সূরা আসরে বলা হয়েছে, ‘সময়ের কসম। মানুষ আসলে খুবই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।
সূরা আসর কোরআনে কারিমের সংক্ষিপ্ত একটি সূরা হলেও এটি মুসলামানদের কাছে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ সূরা। অনকে ইসলামি স্কলারের মতে গভীর চিন্তা-ভাবনাসহ পাঠ করলে মানুষের ইহকাল ও পরকালের সংশোধনের জন্যে এই সূরাটিই যথেষ্ট।
ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, মানুষ যদি এই একটি সূরা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে এটিই তাদের হেদায়েতের জন্য যথেষ্ট।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে হিসন দারেমি আবু মাদিনা বলেন, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিদের মধ্য থেকে যখন দুই ব্যক্তি মিলিত হতেন, তখন তারা একজন অপরজনকে সুরা আসর না শোনানো পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হতেন না। ’ –তাবারানি
এ সূরায় চারটি গুণাবলীর অধিকারী ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে। যারা সময়ের ভেতর অবস্থানকালীন ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে- ঈমান ওয়ালা, সৎকাজ সম্পন্নকারী, পরস্পরকে ভালো কাজের উপদেশ দাতা ও পরস্পরকে ধৈর্য্যধারণ করার উপদেশদাতা।
সূরা আসরের শুরুতে আল্লাহতায়ালা সময়ের কসম করেছেন। আল্লাহ সৃষ্টিকুলের কোনো বস্তুর শ্রেষ্ঠত্ব, অভিনবত্ব প্রকাশের জন্য কখনও কসম খাননি বরং যে বিষয়টি প্রমাণ করার উদ্দেশ্য এই বস্তুটি তার সত্যতা প্রমাণ করে বলেই তার কসম খেয়েছেন। এখানে সময়ের কসম খাওয়ার অর্থ হলো- যাদের মধ্যে উল্লিখিত চারটি গুণ রয়েছে; তারা ছাড়া বাকী সব মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে- সময় সাক্ষী।
সূরায় ‘মানুষ’ বলতে সমস্ত জাতিকে বোঝানো হয়েছে। ‘ক্ষতি’ বলতে সাধারণ অর্থে লাভের বিপরীত হলেও এখানে কল্যাণ ও সফলতাকে বুঝানো হয়েছে। আর সাফল্য ও ক্ষতির হিসেবে চার গুণসম্পন্ন লোক দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গাতেই লাভবান। ওই চারটি গুণ হলো-
১. ঈমান: ঈমানের সমন্বয় হলো- ক. মৌখিক স্বীকৃতি, খ. অন্তরে বিশ্বাস, গ. কাজে পরিণত করা। ঈমানের আসল লক্ষ্য হলো- প্রকৃত ঈমান তথা আমল। শুধু মৌখিক স্বীকারোক্তি নয়। কোরআনে কারিমে ঈমানের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘যারা বলেছে আল্লাহ আমাদের রব তারপর তার ওপর অবিচল হয়ে গেছে। ’ –সূরা হা-মিম সিজদা: ৩০
কোরআনে কারিমের অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আসলে তারাই প্রকৃত মুমিন, যারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে এরপর কোনোরূপ সন্দেহে পতিত হয়নি। ’ –সূরা হুজুরাত: ১৫
২. সৎকাজ: দ্বিতীয় গুণ হলো- সৎকাজ। কোরআনে কারিমের পরিভাষায় সব সৎকাজের অন্তর্ভুক্ত। কোরআনের দৃষ্টিতে যে কাজের মূলে ঈমান আছে এবং যা আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.) প্রদত্ত হেদায়েতের ভিত্তিতে সম্পাদিত হয়েছে; তা সৎকাজ। ঈমানের পর সৎকাজের বর্ণনার অর্থ হলো- ঈমানবিহীন কোনো সৎকাজের পুরস্কার নেই। সৎকাজবিহীন ঈমান একটি দাবী ছাড়া আর কিছুই নয়। ঈমান ও সৎকাজ বীজ আর বৃক্ষের মতো।
৩. সৎকাজ ও ধৈর্য্যধারণ: যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তারা পরস্পরকে হক কথা বলা হক কাজ করা এবং ধৈর্য্যধারণের উপদেশ দিতে হবে। এর প্রাথমিক অর্থ হচ্ছে, ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের পৃথক না থেকে সম্মিলিতভাবে একটি সৎ সমাজ দেহ গড়ে তুলতে হবে।
হজরত দাউদ ও হজরত ঈসা (আ.)-এর মুখ দিয়ে বনি ইসরাঈল জাতির ওপর অভিশাপ করা হয়েছে। কারণ তাদের সমাজে গোনাহ ও জুলুম ব্যাপক বেড়ে গিয়েছিল এবং লোকেরা পরস্পরকে খারাপ কাজে বাধা দিতো না।
৪. ধৈর্য্যধারণ: সত্যের নসিহত করতে যেয়ে বা হকের সমর্থন করার ক্ষেত্রে যে সব সমস্যা ও বাধার মুখে নিপতিত হতে হয়; তার মোকাবেলায় পরস্পরকে অবিচল ও দৃঢ় থাকতে হবে।
এ সূরার শিক্ষণীয় বিষয়গুলো হলো-
১. দুনিয়া ও আখেরাতের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রকৃত ঈমানদার হতে হবে।
২. প্রকৃত ঈমানদারকে অবশ্যই সৎকাজ করতে হবে এবং পরস্পরকে হক কথা বলতে হবে।
৩. ঈমানদারকে অবশ্যই বাতিলের বিরুদ্ধে লড়তে হবে এবং বাতিলকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেওয়া যাবে না।
৪. হক পথে চলার সময় সমস্ত বাধা-বিপত্তি পার হয়ে অবশ্যই ধৈর্য্য ধরে সামনে অগ্রসর হতে হবে।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৭
এমএইউ/