আল্লাহতায়ালা কিছু সময়, দিন ও মাসকে অন্যান্য সময়, দিন ও মাসের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। এ শ্রেষ্ঠত্ব সেগুলোর মর্যাদা ও সম্মান দাবি করে।
হজরত আবু বাকরা (রা.) থেকে বর্ণিত, বিদায় হজের ভাষণে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ যেদিন আসমান-জমিন সৃষ্টি করেন সেদিন থেকেই সময় নিজ অবস্থায় আবর্তিত হচ্ছে। বছরে ১২টি মাস। তার মধ্যে চারটি পবিত্র মাস আছে। তিনটি হলো ধারাবাহিক- জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। আর জমাদিউস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী রজব মাসটি। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
হজ ও ওমরা আদায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এ চারটি মাস পবিত্র। শুরু হয়েছে পবিত্র রজব মাস। এ মাসের পবিত্রতা রক্ষা করে ইবাদত-বন্দেগি করা, এর ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে জেনে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা- প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র বিষয়গুলোর সম্মান করলে তার প্রতিপালকের কাছে তা তার জন্য উত্তম। ’ -সূরা হজ: ৩০
দ্বীনের মূল ভিত্তি ও নীতি হলো- এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই আর হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। এ দুই সাক্ষ্যের দাবি হচ্ছে- একনিষ্ঠতা ও আনুগত্য। আমল শুধু আল্লাহর জন্য নিবেদিত ও তার নবীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী না হলে আল্লাহ তা কবুল করেন না।
‘সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে। ’ -সূরা কাহাফ: ১১০
সব ইবাদতই সুনির্ধারিত। এতে মনগড়া মতের কোনো অবকাশ নেই। পূর্ববর্তীদের অনুসরণেই সব কল্যাণ নিহিত। পরবর্তীদের তৈরি বেদাতেই সব অনিষ্ট বিদ্যমান। কারও জন্য কোনো ইবাদতকে একটি সময় বা স্থানের সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া বৈধ নয়, যা আল্লাহ ও তার রাসূল নির্ধারণ করে দেননি। কেননা আমরা ইবাদত করব আল্লাহর শরিয়ত মোতাবেক, আমাদের মনগড়া ইচ্ছা ও আবেগ দিয়ে নয়।
নিঃসন্দেহে পবিত্র মাস হিসেবে রজব বরকতময়। তবে এর অর্থ এ নয় যে, তাতে এমন ইবাদতে জড়াতে হবে যা শরিয়ত অনুমোদন করেনি। তাই একে বিশেষ নামাজ, নির্দিষ্ট একটি রাত জাগরণ অথবা বিশেষভাবে তা উদযাপন করার সঙ্গে জড়ানো যাবে না। এটি অন্যান্য পবিত্র মাসের মতোই।
বস্তুত সত্যকে অনুসরণ করাই শ্রেয়। মনে রাখতে হবে, ভ্রষ্টতা ভ্রষ্টতাই। এগুলো অপরিবর্তনীয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা রেখে গিয়েছেন। এখানে কোনটা আলো, কোনটা অন্ধকার, তা দিনরাতের মতোই স্পষ্ট। এটা সর্বশেষ রিসালত।
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম। ’ -সূরা মায়েদা: ৩
যে লোক মুক্তি ও পুণ্য চায় সে যেন আল্লাহ যতটুকু শরিয়ত দিয়েছেন তাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। বেদাত থেকে সতর্ক থাকে। বেদাত হলো- নানাবিধ ফেতনা, পরীক্ষা, দুর্দশা, নাফরমানি, গোনাহ ও অপরাধের আখড়া। যা সুন্নত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। উম্মাহর ঐক্য বিনষ্ট করে। দ্বীন, বুদ্ধি ও স্বভাবকে ধ্বংস করে। কোনো গোষ্ঠী একটি বেদাতে লিপ্ত হলো মানে তারা অনুরূপ একটি সুন্নতকে ছেড়ে দিল।
হজরত ইরবাদ বিন সারিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের সারগর্ভ উপদেশ দিলেন। এতে হৃদয়ে ভয়ের সঞ্চার হলো, চোখে পানি চলে এলো। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে, এটি বিদায়ী ব্যক্তির উপদেশ। তাই আমাদের অসিয়ত করুন। তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদের আল্লাহকে ভয় করা ও যথাযথ আনুগত্যের অসিয়ত করছি। যদিও তোমাদের নিয়ন্ত্রণ কোনো দাসের হাতে থাকে। আমার মৃত্যুর পর যে বেঁচে থাকবে সে অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের কর্তব্য হলো- আমার সুন্নত ও খোলাফায়ে রাশিদিনের আদর্শ আঁকড়ে ধরা। একেবারে দাঁত কামড়ে তা ধরে রাখো। সাবধান! তোমরা মনগড়া নতুন বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকবে। কেননা প্রত্যেকটা বেদাত ভ্রান্ত।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৮
এমএইউ/