ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

রহমতের পাহাড়ে হাজিদের ভিড়, লিখে আসছেন মনের বাসনা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
রহমতের পাহাড়ে হাজিদের ভিড়, লিখে আসছেন মনের বাসনা জাবালে রহমত বা রহমতের পাহাড়। ছবি: মুফতি এনায়েতুল্লাহ

মক্কা নগরী থেকে: মক্কা নগরীর পথে-প্রান্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ইসলাম ধর্মের প্রচুর ঐতিহাসিক নিদর্শন। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মক্কায় সমবেত হাজিরা হজ শেষের এই অবসর সময়ে ঘুরে ঘুরে দেখছেন সেসব ঐতিহাসিক স্থান।

একে জিয়ারা (পরিদর্শন) বলা হয়। হজে এসে জিয়ারা করেন না, এমন লোকের সংখ্যা খুব কম।

রোহিঙ্গাদের জন্য পবিত্র কাবায় বিশেষ দোয়া ও নফল তাওয়াফ

তবে এসব স্থানে ধর্মীয় রীতি পরিপন্থি কোনো কিছু করতে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে কঠিনভাবে বারণকরা হয়। তারপরও কাউকে কাউকে দেখা যায়, সেখানে অতি আবেগি কর্মকাণ্ড ঘটাতে। আর এসব কাজ বেশিরভাগ করেন, ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আসা হাজিরা।
 
সিঁড়ি বেয়ে হাজিরা রহমতের পাহাড়ে উঠছেন।  তেমনি একটি ঐতিহাসিক স্থান জাবালে রহমত বা রহমতের পাহাড়। এর অবস্থান মক্কার পূর্ব দিকে মসজিদে হারাম থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে। শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ(সা.) এখানে দাঁড়িয়ে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। পাহাড়টি গ্রানাইড পাথরে গঠিত, উচ্চতা প্রায় ৭০ মিটার।

এই পাহাড়ের চতুর্দিকে দৈঘ্য-প্রস্থে দুই মাইল সমতল ভূমিকে আরাফাতের ময়দান বলা হয়। অবশ্য আরাফাতের পাহাড়ের মাধ্যমে সমগ্র এলাকাকে বোঝানো হয়। হজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে এই স্থান মুসলমানদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
 
জাবালে রহমতের ওপর দেখে আরাফাতের ময়দানের দৃশ্যআরাফাতের ময়দানের তিন দিক পাহাড়বেষ্টিত। ময়দানের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে মক্কা হাদা তায়েফ রিং রোড। এই সড়কের দক্ষিণ পাশে আবেদি উপত্যকায় মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। উত্তরে সাদ পাহাড়।

সেখান থেকে আরাফাত সীমান্ত পশ্চিমে প্রায় এক কিলোমিটার। সেখান থেকে দক্ষিণে মসজিদে নামিরায় গিয়ে আরাফাত সীমান্ত শেষহয়েছে।
 
এক নারী দশনাথী মনোবাসনা পূরণের নিমিত্তে মনে কথা লিখে চলছেন আপন মনেজাবাল মানে পাহাড়। জাবালে রহমত হলো- রহমতের পাহাড়। এই পাহাড়ের ওপর একটি উঁচু পিলার আছে। একে কেউ কেউ দোয়ার পাহাড়ও বলেন। এছাড়া আরও বেশ কিছু নাম রয়েছে পাহাড়টির। ওপরের পিলারের কাছে যাওয়ার জন্য পাহাড়ের গায়ে সিঁড়ি আছে। পাথরের সিড়িগুলো বেশ প্রশস্ত।
 
পাহাড়ের ওপরটা মোটামুটি সমতল। তবে পাহাড়ের ওপরের পিলারে লেখা আছে, ওই পাহাড়ে উঠে কী করা যাবে, আর কী করা যাবে না। নির্দেশনায় কয়েকটি ভাষার মাঝে বাংলা ভাষাও ব্যবহার করা হয়েছে।
 
সৌদি সরকারের নিয়োজিত পুলিশ দর্শনার্থীদের এসব মনে করিয়ে দিতে সদা তৎপর। যেমন বলা আছে, আপনি এই স্তম্ভের দিকে ফিরে নামাজ পড়বেন না, দোয়া করবেন না, পিলার ধরে চুমু খাওয়া যাবে না। নামাজ পড়তে হলে কিংবা দোয়া করতে হলে একমাত্র কাবার দিকে ফিরে নামাজ পড়তে হবে।
 
