ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

বিষাদ থেকে মুক্তির উপায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৯ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৮
বিষাদ থেকে মুক্তির উপায় কোরআন মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানায়, তারা যেন ভয়-ভীতি, বেদনা-বিষাদকে নিজেদের মনে স্থান না দেয়

অনেক মনোবিজ্ঞানী মানুষের বিষাদ, বেদনা, দুঃখ ইত্যাদিকে ক্ষতিকর বলে মনে করেন না। তবে অনেক সময় বিরক্তিকর বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও এই বিরক্তিকর উপসর্গ ব্যক্তিকে অনেক ক্ষেত্রে উদ্দীপনা দেয়। যা উত্তেজনাপূর্ণ বিরূপ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে যথোপযুক্ত আচরণ করতে প্রেরণা জোগায়।

সুতরাং একথা বলা যায় যে, দুঃখ কিংবা বিষাদের নিজস্ব কোনো মূল্য নেই। দুঃখ ও বিষাদ যদি হিংসার কারণে হয়ে থাকে, তাহলে তা অনুকূল নয়।

আর যদি তা আখেরাত কিংবা ঈমানি ভবিষ্যত চিন্তা থেকে উঠে এসে থাকে- তাহলে তা ইতিবাচক ও প্রশংসনীয়। মুমিনদের এই অনুকূল চিন্তার দিকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কেননা এই ইতিবাচকতা মুমিনের অন্তরে ক্রমাগত আনন্দ উদ্দীপনা জাগায়।  

এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখে অর্থাৎ মুমিন; তার উচিত মানসিক প্রশান্তি ও স্বস্তির সঙ্গে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে আনন্দ উদ্দীপনার সঙ্গে তাকানো।  

পবিত্র কোরআন মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানায়, তারা যেন ভয়-ভীতি, বেদনা-বিষাদকে নিজেদের মনে স্থান না দেয়।

অন্তরের দুঃখ-বেদনাকে বেশি স্থান দেওয়া কিংবা মনোক্ষুন্ন হওয়ার বিষয়ে পবিত্র কোরআনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সূরায়ে হিজরের ৮৮ নম্বর আয়াতে যেমনটি বলা হয়েছে, ‘আমি তাদের অর্থাৎ কাফেরদের মধ্য থেকে বিভিন্ন শ্রেণির লোকদের দুনিয়ার যে সম্পদ দিয়েছি সেদিকে তুমি চোখ উঠিয়ে দেখো না এবং তাদের অবস্থা দেখে মনোক্ষুন্নও হয়ো না!’

দুঃখ-বিষাদ অনেক সময় ব্যক্তির নিজস্ব কৃতকর্মের কারণে হতে পারে। যা ব্যক্তির মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। ব্যক্তিগত কর্ম থেকে উৎসারিত বেদনা-বিষাদের কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি চেষ্টা করে গান-বাজনা শুনে বেদনা ভুলে থাকতে কিংবা বিষাদমুক্তির উপায় হিসেবে মাদকে আসক্ত হয়ে ওঠে। এর কোনোটিই যথাযথ পথ নয়।  

এ ধরনের রোগের উপশমের জন্য পবিত্র কোরআন চমৎকার নির্দেশনা দিয়েছে। সেটা হলো- আশার আলো। পবিত্র কোরআন পরকালীন জীবনের সুখ শান্তির সুসংবাদ দিয়ে রোগীর অন্তরে আশাবাদ জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে। পরকালীন শান্তির জন্য প্রয়োজন পার্থিব এ দুনিয়ায় সুন্দর ও সৎ জীবনযাপন করা। আরও প্রয়োজন আল্লাহকে স্মরণ করা, নেক আমল ও তওবা করা। আর এই কাজগুলোই একজন ব্যক্তিকে সার্বিক দুঃখ, বেদনা, বিষাদ ও হতাশা ইত্যাদি থেকে মুক্তি দেওয়ার সর্বোত্তম উপায় বলে মনে করা হয়।

তওবা হলো- মানুষের অন্তরকে পুনর্গঠন করার উপায়। তওবার ফলে মানুষ অপরা, পাপ, হতাশা ও ব্যর্থতা ইত্যাদির গ্লানি কমে যায়।  

মনে রাখতে হবে, মানুষের সাহায্যকারী হলেন আল্লাহ। আল্লাহর সাহায্য পেলে কোনো মানুষ আর ব্যর্থতার জালে নিজেকে আটকে রাখতে পারবে না, কিংবা আটকে থাকবে না। আল্লাহর সাহায্যে মানুষ অবশ্যই আশার নবীন আলোয় তার অন্তরাত্মাকে গ্লানিমুক্ত করে জাগিয়ে তুলতে পারে।

মানুষের মনে শক্তি ও প্রফুল্লতার আরেকটি উৎস হলো- ইবাদত-বন্দেগি। আর ইবাদত-বন্দেগির মাঝে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হলো- নামাজ ও দোয়া। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করে একজন মানুষ খুব সহজেই তার ভেতরটাকে প্রশান্তিতে ভরে তুলতে পারেন।  

দুঃখ, বেদনা, বিষাদ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে দোয়ার প্রভাব সম্পর্কে সূরা আম্বিয়ার ৮৭ ও ৮৮ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মাছওয়ালাকেও আমি অনুগ্রহ ভাজন করেছিলাম। স্মরণ করো, যখন সে রাগান্বিত হয়ে চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল আমি তাকে পাকড়াও করবো না। শেষে সে অন্ধকারের মধ্য থেকে ডেকে উঠলো-  তুমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, পবিত্র তোমার সত্ত্বা, অবশ্যই আমি অপরাধ করেছি। ’

তখন আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম এবং দুঃখ থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছিলাম, আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৮
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।