হজের অন্যতম ফরজ হলো- আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা। হজপালনকারীদের যারা সৌদি আরবে এসে অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদেরকে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে আনা হবে।
হজের আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে সকালে হাজিরা মিনা থেকে রওনা হয়ে আরাফাতের ময়দানে পৌঁছাবেন। লাখো হাজির কণ্ঠে ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়াননিমাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাকা’ ধ্বনিতে মুখরিত থাকবে আরাফাতের ময়দান।
আরাফাহ ও আরাফাত এই দু’টো শব্দই আরবিতে প্রচলিত। এই ময়দান দৈর্ঘ্যে দুই মাইল, প্রস্থেও দুই মাইল। এই বিরাট সমতল ময়দানের নাম আরাফাত। ময়দানের তিন দিক পাহাড়বেষ্টিত। আরাফাতের ময়দানে হাজিরা জোহরে ও আসরের নামাজ একত্রে আদায় করবেন।
৯ জিলহজ সকাল থেকে পুরুষ হাজিরা উচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করবেন, নারীরা তাকবির পাঠ করবেন নিম্ন আওয়াজে। তাকবির হলো- ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ। ’ ১৩ জিলহজ আসরের নামাজের পর পযর্ন্ত তাকবির বলা ওয়াজিব। আরাফাতের ময়দানের ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। আমরা জানি, প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) কে আল্লাহতায়ালা জান্নাতে সৃষ্টি করেন। পরে তার একাকিত্ব দূর করার জন্য আল্লাহতায়ালা হজরত আদম (আ.)-এর বাঁ পাঁজর থেকে সৃষ্টি করেন হজরত হাওয়া (আ.) কে। তারা জান্নাতে বসবাস করতে থাকেন। কিন্তু অভিশপ্ত শয়তান তাদেরকে বিভ্রমে ফেলে নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ায়। ফলে তাদেরকে পৃথিবীতে অবতরণ করানো হয়। হজরত আদম (আ.) বর্তমান শ্রীলঙ্কার একটি পাহাড় চূড়ায় এবং হজরত হাওয়া (আ.) জেদ্দায় অবতরণ করেন। প্রায় সাড়ে তিন শ’ বছর ধরে তওবা-ইস্তিগফার ও কান্নাকাটির পর আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন। দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর তারা মিলিত হলেন যে স্থানটিতে, সেই স্থানটির নামকরণ হয় আরাফাত। আরাফা অর্থ পরিচিত হওয়া। আরাফাতের ময়দানে পাশের পর্বতের নাম- জাবালে রহমত।
এই ময়দানে ৬৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রিয় নবী হজরত মুহম্মাদ (সা.)-এর নিকট হজ বিধান নাজিল হলে তিনি ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে এক লাখ চল্লিশ হাজার সাহাবিসহ হজ পালন করেন।
নবী করিম (সা.) ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে উটের পিঠে আরোহণ করে বিদায় হজের খুতবা দিয়েছিলেন। ওই খুতবা মানবতার ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক হয়ে আছে।
ওই খুতবার অনুসরণে আরাফাত ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে হজের খতিব উপস্থিত হাজিদের উদ্দেশে খুতবা প্রদান করবেন। স্থানীয় সময়ানুসারে সাধারণত খুতবা শুরু হয় দুপুর সোয়া ১২টায়। এবার হজের খুতবা দেবেন শায়খ ড. আবদুর রহমান সুদাইস।
খুতবার পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত তালবিয়া, তাহমিদ, দোয়া-দুরুদ, ইসতেগফার ও আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতে হবে। আরাফাতের ময়দান থেকে হাজিরা সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজ না পড়েই মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হবেন। মুজদালিফায় পৌঁছার পর মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে আদায় করবেন। মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও এশা একত্রে পড়াটা হজের আহকাম। এ রাতে (৯ তারিখের দিবাগত রাত) মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে ঘুমাতে হবে। পরে ফজর পড়ে সূর্যোদয়ের আগে আবার মিনার উদ্দেশে যাত্রা করতে হবে। মুজদালিফা প্রান্তর থেকে ন্যূনতম ৪৯ টি পাথর (ছোট) সঙ্গে আনতে হবে শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য।
হজপালনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সৌদি কর্তৃপক্ষ সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। হাজিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মিনা ও আরাফাতের পথে কিছু দূর পরপর রয়েছে হাসপাতাল। রয়েছে দমকল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। আরাফাতের ময়দানে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সব হাজিকে বিনামূল্যে খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ সব সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানও হাজিদের নানা উপহার দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৭
এমএইউ/