ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

রাগের সময়-অসময়: প্রেক্ষিত ইসলাম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৮
রাগের সময়-অসময়: প্রেক্ষিত ইসলাম কোরআনে কারিমে মুমিনদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করার সময় বলা হয়েছে- যারা রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে, মানুষকে ক্ষমা করে

রাগ মানব চরিত্রের এক দুর্বল দিক। ঠিক তরকারিতে লবণের মতো। কম বা বেশি দু’টোই অপছন্দের। ইসলামে রাগ প্রসঙ্গে রয়েছে কার্যকর নির্দেশনা।

কোরআনে কারিমে মুমিনদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করার সময় বলা হয়েছে, ‘যারা রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে, মানুষকে ক্ষমা করে। ’ -সূরা আলে ইমরান: ১৩৪

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে উপদেশ দিন।

তিনি বললেন, রাগ করো না। তিনি কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করলেন। রাসূল (সা.) বললেন, রাগ করো না। ’ –সহিহ বোখারি শরিফ

বর্ণিত হাদিসে আলোকে এতে বুঝা যায়- রাগ নয়, বরং ক্ষমা করার মাহাত্ম্যই হলো- ইসলাম।  

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের টানা দশ বছরের খাদেম হজরত আনাসও (রা.) স্বীকৃতি দিয়েছেন, ‘তিনি (নবী করিম) কখনও না করা কাজের ব্যাপারে বলেননি- এটা কেন করোনি। আর করা কাজের ব্যাপারে কখনও বলেননি- এটা কেন করেছো!’ –সুনানে তিরমিজি 

এ আলোচনার দ্বারা খুব সহজেই বলা যায়- রাগ না করা উত্তম চরিত্রের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।

এবার আসুন, নজর দেই রাগের বিপরীত দিকটায়।

কোরআনে কারিমের এক আয়াতে সাহাবিদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘তারা কাফেরদের প্রতি কঠোর মনোভাবাপন্ন, পারস্পরিক সহানুভূতিসম্পন্ন....। ’ -সূরা ফাতহ: ২৯

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমরা একবার তকদির সম্পর্কে পরস্পরে আলোচনা করছিলাম, সে সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কামরা থেকে বের হলেন। তার চেহারা এমন রক্তাভ হয়েছিলো, যেন ডালিমের দানা নিংড়ে দেওয়া হয়েছে। রাগান্বিত স্বরে বললেন, তোমাদের আদিষ্ট বিষয় কি এটা? নাকি এ নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি? তোমাদের পূর্ববর্তীরা এ নিয়ে মতভেদের কারণে ধ্বংস হয়েছে। আমি তোমাদের দৃঢ়ভাবে বলছি- এতে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ো না। ’ –তিরমিজি, শবে কদর অধ্যায়

অন্যত্র এক ব্যক্তির অন্যায় কথায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাগান্বিত হতে দেখা গেছে।

এ ধারার হাদিসসমূহ থেকে বুঝা যায়, মানবতা ও দ্বীনের স্বার্থে রাগান্বিত হওয়া ঈমানের অংশবিশেষ। অন্যায় ও দ্বীনহীনতা দেখেও যে রাগান্বিত হয় না, সে রাসূলের আদর্শের ওপর নেই।

তবে শিক্ষণীয় বিষয় হলো, রাগের সময়ও হজরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি এমন কথাই বলেছেন, যা সুন্দর পথের নির্দেশনা দেয়। তেমনি আমাদেরও রাগের ক্ষেত্রে এই সীমারেখা টেনে দেওয়া দরকার। অনিয়ন্ত্রিত রাগ কখনোই ভালো কিছু বয়ে আনে না।

যেমনটি হাদিসে হজরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, ‘কুস্তিতে বিজয়ী প্রকৃত বীর নয়, বরং প্রকৃত বীর হলো- সেই ব্যক্তি; যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। ’ –সহিহ বোখারি

সারকথা হলো- পূর্ণ রাগহীন হওয়া যেমন ঈমানের পূর্ণতার আলামত নয়, তেমনি রাগের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়িও ঈমানের পূর্ণতা নয়। অন্যায় ও দ্বীনহীনতার প্রতিবাদে আওয়াজ তোলাও দ্বীন।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৮
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।