মানবজীবনের উত্তম গুণাবলিকে প্রশংসনীয় চরিত্র বলে। যেমন- ধৈর্য, সততা, দেশপ্রেম ও সমাজসেবা ইত্যাদি।
পক্ষান্তরে মানবজীবনের নিকৃষ্ট চরিত্রকে নিন্দনীয় চরিত্র বলে। যেমন- অহঙ্কার, ঘৃণা, মিথ্যাচার ও সুদ ইত্যাদি।
ইসলামের দৃষ্টিতে আখলাকের গুরুত্ব অনেক। প্রত্যেক নবীই নিজ নিজ জাতিকে উত্তম চরিত্রের শিক্ষা দিয়েছেন। আর উন্নত চরিত্রকে পূর্ণতা দানের জন্য শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে আল্লাহতায়ালা পাঠিয়েছেন।
ইসলাম মনে করে, আমলদার হওয়া একজন মুমিনের প্রশংসিত দিক। সেই সঙ্গে চরিত্রবান হওয়াও একজন মুমিনের জন্যে আবশ্যকীয় দিক। কিন্তু আমলের তুলনায় চরিত্র মানুষের জন্য বেশি জরুরি।
ইসলামি শরিয়তের বিধানাবলীর মৌলিক হুকুম দুই প্রকার। যথা- আদিষ্ট আর নিষিদ্ধ।
কেউ যদি নিষিদ্ধ থেকে বেঁচে থেকে শুধুমাত্র আবশ্যকীয় (ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত) আদিষ্ট বিষয়গুলো আদায় করে, তবে তার জান্নাতে যাওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন আল্লাহ ও রাসূল (সা.)।
তবে আবশ্যকীয় বিষয়ের বাইরেও রয়েছে আদিষ্ট বেশ কিছু বিষয়। যেগুলো পালনের ক্ষেত্রে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে ইসলামে। নফল নামাজ দ্বারা পূরণ করা হবে ফরজের ঘাটতিগুলো, তাসবিহে আমলনামায় বৃদ্ধি পাবে সওয়াবের হিসেব- এমন আরও অনেক ফজিলত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কোরআন-হাদিসে। আর এগুলো সব অতিরিক্ত আমল।
যেমন- হাদিসে নফল নামাজ ও রোজার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে উত্তম নামাজ হলো- হজরত দাউদ (আ.)-এর নামাজ। আর রোজার ক্ষেত্রেও উত্তম হলো- হজরত দাউদ (আ.)-এর রোজা। তিনি প্রথমার্ধ ঘুমাতেন। এরপর এক তৃতীয়াংশ ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। অবশিষ্ট এক ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন। আর রোজা রাখতেন একদিন, ভাঙতেন একদিন। ’ –সুনানে তিরমিজি: ১১১৯
বোখারি শরিফে (৭০৫৩) বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘দু’টি বাক্য আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়। বাক্যদ্বয় জবানে হাল, পরিমাপকে ভারী। (বাক্য দু’টি হলো) সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম। ’
কিন্তু এগুলো অনাদায়ে জাহান্নামি হওয়ার কোনো বর্ণনা নেই। নেই কিয়ামতের দিন পাকড়াও হওয়ার ধমকিও।
তেমনিভাবে উত্তম আখলাকে নিজেকে সজ্জিত করার প্রতিও উৎসাহ এসেছে ইসলামে। আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘মানুষকে জান্নাতে অধিকহারে প্রবেশ করাবে কোন বিষয়’ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বললেন, ‘আল্লাহভীতি ও উত্তম আখলাক। ’ জিজ্ঞেস করা হলো-‘জাহান্নামে অধিকহারে প্রবেশ করাবে কোন বিষয়’ সম্পর্কে। তিনি বললেন, ‘মুখ ও লজ্জাস্থান। ’ –সুনানে তিরমিজি: ২০০৪
উল্লেখিত হাদিসে আখলাক নিয়ে দু’টি ইরশাদ রয়েছে। ১. উত্তম আখলাক জান্নাতে প্রবেশ করাবে। ২. মন্দ আখলাক জাহান্নামে প্রবেশ করাবে (মুখ ও লজ্জাস্থান দুই-ই অসৎ চরিত্রের অংশ)।
আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যার অন্তরে সর্ষেদানা পরিমাণ অহঙ্কার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ’ –সুনানে তিরমিজি: ১৯৯৮
শুধু অহঙ্কার নয়, চরিত্রের আরও অনেক দিক যেমন- হিংসা, বিদ্বেষ, বাচালতা ও চোগলখুরি ইত্যাদি নিয়ে হাদিসে এসেছে কঠিন সতর্কবাণী। এমনকি জাহান্নামে যাওয়ার ভীতিও।
পারস্পরিক চলাফেরায়ও আমরা দেখতে পাই, আবশ্যক হুকুমের বাইরে আমল কম এমন ব্যক্তি অত্যন্ত প্রিয় হয়ে থাকেন, তার সুন্দর আচরণের কারণে।
অপরদিকে অধিকহারে আমলে মশগুল ব্যক্তিও কষ্টের কারণ হয়ে থাকেন, মন্দ স্বভাব-চরিত্রের কারণে। সারাদিন আমল করে কি লাভ; যদি স্বভাবের কারণে তা ধ্বংস হয়ে যায়! আখলাকহীন আমল তো বন্দি গুহায় হিরে-জহরতের মতো। যখন তা থেকে কোনো উপকার মেলে না।
অপরদিকে উত্তম আখলাক উর্বর মাটিতে পুঁতে রাখা এক অঙ্কুর, যার যত্ন নিলে একদিন মহিরূহে পরিণত হয়। তদুপরি, আখলাক স্বয়ং আমলের প্রতি উদ্ধুদ্ধকারী এক বৈশিষ্ট্য।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৮
এমএইউ/