ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ধর্মচর্চার মাধ্যমেই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব

মাওলানা আবদুল জাব্বার, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৭
ধর্মচর্চার মাধ্যমেই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব ধর্মচর্চার মাধ্যমেই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব

সামাজিক মূল্যবোধ তথা সততা, কর্তব্য পরায়ণতা, নিষ্ঠা, ধৈর্য, উদারতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, নান্দনিক সৃজনশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ  ও পারস্পরিক মমতাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলী লোপ পাওয়াকে বলে সামাজিক অবক্ষয়।

বর্তমান পৃথিবীর দিকে তাকালে দেখতে পাই, বিশ্বব্যাপী পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং শিক্ষাঙ্গনসহ সর্বক্ষেত্রে অবক্ষয়ের ছাপ। নৈতিক মূল্যবোধগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।

ভীতসন্ত্রস্ত, অশান্তি ও অস্থিরতা বাড়ছে পুরো পৃথিবীজুড়ে।

সোস্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে গণমাধ্যমের খবরের প্রায় অর্ধেকই সমাজিক অবক্ষয়ের খবর। স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন, স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন, প্রেমিকার হাতে প্রেমিক খুন, প্রেমিকের হাতে প্রেমিকা খুন, ভাইয়ের হাতে ভাই খুন, ছেলের হাতে মা খুন, দুলা ভাইয়ের হাতে শালি খুন, পুত্রের হাতে পিতা খুন ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার খুন, ধর্ষণ, গুমের খবরও কম নয়। বিশেষ করে শিশু ধর্ষণের খবর দেশের সর্বত্রই চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।  

যেখানে নৈতিকতা অনুপস্থিত সেখানে সামাজিক অবক্ষয় সবচেয়ে বেশি। দেশের সর্বাঙ্গে আজ নৈতিকতার অনুপস্থিতির কারণে এমন অবক্ষয় দিনদিন বাড়ছে। রাজনৈতিক অঙ্গন নিপীড়নের শিকার, পদ-পদবীর লোভে মানুষ নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে।  

সামাজিক অবক্ষয়ের অনেক কারণ বিদ্যমান। এসবের অন্যতম হচ্ছে, দেশের সর্বত্র মাদকের জয়কার। মাদক যুব সমাজকে গ্রাস করেছে ভয়ঙ্করভাবে। সামাজিক অবক্ষয়ের অর্ধেক হচ্ছে মাদকাসক্তদের কারণে।

এর সঙ্গে রয়েছে নারী-পুরুষের সম্পর্কজনিত অনাচার। আমরা জানি, বিয়ে দিন দিন কঠিন হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে বিয়ে বর্হিভূত সম্পর্ক, বিবাহ পূর্ব সম্পর্ক, বিবাহের পরে পরকীয়া, যথাসময়ে বিবাহ সম্পন্ন না হওয়া, একক সিদ্ধান্তে বিবাহ দেওয়া ইত্যাদির কারণে নারী-পুরুষ নানাবিধ অনাচারে জড়িয়ে যাচ্ছে।

এ ছাড়া সম্পদের লোভ, নৈতিক শিক্ষার অভাব ও সমাজে হালাল-হারামের অজ্ঞতা সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ।  

সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম মাধ্যম বর্তমান সময়ের নাটক-সিনেমা। এখনতো গানে তুমি-আমি ছাড়া আর কিছু নেই। মোবাইল কোম্পানিগুলো তাদের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেটাকে আরও উসকে দিচ্ছে। ভাবখানা এমন, যেন বন্ধু পাশে থাকলেই হলো- আর কারও প্রয়োজন নেই, বন্ধুত্ব মানেই প্রেম। প্রেমের জন্যই জীবন, আর প্রেম মানেই বেহায়াপনা। জীবনের আর কোনো লক্ষ্য নেই! ঠিক একইভাবে ইন্টারনেট মানেই ফেসবুক, ফেসবুক মানেই ফেক আইডি আর মিথ্যের ছড়াছড়ি! বন্ধুত্ব-প্রলোভন, প্রেম অতঃপর বাস্তবতার ঘাড়ে রক্তাক্ত অন্তর।  

বস্তুত সমাজের চলমান অবক্ষয়ের মূলে রয়েছে ধর্মহীনতা, অসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব এবং সর্বগ্রাসী অশ্লীলতার মতো আরও কিছু বিষয়। ধর্মহীনতার সংস্কৃতি, ধর্মের অনুশীলন কখনোই ধর্মান্ধতা নির্দেশ করে না বরং ধর্মই পারে ধর্মান্ধতার অভিশাপ মুক্ত করতে। ধর্ম মানুষের জীবন প্রণালী অন্যান্য প্রাণীর থেকে আলাদা করেছে। মানুষকে সভ্য করেছে। আজ ধর্মকে ত্যাগ করে মানুষ পুনরায় অসভ্য-বর্বরতার যুগে ফিরে যাচ্ছে। সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে মানুষ ধর্মকে মনে করে এগিয়ে চলার পথের প্রধান অন্তরায়।

অথচ ইতিহাস সাক্ষী দেয়, প্রতিটি সভ্যতা গড়ে উঠেছিল কোনো না কোনো ধর্মকে আশ্রয় করে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন একটি সভ্যতার খোঁজও মেলে না, যেটি ধর্মহীনতাকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে।  

পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধও সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম এক কারণ। এখনতো পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের বালাই নেই সমাজের কোথাও। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের জায়গাটিও দখল করে নিয়েছে ঈর্ষা আর স্বার্থের দ্বন্দ্ব। যা আনন্দঘন পরিবেশকে করে তুলছে রণক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে সন্তানরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অসুস্থ পারিবারিক পরিবেশে সন্তান অস্বাভাবিক মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠছে। এমন অবস্থা কাম্য নয়। সেইসঙ্গে শিক্ষকের ব্যবসায়ী মনোভাবাপন্ন হয়ে উঠা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা, সুশাসনের অভাব, পারস্পরিক দূরত্ব বৃদ্ধি, দায়িত্ব এড়িয়ে চলার প্রবণতা, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, সমাজে পেশিশক্তির প্রভাব, বিচারহীনতার সংস্কৃতি। সর্বোপরি লাগামহীন অশ্লীলতা তরুণ সমাজকে চরম অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।  

এই সর্বগ্রাসী সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা। সেই সঙ্গে ধর্মীয় অনুশাসনের অনুশীলন, পরমত সহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করাসহ সর্বক্ষেত্রে অশ্লীলতাকে শুধু বর্জন নয়; প্রতিরোধ করা আজ সবার দায়িত্ব হয়ে পড়েছে।

যার শুরুটা হতে হবে গৃহাভ্যন্তর থেকে। এটা সবার মনে রাখা দরকার, সামাজিক সমস্যা দূর করতে রাষ্ট্রের সহযোগিতার হয়তো প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু মূল দায়িত্ব পরিবার তথা সমাজকেই নিতে হবে। সন্তানকে সময় দিতে হবে, তাকে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। তার বন্ধুদের সম্পর্কে জানতে হবে। তাকে নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে।  

নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে সন্তানদের আদর্শবান নাগরিক ও সত্যিকারের মুসলিম হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে মরণব্যাধি অবক্ষয় থেকে দেশ, জাতি ও সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব। এর কোনো বিকল্প নেই।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।