কিন্তু হজ পালনে এসে বাংলাদেশি হাজিরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হন। তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন।
হাজিদের নিয়ে নানামুখি বাণিজ্য হয়, আর বাণিজ্যের নিষ্ঠুর শিকার হয়ে তাদের হয়রানি পোহাতে হয়। এমনই এক বাণিজ্যের নাম ‘ফেতরা। ’ এই ফেতরা রমজানের ঈদের আগে সামর্থবান কর্তৃক প্রদত্ত ফেতরা নয়, এটা হাজিদের দুর্ভোগের এক নতুন মারণাস্ত্রের নাম।
ফেতরা অর্থাৎ শিফটিং পদ্ধতি। অতি মুনাফাখোর কিছু বেসরকারি হজ এজেন্সি পবিত্র হজের আগে বা পরে হাজিদের কিছুদিন দূরে ও কিছুদিন কাছে রাখে। যেমন, একজন হাজির প্যাকেজ হলো ৩৮ দিনের। তিনি হয়তো এসেছেন হজের ১৫ দিন আগে। এখন এজেন্সিওয়ালা তাকে মক্কা থেকে বেশ দূরে আজিজিয়া, শৌকিয়া, কাকিয়া কিংবা জাবালে নূর এলাকাসহ অন্য কোনো দূরের বাড়িতে রাখল। সেখান থেকে মসজিদে হারামে আসতে বাস বা ট্যাক্সি ছাড়া উপায় নেই। ১৫ দিন পর হজের আনুষ্ঠানিকতার জন্য মিনা-মুজদালিফা-আরাফা ও মিনায় কাটে ৫ দিন। মিনা থেকে আসার পর ১০ দিন হারাম শরিফের কাছের বাসায় রাখে। এর পর ৮ দিন মদিনায় রেখে বাংলাদেশে পাঠায়। এভাবে বাসা শিফটিং পদ্ধতিকে ফেতরা বলা হয়।
অনেক সময় ফেতরা এতটাই অমানবিক হয় যে, এজেন্সি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাজিদের রীতিমতো মারামারি হয়। ফেতরা করা হলেও বাসা নেওয়া হয় পাহাড় বা টিলায়।
কয়েক বছর আগ পর্যন্ত ফেতরা পদ্ধতি বাংলাদেশি হাজিদে জন্য চালু ছিলো না। কিন্তু সরকার ঘোষিত হজ প্যাকেজের চেয়ে কম টাকায় হজ করানোর লোভ দেখিয়ে সহজ-সরল হাজিদের হজের আগে বা পরে মক্কায় হোটেল বা বাসা পরিবর্তন করে ব্যবসায় ভারসাম্য আনতে এমন পন্থা বেছে নেয় অনেক এজেন্সি। এটা রীতিমতো প্রতারণা।
ফেতরা করে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য হজ এজেন্সিওয়ালাদের একাংশ হাজিদের একেবারে শেষভাগে সৌদি পাঠান এবং এই প্রবণতা এতটাই বেড়েছে যে, এ কারণে এবার একের পর এক হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। পরে হাজি পাঠানোর সুবিধা হলো, পবিত্র হজের পর বাসা বা হোটেল পরিবর্তনে যত বেশি দেরি হবে, ততবেশি মসজিদে হারামের কাছাকাছি বাসা বা হোটেলের ভাড়া কমতে থাকবে, অর্থাৎ হজ পরবর্তী সময়ে বাসা বা হোটেল পরিবর্তন যত দেরি হবে, তত বেশি লাভ করবে এজেন্সি।
ক্ষেত্র বিশেষে হাজিদের কিছুদিন কাছে ও কিছুদিন দূরে রাখার কথা বলা হয়। কিংবা প্রয়োজনে মক্কায় বাসা বা হোটেল পরিবর্তনের বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়। তবে সেটা থাকে অস্পষ্ট। হয়তো বলা হলো, বাসা আপাতত একটু দূরে নিচ্ছি, কয়েকদিন পর কাছে নেব। কিন্তু যে আগে হজে আসেনি, তার তো ওই একটু দূর সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। ফলে তিনি এর কোনো সুরাহা করতে পারেন না। শেষ মেষ, আল্লাহর ওপর ভরসা করে নীরবে চোখের পানি ফেলেন।
অনেক এজেন্সি আবার দূরে বাসা নিয়ে প্রত্যহ হারাম শরিফে যাওয়া-আসার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করেন, কিংবা ভাড়া বাবদ সামান্য কিছু টাকা ফেরৎ দেন। কিন্তু প্রতিদিন হারাম শরিফে যাতায়াতে এজেন্সির দেওয়া টাকার চেয়ে বেশি ব্যয় হয়ে যায়। ফলে দেখা যায়, অনেক সময় টাকার অভাবে সকালের নাস্তা খাওয়া হচ্ছে না, কিংবা প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনা হচ্ছে না। হজ শেষে শখের বশে কিছু বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা না হয় বাদই রইল।
৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ মোট পাঁচ দিন বাদে হাজিদের মক্কায় প্রবেশের দিন থেকে মক্কা হতে বিদায়ের দিন পর্যন্ত মক্কায় অবস্থানকালীন সময়ে প্রতিদিন মসজিদে হারামে জামাতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার প্রয়োজনে যা করা দরকার, হজ এজেন্সি কর্তৃপক্ষের অনেকেই তা করে না।
অথচ, দূরের হোটেল বা বাসা থেকে প্রত্যেহ হারাম শরিফে যাতায়াতে গাড়ির ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও সৌদি সরকারের নির্দেশ মেনে নিয়ে বাংলাদেশের সকল হজ এজেন্সি বাংলাদেশ সরকারের নিকট অঙ্গীকারনামা দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৭
এমএইউ/জেডএম