শহরটির আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাও বেশ উন্নত। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা মিলেমিশে বসবাস করেন।
নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের উত্তর-পশ্চিমের প্রান্তিক নগরী বাফেলো। বলছি এই শহরটির কথা। প্রায় তিন লাখ লোকের শহর বাফেলো আরাম-আয়েশের কারণে অনেকের কাছে যাদুর শহর হিসেবে পরিচিত। নিউইয়র্ক থেকে ৩৭৫ মাইল দূরত্বের বাফেলোর আয়তন ৫২ বর্গমাইল।
বাফেলো সিটির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে ১৫ মিনিটের মতো সময় ব্যয় হয়। এর কারণ নিরিবিলি এ শহরের কোথাও ট্রাফিক জ্যাম নেই।
শহরটিকে বর্তমানে ৮/১০টি হালাল গ্রোসারিসহ প্রায় ১৫/১৬টি মসজিদ রয়েছে। খুব শিগগিরই হালাল সুপার মার্কেট নামে একটি বড় স্টোর চালু হবে।
এক সময় পুরো বাফেলো সিটি ছিলো- রিলিজিয়ন নগরী। আগেকার লোকেরা ধর্মকর্ম বেশি পালন করতো। বর্তমানে তারা উল্টো পথে চলার কারণে গির্জায় লোকজন শূন্যের কোঠায়। তাই বাধ্য হয়ে গির্জা কর্তৃপক্ষ গির্জাগুলো মুসলিমদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। মুসলমানরা চার্চগুলো কিনে মসজিদ-মাদরাসা ও ইসলামি সেন্টার বানাচ্ছে।
অন্যদিকে নিউইয়র্ক থেকে কম খরচে এ শহরে বসবাসের সুবিধা থাকায় তুলনামূলক নতুন অভিবাসী মুসলিমরা এ শহরে ভিড় করছেন। এভাবে দ্রুতগতিতে মুসলিমদের প্রবেশের ফলে বাফেলোর মানচিত্র দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।
শহরটি আগে ছিলো- কালোদের দখলে। এখন ধীরে ধীরে চলে আসছে বাংলাদেশিসহ মুসলিমদের দখলে। এ পর্যন্ত তাদের অনেক বড় বড় গির্জা মসজিদে রূপ নেওয়ার পাশাপাশি শহরের উপকেন্দ্রে বড় একটি জেলখানা কিনে বিশাল মাদরাসা বানানো হয়েছে। বাফেলোর মুসলমানরা নগদ অর্থ দিয়ে বাড়িঘর কিনছে। সুদের মতো জঘন্যতম পাপ থেকে তারা মুক্ত।
বাফেলোর ইস্ট সাইট এলাকায় জাকারিয়া মসজিদ ও মারকাজকে ঘিরেই মূলত বাংলাদেশিদের বসতি শুরু। আশেপাশে কয়েকশ’ বাংলাদেশি, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও বার্মিজ মুসলিম পরিবারের বাড়িঘর রয়েছে।
এ শহরের অধিবাসীদের মতে, পুরো আমেরিকার মধ্যে বাফেলো হচ্ছে- মুসলমানদের বসবাসের জন্য সর্বসেরা শহর।
২৫/২৬ বছর আগে জাকারিয়া দারুল উলুম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে ভারতীয় এক ধার্মিক চিকিৎসক। বর্তমানে ছেলেদের মাদরাসায় প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে।
তারা ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের সিলেবাসকে আমেরিকার মূলধারার সিলেবাসের সঙ্গে সমন্বয় করে পড়ালেখা করছে। এ মাদরাসা থেকে প্রতিবছর প্রচুর শিক্ষার্থী হাফেজে কোরআন হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের মহিলা মাদরাসায় প্রায় আড়াই শত ছাত্রী রয়েছে। তারাও আলেম-হাফেজ হচ্ছেন। এ মাদরাসায় থাকা-খাওয়াসহ সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
বাফেলো শহরে মুসলিম নারী ও মেয়েরা হিজাব মাথায় চলাফেরা করেন। হিজাবের আধিক্যের কারণে এ শহরকে হিজাবের নগরীও বলা হয়। অনেকে বলেন, শহরের ইসলামি পরিবেশ, আইন-কানুনের যথাযথ ব্যবহারের ফলে সন্ত্রাসসহ নানাবিধা ভয়ভীতি থেকে মুক্ত এ শহর।
বাফেলোতে মারকাজ মসজিদ তাবলিগ জামাতের প্রধান কার্যালয় হিসেবে পরিচিত। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার মাগরিবের নামাজের পর এখানে মুসল্লিদের উপস্থিতিতে বিশেষ বয়ান হয়। মূলতঃ এ মসজিদে বাংলাদেশিদের আনাগোনা বেশি। মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিনসহ ৯০% ভাগ মুসল্লি বাংলাভাষী। এ মসজিদকে ঘিরে বিয়ে-ওয়ালিমা ও আকিকাসহ ধর্মীয় যেকোনো আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এর সব ব্যবস্থা রয়েছে।
বাফেলোর উল্লেখযোগ্য মসজিদগুলো হলো- বার্মিজ মসজিদ, বায়তুল মোকাররম, মারকাজ মসজিদ, মসজিদে তাকওয়া, জাকারিয়া মসজিদ, লাককুয়ানা (ইয়েমেনি), কানেক্টিকাট ও মিনার মসজিদ।
এসব মসজিদের মধ্যে জাকারিয়া মসজিদটি বিশাল গির্জা কিনে সিকি শতাব্দী পূর্বে মসজিদে রূপান্তর করা হয়। এ মসজিদে পুরুষ-মহিলা মিলিয়ে প্রায় বারো শ’ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৭
এমএইউ/