ওই সময়ের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ৯১৪ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৫২টি অনুমোদিত হজ এজেন্সির মাধ্যমে ৯৬ হাজার ৪৩০ জন হজযাত্রী নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন।
চলতি বছরের কোটা অনুযায়ী সরকারি ৮২৬ জনসহ প্রায় ২১ হাজার হজযাত্রীর চূড়ান্ত নিবন্ধন বাকি।
বাকি থাকা কোটা পূরণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও ক্রমিক অনুসারে আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে হজে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজ গাইড ও মোনাজ্জেম ব্যতীত নির্ধারিত কোটা এক লাখ ১৬ হাজার ৬০০ যাত্রী পূরণে প্রাথমিক পর্যায়ে ১ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারিত প্রাক-নিবন্ধিত তালিকার ৩ লাখ ৫২ হাজার ২৯৩ নাম্বার ক্রমিকের মধ্যে মোট ৯৬ হাজার ৪৩০ জন নিবন্ধন সম্পন্ন করেন। সে হিসেবে নির্ধারিত সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ৬০০ এর কোটা পূরণে ২০ হাজার ১৭০ জনের কোটা খালি আছে।
সেমতে জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতির অনুচ্ছেদ ৩.১.৮ অনুযায়ী পরবর্তী অপেক্ষমান তালিকা থেকে ক্রম অনুযায়ী খালি (অপূরণকৃত) কোটার সমসংখ্যক প্রাক-নিবন্ধিত হজে গমনেচ্ছুদের নিবন্ধনের জন্য আহ্বান করা হবে মর্মে উল্লেখ রয়েছে। ফলে এক লাখ ১৬ হাজার ৬০০ জনের নির্ধারিত সংখ্যার মধ্যে খালি ২০ হাজার ১৭০ জনের কোটা পূরণের লক্ষ্যে প্রাক-নিবন্ধনের ক্রম অনুযায়ী প্রাক-নিবন্ধনের ৩,৫২,২৯৪ থেকে ৩,৭২,৬৫৬ ক্রমিক পর্যন্ত প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীদের নিবন্ধনের চূড়ান্ত সময়সীমা আগামী ৫ এপ্রিল রাত ৮টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রকাশিত ক্রমের বাইরে কারও কাছ থেকে হজ প্যাকেজের অবশিষ্ট অর্থ গ্রহণ করা যাবে না এবং উক্ত নীতির ৩.১.৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে উল্লিখিত তারিখের পরে পরবর্তী ক্রমিক থেকে নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে।
অপরদিকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে হজ গাইড ও রাষ্ট্রীয় খরচের হজযাত্রীর সংখা ব্যতীত হজযাত্রীর নির্ধারিত সংখ্যা ৬ হাজার ৭৪০ জনের কোটা পূরণের লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ধারিত প্রাক-নিবন্ধিত তালিকার ১৬ হাজার ৭৪ নং ক্রমিকের মধ্যে পাঁচ হাজার ৯১৪ জন নিবন্ধন সম্পন্ন করেন। নির্ধারিত সংখ্যা ছয় হাজার ৭৪০ পূরণের জন্য ৮২৬ জনের কোটা খালি আছে। অবশিষ্ট ৮২৬ জনের কোটা পূরণের লক্ষ্যে প্রাক-নিবন্ধনের ক্রম অনুযায়ী সমসংখ্যক ১৬ হাজার ৭৫ থেকে ১৬ হাজার ৮৫০ ক্রমিক পর্যন্ত নিবন্ধনের জন্য আহ্বান করা হয়েছে।
হজ ব্যবস্থাপনাকে শৃঙ্খলায় আনতে প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের পদ্ধতি করা হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। কিন্তু কয়েকবার সময় বাড়ানোর পরও নিবন্ধনে সাড়া না পাওয়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, এবারের হজ ব্যবস্থাপনাও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।
চলতি বছরের হজ নিবন্ধন শুরুর দিন ধর্মমন্ত্রী ও ধর্মসচিব দৃঢ়ভাবে বলেছেন, এবার হজ ব্যবস্থপনায় বিশৃঙ্খলা হবে না। তাদের এমন বক্তব্যে নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না। তার প্রধান কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোর অভিজ্ঞতা।
গত এমন কোনো বছরের কথা মনে পড়ে না, যে বছর সব হজযাত্রী সন্তুষ্টচিত্তে সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা হতে পেরেছেন। উল্টো এমন তথ্যচিত্র গণমাধ্যমে এসেছে, হজের নিয়ত করে টাকা দিয়ে শুধু একশ্রেণির এজেন্সির গাফিলতিতে হজে যেতে না পেরে বিমানবন্দরে আহাজারি করছেন হজ গমনেচ্ছুরা।
এবারও তেমনি ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। বেসরকারি হজ এজেন্সি আকবর হজ গ্রুপ বাংলাদেশ (৬১৫)-এর ব্যানারে নামে-বেনামে প্রায় ১০টি হজ এজেন্সির মাধ্যমে প্রাক-নিবন্ধিত শত শত হজযাত্রীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন করেনি। এমনকি তাদের পাসপোর্টও এজেন্সির কাছে রয়ে গেছে।
রোববার (০১ এপ্রিল) রাতে নির্দিষ্ট সিরিয়াল থেকে নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় এসব হজযাত্রী চলতি বছর হজে যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হজ কেলেংকারীর ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রতারক চক্রকে আটক করতে ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে।
হজের নিয়ত করে, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির পরও হজে যেতে না পারা- কতটা বেদনাদায়ক, তা কাউকে বুঝিয়ে বলতে হয় না। এমন অবস্থা কাম্য নয়।
মন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, ২০১৭ সালে হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অনিয়মের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ১৯৩টি এজেন্সির বিরুদ্ধে; শাস্তি দেওয়া হয়েছে অপরাধের মাত্রা ও প্রকৃতি অনুসারে। তদুপরি ধর্ম সচিব সতর্ক করেছেন, ‘এবার হজ ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম করলে, লাইসেন্স বাতিল করব। ’ আমরা মনে করি, হজ উপলক্ষে ধর্ম মন্ত্রণালয় গৃহীত এসব পদক্ষেপ সুফল বয়ে আনুক। হজযাত্রীরা নির্বিঘ্নে হজপালনে সৌদি আরব যাক।
চলতি বছরের হজযাত্রা উপলক্ষে ধর্ম মন্ত্রণালয় যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, সেগুলো ইতিবাচক। তবু আমরা প্রত্যাশা করি, গোটা প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় যেন চোখ-কান খোলা রাখে।
বিশেষ করে যেসব এজেন্সির গাফিলতির দরুণ চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে পারল না, তাদের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, হজযাত্রা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয় মূলত দুই পর্যায়ে। এক. এজেন্সি পর্যায়ে এবং দুই. ফ্লাইট শিডিউল নিয়ে।
আমরা আশা করি, এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় অন্তত সে রকম কিছু ঘটবে না। মনে রাখতে হবে, হজ একটি ধর্মীয় বিশেষ ইবাদত। এর সঙ্গে ধর্মপ্রাণ মুসলিমের গভীর আবেগ যুক্ত। তাই এ আয়োজনটি যেন আর অব্যবস্থাপনার কবলে না পড়ে, সবার সঙ্গে এটি আমাদের প্রত্যাশ। আমরা চাই, হজকে অগ্রাধিকার দিয়ে এর ব্যবস্থাপনা সুন্দর হোক। দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুক আল্লাহ ঘরের মেহমান হজযাত্রীরা।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৮
এমএইউ/