এসবের সঙ্গে আল্লাহতায়ালা মানুষকে দান করেছেন বিচার-বিবেচনা করার ক্ষমতা। আর দোষ কিংবা ভুল করার ক্ষমতা যেহেতু মানুষের স্বভাবগত, সেহেতু ফেরেশতাতুল্য কিংবা নিষ্পাপ হওয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
মাঝে রইল বিচার-বিবেচনা করার ক্ষমতা। যাকে আমরা ‘বিবেক’ বলে জানি। এটা মানুষের অন্তর্নিহিত এক শক্তি। এ শক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার মানুষকে দিতে পারে তার যথাযোগ্য মর্যাদা। অর্থাৎ আল্লাহ প্রদত্ত মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার একমাত্র হাতিয়ার হলো- ‘বিবেক। ’
সক্রিয় বিবেক মানুষকে দিয়ে সঠিক কাজ করিয়ে নেয়, সঠিক পথে পরিচালিত করে। আর এ শক্তি বলে মানুষ অর্জন করতে পারে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি, মুক্তির পথ, সর্বকালীন কল্যাণকর শান্তিময় জীবন।
অনেক মানুষের ধারণা, অনুক্ষণ ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকলেই বুঝি মানুষ মুক্তির পথ পেয়ে যাবে। কিন্তু এ ধারণা পুরোপুরি ঠিক না। কারণ কেউ যদি অনুক্ষণ নিজেকে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল রাখার পরও ফাঁকে বিবেকবর্জিত এমন কোনো কাজ করে ফেলে, যা নিজের ও অপরের জন্য ক্ষতিকর- তা তার আরাধনায় প্রভাব ফেলবে না এমনটি জোর দিয়ে বলা যায় না।
কেননা ইসলামে বলা হয়েছে- ‘যে নিজের প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি হতে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার আবাস। ’ -সূরা নাজিয়াত ৪০-৪১
বলাবাহুল্য, মানুষকে দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের জন্য একাধিক কাজ করতে হয়। ফলে কারও পক্ষে শুধু আল্লাহর ইবাদতে অনুক্ষণ মশগুল থাকা সম্ভব নয়। অবশ্য এমন কোনো ধর্মীয় বিধানও নেই।
সে যাই হোক, পার্থিব জীবন যাপন করতে যেয়ে মানুষকে নানা সময় নানা কাজে ভালো-মন্দ, ন্যায্য-অন্যায্য নানারকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে কল্যাণকর ফল লাভের জন্য বিবেককে কাজে লাগানোর প্রতি উৎসাহিত করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ধর্ম মানুষকে শিক্ষা দিয়েছে, যার মূলে রয়েছে আল্লাহভীতি তথা আল্লাহর নির্দেশ পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ।
কেননা আল্লাহর বিচারের ভয় না থাকলে মানুষ ভালো-মন্দ বিচারের তোয়াক্কা করত না। আর তাই বলা হয়েছে, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাবান, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকি (আল্লাহভীরু)। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন, সব খবর রাখেন। ’ -সূরা হুজুরাত: ১৩
অনেকে বিবেকের দংশনের ভয়ে বড় ধরনের ত্যাগ স্বীকার করার আশঙ্কা থাকলেও ছোটখাটো অপরাধ করা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। বিবেকের দংশনে দংশিত হওয়ার ভয় যাদের মধ্যে না থাকে, তারা অহরহ বিবেকবর্জিত কাজ (চুরি, ডাকাতি, খুনখারাবি, ঘুষ আদান-প্রদান, ঝগড়া-বিবাদ, অত্যাচার প্রভৃতি) করে থাকে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, চূড়ান্তভাবে সফলতা তাদের দখলেই আসে যারা বিবেকের দংশনের ভয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে পথ চলে। যদিও সাময়িকভাবে বিবেকবর্জিতদের অধিক লাভবান, ক্ষমতাবান বা প্রভাবশালী বলে মনে হয়।
কে না জানে, বুদ্ধিমানমাত্রই চিরস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী সুখ-শান্তি, মঙ্গল-কল্যাণের প্রত্যাশী। আর এ আশা পূরণ তখনই সম্ভব যখন কেউ অন্যের শাস্তির ভয়ে নয়, বরং নিজের তথা বিবেকের শাস্তির ভয়ে ভীত হয়ে জেনে-বুঝে মেপে মেপে পথ চলে। এতে যে শুধু মানসিক শান্তিই পাওয়া যায় তা নয়, বরং পরোক্ষভাবে গোটা মানব সমাজই উপকৃত হয়। অর্থাৎ সমাজের বাসিন্দারা বিবেকবর্জিত মানুষের অত্যাচার থেকে মুক্তি লাভ করে বিবেকবান মানুষের কাছ থেকে স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা লাভ করে। আর পৃথিবীর তাবৎ ধর্ম তো নানাভাবে নানা আঙ্গিকে আমাদের মানবকল্যাণের শিক্ষাই দেয়; যেমন- ‘তোমরা উত্তম জাতি, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদের আবির্ভাব। ’ -সূরা আলে ইমরান: ১১০
অতএব, উত্তম জাতির মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে বিবেকবান মানুষ হিসেবে মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখাই আমাদের প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৮
এমএইউ/