আল্লাহর ইবাদত ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায়ের দায়িত্ব পালন করতেই আল্লাহতায়ালা এসব নেয়ামত দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাত করেন, ‘তোমাদের সব দানই আল্লাহর পক্ষ থেকে।
মানুষ অনেক নেয়ামতের কথা জানলেও অধিকাংশের কথা তার জানা থাকে না। অজান্তেই আল্লাহ মানুষকে বহু নেয়ামত দিয়ে থাকেন। অসংখ্য বিপদ ও সংকট থেকে তাকে রক্ষা করেন। তার ডানে-বামে ও পেছনে আল্লাহর ফেরেশতারা নিয়োজিত। তারা তাকে আল্লাহর নির্দেশে রক্ষা করে। মানুষের কোনো ইচ্ছা ছাড়াই শরীরের অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার শরীর ও জীবনের উপকারার্থে কাজ করে যাচ্ছে।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমাদের নিজেদের অভ্যন্তরে তোমরা কি চিন্তা করে দেখ না?’ -সূরা জারিয়াত: ২১
কোরআনের অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর নেয়ামতকে গণনা করতে চাইলে তা গুনে শেষ করতে পারবে না। ’ -সূরা ইবরাহিম: ৩৪
আল্লাহর আনুগত্য, ইবাদত, পৃথিবীকে সঠিকভাবে বিনির্মাণ ও সংশোধন করতে আল্লাহ এসব নেয়ামত দিয়ে মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। বিষয়টি কোরআনে বলা হয়েছে এভাবে, ‘আর এভাবেই তিনি তার নেয়ামতকে তোমাদের প্রতি পূর্ণ করে দেন যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ করো। ’ -সূরা নাহল: ৮১
যে আল্লাহতায়ালার নেয়ামতগুলোকে তার সন্তোষ ও পছন্দের কাজে ব্যবহার করে, সেগুলোকে নিজের ভেতরে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক বানায়, সৃষ্টির প্রতি সদাচরণ প্রদর্শন করে, তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে, সে ব্যক্তিই নেয়ামতের যথার্থ শোকর আদায় করল। আর যে আল্লাহর অসন্তোষ উদ্রেককারী কাজে সেগুলোকে ব্যবহার করে, সেক্ষেত্রে তার ওপর ন্যস্ত অন্যের অধিকার আদায় না করে সে নেয়ামতের অকৃজ্ঞতা করল।
নেয়ামত মানুষকে যেন ধোঁকা না দেয়। তাকে অহংকারী করে না তোলো। এ নেয়ামত পেয়ে সে অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ শয়তান তাকে যেন এ কুমন্ত্রণা না দেয়। হজরত আয়েশা (রা.) হজরত মুআবিয়া (রা.) কে লেখেন, ‘অনুগ্রহকারীর প্রতি অনুগ্রহপ্রাপ্ত ব্যক্তির সবচেয়ে ছোট দায়িত্ব হলো প্রাপ্ত নেয়ামতটিকে গোনাহের পথে কাজে না লাগানো। ’
নেয়ামতের শোকর আদায়ের মর্যাদার চেয়ে বিপদে ও সংকটে ধৈর্য ধরার মর্যাদা এবং মুসলিম ব্যক্তির ওপর পতিত নানা দুর্ভোগ ও কষ্টের অবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা করার মর্যাদা বেশি। এ স্তরের লোকদের সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশের জন্য ডাকা হবে। আল্লাহ আমাদের তার কৃতজ্ঞতা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো। আমি তোমাদের স্মরণ করব। আর আমার শোকর আদায় করো। আমার অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো না। ’ -সূরা বাকারা: ১৫২
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের যেসব নেয়ামত দিয়েছেন সেজন্য তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস। ’ –তিরমিজি
আল্লাহতায়ালার প্রতি ঈমান আনা সবচেয়ে বড় কৃতজ্ঞতা। এটাই রিসালাতের শোকর হবে, যা মানুষের জন্য আল্লাহ মুহাম্মাদ (সা.) কে রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। এরপর অন্য সব নেয়ামতের শোকর আদায় করতে হবে। নেয়ামতের সবচেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতা হলো- কোরআন ও সুন্নতের অস্বীকার করা। ইসলামকে অস্বীকার করে অন্য যে কোনো নেয়ামতের শোকর আদায় কোনো কাজে আসবে না।
আল্লাহ কৃতজ্ঞ বান্দাদের নেয়ামত স্থায়ী, বৃদ্ধি ও বরকতময় করার ওয়াদা করেছেন। তিনি বলেন, ‘যদি তোমরা শোকর আদায় করো- আমি তোমাদের আরও বাড়িয়ে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে আমার শাস্তি অতি কঠোর। ’ -সূরা ইবরাহিম: ৭
শোকরগুজার বান্দারা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভে ধন্য হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারীদের অচিরেই প্রতিদান দেবেন। ’ -সূরা আলে ইমরান: ১৪৪
আল্লাহর শোকরকারী বান্দা দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তি ও অমঙ্গল থেকে রক্ষা পায়। কৃতজ্ঞতা নবী-রাসূল ও আল্লাহর মোমিন বান্দাদের আমল। ইসলামের শিক্ষা হলো- সব সময় কৃতজ্ঞতা স্বীকার ও সঠিক পথে অবিচল থাকা।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২২২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৮
এমএইউ/