তু প্রথমে কঙ্কর নিক্ষেপ এবং পরে মাথা মুণ্ডন করানো কিংবা চুল কাটা তার ওপর ওয়াজিব।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৭
এমএইউ/এসএইচ/জেএম