ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

হতাশা কাটাতে করণীয়

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৮
হতাশা কাটাতে করণীয় ধৈর্য্যধারণ করায় আল্লাহ মুমিনদের ওপর সন্তষ্ট হন

জীবনের নানাক্ষেত্রে মানুষ বিভিন্ন রকমের হতাশায় ভোগেন। এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল, যে জীবনে কখনও হাতাশায় ভোগেননি।

স্বাভাবিক নিয়মে জীবনের নানা বাঁকে মুমিনের জীবনে হতাশ হওয়ার মতো পরিস্থিতি আসতে পারে; দুঃখ-কষ্ট জীবনেরই অংশ। এসব এলে হতাশ হয়ে পড়া মুমিনের লক্ষণ নয়।

এগুলো এলে কি করতে হবে তা আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে বলে দিয়েছেন।

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদানগণ! ধৈর্য্যধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার। -সূরা আলে ইমরান: ২০০

রাতের পর যেমন দিন, ঠিক তেমনি দুঃখের পর আছে সুখ। কাজেই কোনো দুঃখে মুষড়ে পড়া কোনো মুসলমানের সাজে না। মানুষ যত বড় পাপীই হোক, আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন। আপনি যত পাপীই হোন, আর যত দুঃখ কষ্টের মধ্যেই থাকুন না কেন, আল্লাহকে স্মরণ করুন। আল্লাহ ওয়াদা করেছেন, তিনি নিশ্চয়ই আপনার ডাকে সাড়া দেবেন।  

এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। ’ -সূরা আল মুমিন: ৬০

মুমিনের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। যারা মুমিন তারা একমাত্র আল্লাহর ওপরই ভরসা করবে। নিরাশ হওয়া চলবে না। কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে। ’ -সূরা আলে ইমরান: ১৩৯

বস্তুত আল্লাহতায়ালা মানুষের অন্তর পরীক্ষা করেন। ধৈর্য্যধারণ করায় আল্লাহ মুমিনদের ওপর সন্তষ্ট হন। পরিণামে প্রশান্তি নাজিল করেন এবং বিজয় দান করেন। মনে এ বিশ্বাস রাখতে হবে, সময় কঠিন হলেও আল্লাহর সাহায্য আসবেই। এটা আল্লাহর ওয়াদা। কোরআন ও হাদিসে বিপদে ধৈর্য্যধারণ করার কথা বারবার বলা হয়েছে।  

বিপদ-মুসিবতের সময় মুসলমানের করণীয় প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ধৈর্য্যর সঙ্গে সাহায্য প্রার্থনা কর নামাজের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব। ’ -সূরা বাকারা: ৪৫

সত্যিকারের মুমিন সর্বদা আপন প্রভূর করুণা ও রহমত কামনা করে। আর আল্লাহতায়ালা তাদের সঙ্গে সেরূপ ব্যবহারই করেন। এ সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি আমার ব্যাপারে আমার বান্দার ধারণা অনুযায়ী তার সঙ্গে ব্যবহার করি। ’

মানুষের বালা-মুসিবত দৃশ্যত অসহ্য কিংবা কষ্টদায়ক হলেও, তা পরিণামে শেষ পর্যন্ত কল্যাণই বয়ে আনে। আল্লাহতায়ালা ধৈর্য্যশীলদের এই মুসিবতের বদৌলতে উত্তম নিয়ামত দান করে থাকেন।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের বিষয়টি চমৎকার, আল্লাহতায়ালা তার জন্য (ভালো বা মন্দ) যা-ই ফয়সালা করেন, তা-ই তার জন্য কল্যাণকর হয়। ’ 

তাই বিপদ-মুসিবতের সময় গোনাহ থেকে বার বার তওবা করতে হবে। কারণ তওবা করলে আল্লাহতায়ালার রহমত বর্ষিত হয়। পাপ হয়ে গেলে তওবা করুন। তওবার কোনো বিকল্প নেই। তওবায় পাপ মোচন হয়, বিপদ আপদ কেটে যায়।  

বিপদের বেশি বেশি নামাজ পরতে হবে। নামাজ মনে প্রশান্তি আনে। কোরআনে কারিমে সূরা রাদের ২৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা প্রশান্তি লাভ করে, জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণ দ্বারা অন্তরসমূহ শান্তি পায়। ’ 

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যখনই কোনো সংকটের মুখোমুখি হতেন, তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। হাদিসে বলা হয়েছে, যখন তোমরা (দুঃখ বা রাগের কারণে) উত্তেজিত হবে, তখন অজু কর এবং দু’রাকাত নামাজ আদায় কর, এটা তোমাদের উত্তেজনা শীতল করবে এবং এতে তুমি শান্তি এবং সন্তুষ্টি পাবে। –সহিহ বোখারি ও মুসলিম 

নামাজ আল্লাহতায়ালার সঙ্গে বান্দার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম। নামাজ মানুষকে খোদামুখি করে এবং শয়তানের প্ররোচনা থেকে দূরে রাখে। নামাজের মাধ্যমে মানুষ আত্মিক শান্তি ও সুখ অনুভব করতে পারে।  

ইসলামি স্বলারদের অভিমত হলো- যখন দুঃখ ও কষ্ট চারদিক থেকে ঘিরে ধরবে, তখন নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করবে। এটাই ইসলামের শিক্ষা ও আল্লাহর রাসূলের আমল।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৮
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।