তার পরও দর্শনার্থীরা কম যান না, পাহাড়ের গায়ে আরবী, ইংরেজি, উর্দু ও বাংলায় অনেক কিছু লিখে রেখেছে। এমনকি অনেককে দেখা গেলো, কলম নিয়ে গেছেন- সেখানে মনের কথা লিখে রাখার জন্য। যারা কলম নেননি, তারা হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্রচণ্ড রোদে বসে মনের কথা লিখে রাখছেন।
 
কথা হয় অতুফা বেগমের সঙ্গে। তিনি ভারতের কেরালা থেকে হজে এসেছেন। বয়স ষাটের কাছাকাছি। তিনি এখানে যাকে পাচ্ছেন, তার কাছেই ছেলের সুস্থতার জন্য দোয়া চাইছেন। তাকে বললাম, ‘মাজি! আপ মাক্কামে যা কর কিঁউ দোয়া নেহি মাঙতে?’ উত্তরে কেঁদে বললেন, ‘ব্যাটা, এতো রহমত কা পাহাড় হে, ইহাভি ম্যায় আল্লাহকে রহমত মাঙনে আয়া। মক্কামে ভি চাহা। ’জাবালে রহমতে স্থাপিত পিলার, যেখানে লেখা আছে এখানে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না।
 
পাহাড়ের পাদদেশে একটি সাইনবোর্ডে বিভিন্ন ভাষায় পাহাড়ের নাম লেখা আছে, তন্মধ্যে বাংলা ভাষায় লেখা আছে- রহমতের পাহাড়। প্রচুর পাকিস্তানিকে দেখা গেলো- তসবিহ, আংটি, কলম ইত্যাদির পাসরা সাজিয়ে বসে আছেন। বোরকাবৃত কিছু নারী ‘সাদাকা লিল্লাহি’ বলে ভিক্ষা চাইছেন, আর বাচ্চারা চাইছে, ‘ইয়াল্লা বাবা হাজি’ বলে। লোকজন দানও করছে প্রচুর।
 
মক্কা থেকে আরাফাতের ময়দানে যাতায়াতের জন্য একাধিক রাস্তা আছে। বাসের পাশাপাশি ট্রেনও আছে। তবে ট্রেন শুধু হজের কয়েকদিন যাত্রী সেবা দেয়। অন্য সময় বন্ধ থাকে।
 
আরাফাতের ময়দানজুড়ে রয়েছে সারি সারি নিমগাছ। আরবি ড্রাইভার জালাল আল বুহাইর আমাদের জানালেন, এসব গাছ নাকি বাংলাদেশ থেকে এনে রোপণ করা হয়েছে।
 
রহমতের পাহাড়ের স্থান নির্দেশক সাইনবোর্ড, এখানে স্থান পেয়েছে বাংলা ভাষাও।  ছবি: মুফতি এনায়েতুল্লাহ বলা হয়, জাবালে রহমতের এই স্থানে হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.)-এর সাক্ষাত হয়েছিলো। কিন্তু এর পক্ষে কোনো শক্তিশালী প্রমাণাদি মেলে না। আরাফাতের ময়দানে আদম-হাওয়ার সাক্ষাতস্থল হিসেবে কোনো স্থান নির্ধারিত নেই এবং এমন কোনো বিষয় প্রমাণিতও নয়।
 
তবে হ্যাঁ, আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমতের পাহাড়ে স্থাপিত সাদা রংয়ের ছোট পিলারটি জাবালে রহমতকে চিহ্নিত করার জন্য স্থাপিত। যেহেতু আরাফাতে সবদিকেই পাহাড়, এর মধ্যে কোন পাহাড়টা জাবালে রহমত, যার পাদদেশে হজরত রাসূলে কারিম (সা.) বিদায় হজের খুতবা দিয়েছিলেন, তা যেন লোকেরা সহজে চিনতে পারেন এজন্য এই চিহ্ন সেখানে স্থাপন করা হয়েছে।
 
লক্ষাধিক সাহাবির উপস্থিতিতে বিদায় হজের ভাষণ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কসওয়া নামক উটে আরোহণ অবস্থায় দিযেছিলেন। ওই উটের পীঠে অবস্থানকালীন সময় কোরআনের আয়াত নাজিল হয়, ‘আজ তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং আমার নিয়ামতকে তোমাদের ওপর যথেষ্ট করে দিলাম, আর আমি ইসলাম ধর্মের ওপর সন্তুষ্ট। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
এমএইউ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।