ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

নবীর তরবারি জুলফিকারের রেপ্লিকা মালাক্কায়

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, সিনিয়র বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৮
নবীর তরবারি জুলফিকারের রেপ্লিকা মালাক্কায় মালাক্কা ইসলামিক মিউজিয়াম

মালয়েশিয়া থেকে ফিরে: মালয়েশিয়ার মালাক্কা ইসলামিক মিউজিয়াম। আকার-আকৃতি কিংবা খ্যাতি কোনোদিক দিয়ে খুব আলোচিত বা বড় কোনো সংগ্রহশালার জাদুঘর নয়। তারপরও তা স্বমিহমায় উজ্জ্বল কিছু সংগ্রহের জন্য।

এমনই একটি আলোচিত ও ঐতিহাসিক সংগ্রহ হলো- হজরত মুহাম্মদ (সা.)-বিখ্যাত তরবারি ‘জুলফিকার’- এর একটি রেপ্লিকা।  

১৯৯০ সালে মালাক্কায় এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হয়।

পরে তা চার বছর পর (১৯৯৪) দশর্কদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।  
মালাক্কার মিউজিয়ামে নবীর তরবারি জুলফিকারের রেপ্লিকামালাক্কা ইসলামিক জাদুঘরের সংগ্রহগুলো মুসলিম ঐতিহ্যের অমূল্য সম্পদ। এ জাদুঘরের মাধ্যমে মালাক্কা তথা মালয়েশিয়ায় কোন পথে ইসলাম এলো- তা জানা যায়। এখানে রয়েছে দেশটির পুরনো মুসলিম ঐতিহ্যের অনেক কিছু। বিভিন্ন ছবি, ঐতিহাসিক বিভিন্ন নিদর্শন উপস্থাপনার মাধ্যমে মুসলিম ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।  

পুরনো একটি কাঠের ভবনে জাদুঘরটি অবস্থিত। লাল রংয়ের তিনতলা এই ভবনটি আগে ইসলামিক কাউন্সিল অব মালাক্কার অফিস ছিল। সংগ্রহের দিক দিয়ে সংগ্রহশালাটি খুব বেশি বড় নয়। তবুও ইতিহাসপ্রেমীরা এখানে আসেন ইতিহাসের খোঁজে।  

জাদুঘরের প্রবেশ মূল্য বড়দের ১ রিঙ্গিত, ছোটদের ৫০ সেন্ট। জাদুঘরের পাশে অনেকগুলো ঐতিহাসিক ভবন ও জাদুঘর রয়েছে। তন্মধ্যে মালাক্কার সালতানাত প্যালেস ও সেন্ট পল গির্জা অন্যতম।
জাদুঘরের লিখিত রেপ্লিকার পরিচিতি
জাদুঘরের নিচতলায় মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ঐতিহাসিক মসজিদের রেপ্লিকা রয়েছে। রয়েছে মসজিদে ব্যবহৃত মিম্বর ও মিহরাবের ছবি। পুরনো আমলের কাঠের রেহাল। মালয়েশিয়ায় গ্র্যান্ড মুফতিদের পরিচিতি।

ভবনের দু’পাশেই রয়েছে ওপরে ওঠার জন্য কাঠের সিঁড়ি। দু’তলায় কোরআনে কারিমের পুরনো সংগ্রহশালা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন। দু’তলার অপরপাশে রয়েছে বড় আকারের একটি দফ।  

দফ বলা হয়- বিশেষ এক ধরনের ঢোলকে। যার এক পাশ থাকে খোলা। আওয়াজের জন্য তা বাজালে ঢ্যাব ঢ্যাব আওয়াজ হয়। অনেকটা প্লাস্টিকের গামলা বাজালে যেমন আওয়াজ হয় তেমন।  

এই দফ বাজিয়ে মালাক্কাবাসীদের নামাজের সময় থেকে শুরু করে রমজান মাসে সেহরি ও ইফতারের সময় জানানো হত।
এই দফ বাজিয়ে মালাক্কাবাসীদের নামাজের সময় জানানো হতো
জাদুঘরের শোভা বাড়িয়েছে পুরনো আমলের বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র। এসব যুদ্ধাস্ত্রের অন্যতম হলো- হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিখ্যাত তরবারি ‘জুলফিকার’-এর রেপ্লিকা।  

জাদুঘরে অবস্থিত ওই রেপ্লিকায় পরিচয়ে লেখা রয়েছে, ‘রেপ্লিকা অব দ্য প্রফেট (সা.)। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নয়টি তরবারি ছিলো। এসবের মধ্যে ‘জুলফিকার’ অন্যতম। জুলফিকারের হাতল দেখতে অনেকটা পাঁজরের হাড়ের মতো বাঁকা। নবী করিম (সা.) তরবারিটি বদর যুদ্ধের সময় মালে গণিমত হিসেবে প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তরবারিটির আকৃতি অন্যসব তরবারি থেকে আলাদা। দু’ধারী লম্বা তরবারির অগ্রভাগ দুইফলা বিশিষ্ট (অগ্রভাগ দুই মাথায় বিভক্ত অর্থাৎ দ্বিখণ্ডিত) জুলফিকার মূল্যবাদ ধাতব দিয়ে তৈরি। কেউ কেউ বলেন, তরবারির লোহায় রূপা ও মূল্যবান পাথরের মিশ্রণ রয়েছে। প্রায় সব যুদ্ধে এটি নবী করিম (সা.)-এর হাতে শোভা ছড়িয়েছে। জনশ্রুতি আছে, কাবা শরীফের তলদেশ থেকে (কুরাইশরা কাবা পুনঃনির্মাণ করেন একবার, তখন ওই লোহা পাওয়া যায়) প্রাপ্ত বিশেষ ধরনের লোহা দিয়ে তরবারিটি তৈরি। নবী করিম (সা.)-এর মৃত্যুর পর তার জামাতা ও চাচাতো ভাই খলিফা হজরত আলী (রা.) এর মালিক হন। ’
জাদুঘরের শোভা বাড়িয়েছে পুরনো আমলের বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্রইতিহাস থেকে জানা যায়, উহুদের যুদ্ধে হজরত আলী (রা.)-কে এই তরবারি দিয়েছিলেন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)। হজরত আলী (রা.) ছিলেন মহাবীর ও মহাপরাক্রমশালী। উহুদের যুদ্ধে মক্কার তৎকালীন সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধার ঢাল ও শিরস্ত্রাণ এক আঘাতে দুই ভাগ করেন হজরত আলী (রা.)। একই আঘাতে হজরত আলীর তরবারিটিও ভেঙে যায়। এরপর মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার নিজ তরবারি জুলফিকার আলীকে দেন। জুলফিকারের হাতল রূপা দ্বারা বাঁধানো।  

সেই ঐতিহাসিক তরবারি জুলফিকারের একটি রেপ্লিকা মালাক্কা ইসলামিক মিউজিয়ামের শোভা বাড়াচ্ছে। যা দেখতে ইতিহাসপ্রেমীরা প্রতিনিয়ত ভিড় জমান ঐতিহাসিক ওই জনপদে।  

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৮
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।