ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

শুধু রবিউল আউয়ালে নয়, নবীপ্রেম জাগ্রত হোক সর্বদা

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৭
শুধু রবিউল আউয়ালে নয়, নবীপ্রেম জাগ্রত হোক সর্বদা শুধু রবিউল আউয়ালে নয়, নবীপ্রেম জাগ্রত হোক সর্বদা

শুরু হয়েছে হিজরি বর্ষপঞ্জির তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম ও ওফাতের মাস হিসেবে রবিউল আউয়াল মুসলিম মানসে বিশেষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত।

রবিউল আউয়াল মুসলিম উম্মাহকে উজ্জীবিত করে। মুসলমানদের মধ্যে নবীপ্রেমের চেতনাবোধকে জাগ্রত করে।

 

পৃথিবীর মানুষ যখন নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে পশুত্বের রূপ ধারণ করে চলছিলো, ঠিক সেই সময়ে একজন রাসূল হিসেবে মুহাম্মদ (সা.) দুনিয়াতে আগমন করেন।  

মক্কার তৎকালীন সম্ভ্রান্ত বংশের নেতৃস্থানীয় পরিবারে আবদুল মুত্তালিবের নাতি হিসেবে তিনি ইহজগতে আগমন করেন। গর্ভে থাকা অবস্থায় তিনি পিতা আবদুল্লাহকে হারান এবং শিশুকালেই তিনি মাকে হারিয়ে চাচার কাছে লালিত-পালিত হন।  

মানুষের ভালোবাসায় শিশু মুহাম্মদ (সা.) বড় হতে থাকেন। ছোট সময় থেকেই তার মেধা, যোগ্যতা, আমানতদারি ও বিশ্বস্ততার কারণে এলাকায় তিনি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেন। এক পর্যায়ে মক্কার লোকেরা তাকে ‘আল আমিন’ পদবিতে ভূষিত করেন। সবাই তার কাছে ধনসম্পদ আমানত রাখেন এবং বিভিন্ন সমস্যায় তার কাছ থেকে সমাধান গ্রহণ করেন।  

নবুওয়ত প্রাপ্তির পর পূর্ব থেকে চলে আসা মূর্তি পূজার বিরোধিতা করার কারণে সর্বপ্রথম তিনি প্রতিরোধের মুখে পড়েন। গোটা জীবন তিনি নানা প্রতিকূলতার সম্মুখিন হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর একত্ববাদের কথা প্রচার করে যান। তার জীবনে বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।  

নবী মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেছেন। মদিনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর মদিনা সনদ প্রণয়নের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান প্রণেতা হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তার পুরো জীবনীতে রয়েছে মানবজাতির জন্য শিক্ষণীয় বিষয়। তাই নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী সবার জানা একান্ত প্রয়োজন।  

বস্তুত নবী মুহাম্মদ (সা.) এমন একটি প্রিয় নাম, যা প্রত্যেক মুসলিম তার অন্তরে গভীর ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করে থাকেন। আমলের দিক দিয়ে যত কমতিই থাকুক, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা সবার মধ্যে কমবেশি অবশ্যই আছে। আমলের দিক দিয়ে যে যত বেশি অগ্রসর এ ভালোবাসা তার অন্তরে তত গভীর। এ ভালোবাসার কোনো তুলনা নেই, পরিমাপ করে বুঝানোরও উপায় নেই।  

মুমিনের অন্তরে যে সব কারণে আল্লাহতায়ালার ভালোবাসা গভীর, সে সব কারণেই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা গভীর হওয়া স্বাভাবিক। এটা ঈমানের দাবীও বটে।

প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের পথ হলো- তার দেখানো রাস্তা ও রেখে যাওয়া আদর্শের অনুসরণ, অনুকরণ ও আনুগত্য।  

আমরা জানি, হজরত মুহাম্মদ (‍সা.) বিশ্বের জন্য শান্তির দূত হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন। সারা জীবন তিনি মানুষকে আত্মসংযমের দীক্ষা দিয়ে গেছেন। তার নীতি, আদর্শ ও চারিত্রিক মাধুর্যের কারণে বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত, কলহ-বিবাদপ্রিয়, সামাজিক ও নৈতিকভাবে অধঃপতিত বর্বর আরব জাতি একটি সুমহান জাতিতে পরিণত হয়।

নবী করিম (সা.) উৎপীড়িত ও অত্যাচারিত মানুষের প্রকৃত বন্ধু ছিলেন। তার কারণে আরব জাহানে নবজীবন সঞ্চারিত হয়, নতুন সংস্কৃতির উন্মেষ ঘটে, নবীন সভ্যতার গোড়াপত্তন হয় এবং উদ্ভব ঘটে একটি নতুন জীবনব্যবস্থার। যা কালক্রমে বিভিন্ন দেশের জীবনধারাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।  

হাল সময়েও হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) জীবনাদর্শ অনুসরণ করেই সব ধরনের অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।  জাতিতে জাতিতে মিলেমিশে বসবাস করা সম্ভব। গড়ে তোলা সম্ভব এক সুন্দর পৃথিবী।  

বিশ্বের বর্তমান বাস্তবতায় মহানবী (সা.)-এর পথ অনুসরণ করলে, রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিজীবনে তার আদর্শের প্রয়োগ শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে পারে বলেই আমরা মনে করি।  

বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থায় যারা সাধারণ মানুষের সারল্য ও ধর্মবিশ্বাসকে মূলধন করে তাদের ওপর ইসলামের নামে অন্ধত্ব-গোঁড়ামি চাপিয়ে দিতে উদ্যত, সত্য ধর্মের প্রকৃত অনুসারীদের তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। প্রচার করতে হবে মহানবী (সা.)-এর সত্যবাদিতা, ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার কথা। শুধু রবিউল আউয়াল মাসে নয়, ইসলামের সত্যস্বরূপ উদ্ভাসিত হোক সব মুসলমানের হৃদয়ে সর্বদা।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।